প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে কটূক্তির জন্য বিএনপি নেতা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের ক্ষমা প্রার্থনা বাংলাদেশের রাজনীতিতে ছোটোর মধ্যেও একটি বড় ঘটনা। ক্ষমা চাওয়ার আগে তিনি বক্তব্য প্রত্যাহারসহ ভুলও স্বীকার করেছেন। মঙ্গলবার সকালে ক্ষমা চেয়ে গণমাধ্যমে একটি বিজ্ঞপ্তি পাঠান বিএনপির এই নেতা। নিজের অসুস্থতা ও অবস্থান ব্যাখ্যা করে আলাল বলেছেন- ‘আমি প্রিয় স্বদেশ থেকে হাজার মাইল দূরে জীবন সংকটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছি। তারপরও বিলম্বে আমি জেনেছি, অতীতে আমার একটি বক্তব্য বেশ বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। দীর্ঘ ৪৯ বছরের রাজনৈতিক জীবনে জ্ঞাতসারে কিংবা ইচ্ছাকৃত কারো সম্মান, অনুভূতি, বিশ্বাসে আঘাত করিনি। তবুও মানুষ হিসেবে আমি তো ভুলের ঊর্ধ্বে নই’।
Advertisement
নানা বিশ্লেষণ হতে পারে আলালের এই ক্ষমা প্রার্থনা, ব্যাখ্যা ও অজুহাত নিয়ে। তিনি ক্ষমা পেতে পারেন, নাও পারেন। কিন্তু, বাংলাদেশে একটি দৃষ্টান্ত যে তৈরি হয়েছে তা স্বীকার করই হয়। অন্তত ভুল স্বীকার ও ক্ষমা প্রার্থনার দৃষ্টান্ত তো তৈরি হলো। মুরাদকাণ্ডের মধ্যে ঘটনাটি আলালের ক্ষমাপ্রার্থনার ঘটনার একটা ভিন্ন তাৎপর্যও রয়েছে।
কথার নামে বাংলাদেশে কুকথা, অন্যের চরিত্র হননের একটি নোংরা প্রতিযোগিতা অনেকদিনের। বেশি কথা হলে আকথাও চলে আসে। রাজনীতিকেরা সভা-সমাবেশ, ব্রিফিং, এমন কি সংসদ সবখানেই এই চর্চা করছেন। যে বা যিনি একর্মে পটু দলে বা সরকারে তার অবস্থানও ততো পোক্ত। কে কতো গালমন্দ, বিষোদগার, ব্যক্তিগত কুৎসার নোংরা প্রকাশ ঘটাতে পারেন তা গুনবাচক হয়ে পদ-পদবি, পদোন্নতি নিশ্চিত করছে। শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামসহ কিছু নাম সবার চোখে ভাসে। হালে তাদেরকে ছাড়িয়ে যাওয়া নেতা-আতিপাতি অনেক।
এই কদাকার স্রোতে মিশছেন কোনো কোনো ভদ্রজনও। সজ্জন-মিতভাষী সুনামধারী হিসেবে পরিচিত কেউ কেউও টিপ্পনি দিতে গিয়ে নোংরা ভাষার রেস দেয়া শুরু করেছেন। আলাল-দুলাল-মুরাদে তফাৎ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। একেকজন কতো নিচে নামতে পারেন, কতো নোংরা কাজে অভ্যস্ত সদ্য পদত্যাগী প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদের উছিলায় নতুন করে কারো কারো জানা হয়েছে মাত্র। অপকর্ম ঢাকার দাওয়াইও আছে এই মহারথীদের।
Advertisement
ক্ষেত্রবিশেষে রাজনীতিবিদ এবং কৌতুক অভিনেতাদের পার্থক্য কমে গেছে। জঘন্য-জঘন্য কুকর্মকেও ‘ব্যক্তিগত’ বলে ধামাচাপা দেয়ার এন্তার সুযোগ তাদের। তাহলে গোলমাল বাঁধে কেন? প্রশ্ন এখানেই। ভাগের বা যোগের অমিলেই গোলমাল। কারোটা ধামাচাপা থাকে। কারোটা ফাঁস হয়ে যায়। এতোসব গুণের সুবাদেই তারা নেতা, এমপি, মন্ত্রী, আঁতিপাতি। মুরাদও নানা গুণে ছাত্রনেতা, এমপি, প্রতিমন্ত্রী হতে হতে সুপারম্যান পর্যায়ে চলে গেছেন! মানুষ কি হয়েছেন?
নতুন তো কেউ রাজনীতিতে আসছে না৷ যারা আসছে তারা পুরনো রাজনীতিবিদদের পরিবারের দুলাল হয়েই আসছেন। পদ-পদবি নিচ্ছেন। ব্যতিক্রম খুব কম। খিস্তিখেউর ও নোংরামিতে বেশিরভাগই ছাড়িয়ে যাচ্ছেন বাপ-ভাইকে। অহরহ রাজনীতির মানুষেরা প্রকাশ্যেও যেসব কথা বলেন এগুলো পরিবারের সদস্যদের নিয়ে শোনাটাও বিপদ হয়ে গেছে। এর মাঝেও একজন আলালের ভুল স্বীকার আমাদের রাজনীতির জন্য একটি ঘটনা। একে মন্দের মধ্যে ভালো হিসেবে নেয়া যায়। ব্যক্তিগত গালাগাল, আক্রোশ, চরিত্র হননে একটু-আধটু লাগাম টানা দরকার কি-না, সেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে রাজনীতিকদেরই।
লেখক : সাংবাদিক-কলামিস্ট; বার্তা সম্পাদক, বাংলাভিশন, ঢাকা।
এইচআর/এমএস
Advertisement