জাতীয়

৩ মাসে আমিরাত গেছেন পৌনে ২ লাখ কর্মী: নমুনা পরীক্ষায় হিমশিম

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সংযুক্ত আরব আমিরাতগামী (ইউএই) যাত্রীদের করোনা নমুনা পরীক্ষা করতে হিমশিম খাচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগ। বিমানবন্দরে কর্মরত একাধিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি জানা গেছে।

Advertisement

তথ্য বলছে, আমিরাত সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী গত ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ইউএইগামী সব যাত্রীকে ফ্লাইট ছাড়ার ছয় ঘণ্টা আগে আরটিপিসিআর ল্যাবরেটরিতে করোনার নমুনা পরীক্ষা করিয়ে নেগেটিভ সনদ নিয়ে যাত্রা করতে হচ্ছে। যাত্রীদের সুবিধার্থে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদনপ্রাপ্ত বেসরকারি ছয়টি প্রতিষ্ঠান শাহজালালের অভ্যন্তরে আরটি-পিসিআর ল্যাবরেটরি স্থাপন ও আমিরাতগামী যাত্রীদের করোনার নমুনা পরীক্ষা শুরু করে। তবে যাত্রীদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করা থেকে শুরু করে করোনার নমুনা সংগ্রহ করে থাকেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা। আর এই কাজগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় জনবল সংকটের কারণেই মূলত এই সমস্যা হচ্ছে।

এদিকে, গত ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত শাহজালালে স্থাপিত আরটিপিসিআর ল্যাবে সর্বমোট ১ লাখ ৬৯ হাজার ৬৭৫ জন যাত্রীর নমুনা পরীক্ষা করা হয়। তাদের মধ্যে ৮২ জনের করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ২ হাজার ৬৮ জনের নমুনা পরীক্ষায় একজনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কর্মরত স্বাস্থ্য বিভাগের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, জনবল সংকটের কারণে দুবাইগামী যাত্রীদের করোনা শনাক্তে সঠিক সময়ে নমুনা সংগ্রহ, আরটি-পিসিআর ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা ও ফলাফল নির্ণয়ে মারাত্মক সমস্যা হচ্ছে। তারা জানান, শুরুর দিকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর টার্মিনালের ভেতর স্থাপিত আরটি-পিসিআর ল্যাবরেটরির অদূরেই করোনার নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করা হতো। কিন্তু বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে ফ্লাইটের ৭/৮ ঘণ্টা আগে থেকে এক সঙ্গে শতশত যাত্রীর ভিড় হওয়ায় সেখানে এক ধরনের বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা বৈঠক করেন।

Advertisement

বৈঠকে শাহজালাল বিমানবন্দরের দোতলায় শেড তৈরি করে দুবাইগামী যাত্রীদের করোনা শনাক্ত করতে নমুনা সংগ্রহ কেন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। বর্তমানে সেখানেই দুবাইগামী যাত্রীদের নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। নমুনা পরীক্ষার ফল নেগেটিভ আসার পর যাত্রীদের বিমানবন্দরের ভেতরে প্রবেশ করানো হচ্ছে। এতে করে বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে বিশৃঙ্খলা কমলেও নমুনা সংগ্রহ কেন্দ্রটি বাইরে স্থাপিত হওয়ায় সীমিত জনবল দিয়ে সময়মতো নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করতে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কর্মরত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ডা. শাহরিয়ার সাজ্জাদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, বর্তমানে বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য বিভাগের ৪০ জনের বেশি চিকিৎসকসহ মোট (নার্স ও টেকনিশিয়ানসহ সহযোগী) জনবল রয়েছে ১৩৫ জন। এ মুহূর্তে আরও কমপক্ষে ৩৫ থেকে ৪০ জন নার্স, টেকনিশিয়ান ও এমএলএসএসসহ সহযোগী স্টাফ প্রয়োজনে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।

উল্লেখ্য, দুবাইগামী যাত্রীদের অধিকাংশই প্রবাসী কর্মী। তাদেরকে যাত্রার ৪৮ ঘণ্টা আগে একবার বাইরের যেকোনো অনুমোদনপ্রাপ্ত ল্যাব থেকে করোনা টেস্ট করতে হচ্ছে। আবার যাত্রার ৬ ঘণ্টা আগে বিমানবন্দরে এসে দ্বিতীয় দফায় করোনা পরীক্ষা করাতে হচ্ছে। প্রবাসী কর্মীদের কথা বিবেচনা করে এই টেস্টের ১ হাজার ৬০০ টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়।

এমইউ/এমআরআর/জিকেএস

Advertisement