শোবিজের একঝাঁক শিল্পী দেশ ছেড়ে বিদেশে স্থায়ী হয়েছেন। তাদের কেউ কেউ শীতের পাখি হয়ে দেশে ফেরেন, কিছুদিন বেড়ান-ঘুরেন সুযোগ হলে কাজও করেন। এ তালিকায় আছেন অভিনয়শিল্পী, সংগীতশিল্পী, নৃত্যশিল্পীসহ শোবিজের নানা অঙ্গনের মানুষ।
Advertisement
এবার এ তালিকায় নাম লেখাতে চলছেন ঢালিউডের জনপ্রিয় নায়ক শাকিব খান। নানা গুজব-গুঞ্জনের সূত্রে গেছে গত বছরের ১২ জানুয়ারি ‘আমেরিকায় স্থায়ী হচ্ছেন শাকিব খান’ শিরোনামে খবর প্রকাশ করে জাগো নিউজ, যা বেশ হইচই ফেলে দেয় ঢালিউডে।
তখন নিজের বক্তব্যে সেই গুঞ্জনকে হেসে ‘ভুয়া’ ও ‘মনগড়া সংবাদ’ বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন শাকিব খান। প্রকাশ করেছিলেন ক্ষোভও। সেটা মূলত ছিল গোপনে তার আমেরিকায় স্থায়ী হওয়ার চেষ্টা ফাঁস হওয়ার জন্যই।
যার প্রমাণ মিলেছে সাম্প্রতিক সময়ে শাকিবের আমেরিকা সফর ও সেখানে টানা ছয় মাস থাকার খবর প্রকাশের মধ্য দিয়ে।
Advertisement
জাগো নিউজের সেই খবরে বলা হয়েছিল, ‘বেশকিছু সূত্র জানিয়েছে, অভিনয়শিল্পী হিসেবে ইবি ক্যাটাগরির ভিসার জন্য আবেদন করেছেন শাকিব খান। তার সেই আবেদন গত ডিসেম্বরে গৃহীত হয়েছে।
একটি দক্ষ এজেন্সির মাধ্যমে শাকিব খান আবেদনটি করেছেন। যেখানে তার সবকিছু দেখাশোনা করছেন আমেরিকাপ্রবাসী নেপালি এক উকিল। শাকিবের আবেদন সবুজ সংকেত পাওয়ায় এই উকিল প্রত্যাশা করছেন শিগগির তার মক্কেলের হাতে আমেরিকার গ্রিন কার্ড পৌঁছে দিতে পারবেন।’
এদিকে আজ ১৪ ডিসেম্বর বেশকিছু গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়া খবর সূত্রে জানা গেল, সম্প্রতি একটি অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণপত্র নিয়ে আমেরিকায় গেছেন শাকিব। কথা ছিল ডিসেম্বরেই ফিরবেন। কিন্তু সহসাই ফেরা হচ্ছে না তার।
প্রকাশ হওয়া খবরে শাকিব খানের ‘গুলুই’ সিনেমার প্রযোজক খোরশেদ আলম খসরুর ভাষ্য, ‘শাকিব আমেরিকায় স্থায়ী বসবাসের জন্য আবেদন করেছেন। যে কারণে তাকে ছয় মাস সেখানে থাকতে হবে। ইতোমধ্যে এক মাস হয়েছে। যদি সব ঠিকঠাক থাকে তাও মিনিমাম আরও চার মাস তাকে সেখানে থাকতে হবে।’ এর আগেও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সিনেমার শুটিংয়ের জন্য আমেরিকার ভিসা চেয়েছিলেন শাকিব খান। কিন্তু বারবার ভিসার সেই আবেদন নামঞ্জুর হয়েছে। অবশেষে তিনি আমেরিকায় গিয়েই সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করার জন্য গ্রিন কার্ডের জন্য আবেদন করেছেন।
Advertisement
এদিকে আমেরিকায় স্থায়ী হওয়ার কথা ভাবছেন শাকিব এ খবর সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিকে বেশ ধাক্কা দিয়েছে। হঠাৎ কেন এমন সিদ্ধান্ত নিলেন জনপ্রিয় এ নায়ক? তবে কী তিনি নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে অনিরাপত্তায় ভুগছেন?
দীর্ঘদিন ধরে একক রাজত্ব কায়েম করে ঢালিউড মাতিয়ে চলছেন তিনি। বছরে তার ছবিই কিছুটা ব্যবসা করতে পারছে এ মন্দার বাজারে। তবে বছর বছর কমছে হল, বাড়ছে সিনেমা নিয়ে অস্থিরতা। সেই সব বিষয় হয়তো হতাশ করছে শাকিবকে।
বয়সও বাড়ছে, শারীরিকভাবেও প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন তিনি। একটা সময় তো থামতে হবেই। সেই সব দিক বিবেচনা করে নিজের জনপ্রিয় ইমেজটা ধরে রেখে আড়ালে চলে যেতে চান তিনি। স্থায়ী হতে চাইছেন বিদেশে।
অনেকে আবার দাবি করছেন, আমেরিকায় শুটিং করার যে জটিলতা তা কাটাতেই দেশটির স্থায়ী নাগরিকত্ব চাইছেন তিনি। এর আগে বেশ কয়েকবার শুটিংয়ের জন্য আবেদন করেও ভিসা পাননি। হয়তো সেজন্যই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। তাছাড়া আমেরিকায় থাকা এক পরিচালকের সঙ্গে এরই মধ্যে কয়েকটি সিনেমার ঘোষণাও দিয়েছেন শাকিব। যেগুলোতে অভিনয়ের পাশাপাশি প্রযোজনা করবেন তিনি।
প্রসঙ্গত, একটা সময় ছিল যখন বাংলাদেশিদের মধ্যে যারা আমেরিকায় স্থায়ীভাবে বসবাসের আবেদন করতে চাইতেন, তাদের মাথায় প্রথমই আসতো রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা। গ্রিন কার্ড পেতে এ পদ্ধতিকেই তারা প্রধান উপায় বলে মনে করতেন। কিন্তু কয়েক বছর ধরে আমেরিকা সহজ একটি সুযোগ দিয়েছে দেশটিতে স্থায়ীভাবে বসবাসের আবেদনের জন্য।
সেই সুযোগটির নাম ইবি ক্যাটাগরির ভিসা। এর মাধ্যমে যারা মেধাবী এবং দক্ষ পেশাজীবীরা আমেরিকায় স্থায়ী হওয়ার আবেদন করতে পারেন। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আবেদনকারীর গুণাবলি ও দক্ষতা কাজে লাগালে আমেরিকা উপকৃত হবে এমনটি মনে হলে তাকে গ্রিন কার্ড দেয়া হবে।
শিক্ষক, চিকিৎসক, শিল্পী, সাহিত্যিক, ব্যবসায়ীসহ নানা ধরনের পেশাজীবীর মধ্যে যাদের নিজস্ব গবেষণাপত্র আছে কিংবা বিশেষ সম্মানসূচক পদক বা সম্মাননাপত্র পেয়েছেন তারা এ সুযোগ নিতে পারেন। এরই মধ্যে বাংলাদেশের অনেকেই এ কোটার ভিসা নিয়ে গ্রিন কার্ড পেয়েছেন।
এলএ/এএসএম