জাতীয়

ফাঁসির দণ্ড নিয়ে পালিয়ে ছিলেন ২২ বছর

ধারের দুই হাজার টাকা না পেয়ে শিশু সন্তানের সামনেই তার মাকে হত্যা করা হয়। ঘটনার পর পেরিয়ে গেছে দীর্ঘ ২২ বছর। এতো দিন ধরে ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল হত্যাকারী ব্যক্তি আদম খান। এমনকি তাকে মৃত্যুদণ্ডও দিয়েছিলেন হবিগঞ্জের একটি আদালত।

Advertisement

অবশেষে মঙ্গলবার (১৪ ডিসেম্বর) রাতে তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় র‌্যাব। ঢাকার আশুলিয়া থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

এর আগে নিজের পরিচয় গোপন করতে আদম খান জাতীয় পরিচয়পত্র পরিবর্তন করেন। এরপর তিনি অবস্থান করেন আশুলিয়া এলাকায়। সেখানে কখনও রাজমিস্ত্রি আবার কখনও ফল বিক্রি করতেন তিনি।

বুধবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য দেন র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

Advertisement

তিনি বলেন, ১৯৯৯ সালে হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে মাত্র দুই হাজার টাকার জন্য তিন বছরের শিশু সন্তান তাজউদ্দিনের সামনে ছুরি দিয়ে বিধবা মা নুরচান বেগমকে হত্যা করা হয়। এই হত্যাকাণ্ডের ৭-৮ মাস আগে ভিকটিমের স্বামীর মৃত্যু হয়। মায়ের হত্যার ঘটনায় চুনারুঘাট থানায় মামলা করেন নিহতের আরেক ছেলে শফিক। সে সময় এলাকাবাসী হত্যাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করে।

র‌্যাবের মুখপাত্র আরও বলেন, নুরচান বেগমের মৃত্যুতে তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে পিতামাতা হারা হয়ে পরেন। আর্থিক সংকটের কারণে ভিকটিমের নিকটাত্মীয় (ফুপা) এবং এলাকাবাসীর আর্থিক সহায়তায় মামলাটি পরিচালনা করা হয়। মামলার তদন্ত শেষে সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে ২০০২ সালে আদালত আদম খানকে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড দেন।

এরপর থেকে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আদম খান রফিক দীর্ঘ ২২ বছর ধরে পলাতক ছিলেন। র‌্যাব সদরদপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৯ এর একটি দল প্রযুক্তির মাধ্যমে তার অবস্থান শনাক্ত করে। পরবর্তীতে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

যে কারণে হত্যা

Advertisement

র‌্যাব জানিয়েছে, এই হত্যাকাণ্ডের এক বছর আগে অভিযুক্ত আদম খানের কাছ থেকে নিহতের ছেলে শফিক দুই হাজার টাকা ধার নেন। এর পাঁচ মাস পর শফিকের বাবা আব্দুর রহমানের মৃত্যু হয়। এসময় পরিবারটি অভাব-অনটনে পরে। ১৯৯৯ সালের ৩১ মে টাকা চাইতে যান আদম খান। ধারের টাকা না দেওয়ায় পরিবারকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও অপমান করেন। এসময় ভুক্তভোগী তার তিন বছরের ছেলেকে কোলের নিয়ে ঘটনার বিষয়টি জানাতে প্রতিবেশী আছমত উল্লাহর বাড়িতে যান। সেখানেই তর্কবিতর্কের একপর‌্যায়ে ধারালো ছুরি দিয়ে বুকের বাম পাশে আঘাত করা হয় নুরচান বেগমের। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি।

যেভাবে পলাতক ছিলেন আদম

এই হত্যাকাণ্ডের পর তাৎক্ষণিকভাবে গ্রাম থেকে পালিয়ে সিলেট শহরে সপ্তাহখানেক অবস্থান করেন আদম। এরপর গ্রেফতার এড়াতে ঢাকার আশুলিয়ায় চলে আসেন। ২০১২ সালের মার্চ মাসে আদম খান মিথ্যা তথ্য দিয়ে ভুয়া জন্মসনদ তৈরি করেন। সেই সনদপত্রের মাধ্যমে একটি এনআইডি’র জন্য আবেদন করেন। সেখানে স্থায়ী ঠিকানা দেওয়া হয় হবিগঞ্জের মাদকপুরে। চেহারা পরিবর্তন করার জন্য ছদ্মবেশ ধারণ করে এবং তার আসল নাম আদম খানের পরিবর্তে নিজেকে রফিক নামেই আশুলিয়ায় পরিচয় দেন।

পরবর্তীতে জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে একটি এনআইডি ও স্মার্ট এনআইডি কার্ড তৈরি করেন। এরপর ধীরে ধীরে আশুলিয়ায় স্থায়ী নিবাস গড়ে তোলেন এবং ছদ্মবেশে রাজমিস্ত্রির কাজ শুরু করেন। গ্রেফতার হওয়ার আগ পর্যন্ত দীর্ঘ ২২ বছর নিজের গ্রামের বাড়ি যাননি তিনি।

টিটি/জেডএইচ/এমএস