বিজয়ের ৫০ বছরেও অসম্পূর্ণ সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ। স্থপতি সৈয়দ মঈনুল হোসেনের নকশা অনুযায়ী এখনও বাকি আছে কয়েকটি কাজ। দীর্ঘদিনেও নকশাটির পূর্ণতা না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও জনসাধারণ।
Advertisement
জানা যায়, আদি নকশায় সৌধ এলাকায় একটি অগ্নিশিখা, দুটি ম্যুরাল, একটি জাদুঘর, একটি গ্রন্থাগার, একটি ফ্লাওয়ার শপ এবং অডিও ভিজুয়াল কেন্দ্র স্থাপনের কথা ছিল। যদিও কয়েক বছর আগে শুধু জাদুঘরের ভবনটি নির্মাণ করা হলেও ভেতরে নেই কোনো কার্যক্রম। শুরু থেকেই তালা ঝুলে আছে ফটকগুলোতে।
এখন স্মৃতিসৌধে আছে কেবল সাতটি স্তম্ভ, ১০টি গণকবর, লেক, উন্মুক্ত মঞ্চ, ভিআইপি লাউঞ্জ, মসজিদ, শহীদ বেদীসহ কয়েকশ প্রজাতির গাছপালা। যা দেখভালের দায়িত্বপালন করছে গণপূর্ত বিভাগ।
স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে নির্মিত জাদুঘর ভবন
Advertisement
নকশার অপূর্ণতার বিষয়টি স্বীকার করলেও তা নিয়ে কথা বলতে নারাজ গণপূর্ত বিভাগের কর্তারা। তবে গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানান, স্মৃতিসৌধে পূর্ণতা আনতে চিঠি চালাচালি হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরেই। তবে আশানুরূপ কোনো ফল আসছে না। এরপরও তাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা বজলুর রশিদ। তার মতে, এমন একটি আবেগের জায়গা দীর্ঘ ৫০ বছরেও সম্পূর্ণ না হওয়া দুঃখজনক। শুধু ১৬ ডিসেম্বর আর ২৬ মার্চ এলেই বিষয়টি সামনে আসে। বাকি দিনগুলোতে কেউ বিষয়টিতে গুরুত্ব দেয় না। মৃত্যুর আগে জাতীয় স্মৃতিসৌধের পূর্ণাঙ্গ রূপ দেখে যেতে চান এই বীর মুক্তিযোদ্ধা।
শুধু বীর মুক্তিযোদ্ধাই নয়, সাধারণ মানুষেরও রয়েছে আক্ষেপ। জাগো নিউজের সঙ্গে কথা হয় রিপন মিয়া নামের এক শিক্ষকের।
তিনি জানান, সৌধটিতে শিক্ষণীয় কোনো কিছু না থাকায় অনেকেই এটিকে পার্ক মনে করে সময় কাটাতে আসেন। যদি জাদুঘর আর লাইব্রেরি থাকতো তাহলে মানুষ ও আগামী প্রজম্ম মুক্তিযুদ্ধ আর ৭১'এর সঠিক ইতিহাস জানতে পারতো। এত বছরেও এটা না হওয়াটা দুঃখজনক।
Advertisement
তালাবদ্ধ জাদুঘর
গণপূর্ত বিভাগের তথ্য বলছে, চার ধাপে নির্মাণ করা হয় সৌধের কাজ। প্রথম ধাপে ১৯৭২ সালেই ২৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ভূমি সংগ্রহ ও প্রকল্পের সড়ক নির্মাণ করা হয়।
দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৯৭৪-১৯৮২ সালের মধ্যে তিন কোটি ৭৭ লাখ টাকায় গণকবর, হেলিপ্যাড, পার্কিংয়ের জায়গাসহ বেশ কয়েকটি নির্মাণকাজ করা হয়।
তৃতীয় ধাপের কাজ সম্পন্ন হয় ১৯৮২ সালের বিজয় দিবসের আগে। এ ধাপে প্রায় সাড়ে আট কোটি টাকায় স্মৃতিসৌধের সাতটি স্তম্ভ, কৃত্রিম লেক, পাশের সবুজ অঙ্গন, হাউজিং ব্যবস্থা ও ক্যাফেটেরিয়া নির্মাণ হয়।
সবশেষ কাজ হয় ২০১২ সালে। সেসময় তৈরি করা হয় পুলিশ ব্যারাক আর জাদুঘর। যদিও তালাবদ্ধ জাদুঘরটি শোভা পাচ্ছে সৌধ এলাকায়। এরপর ধোয়ামোছা ও সংস্কার ছাড়া স্মৃতিসৌধ নির্মাণে আর কোনো কাজ হয়নি।
এফএ/এমএস