রিউম্যাটিক ফিভার বা বাতজ্বর একটি প্রদাহজনিত রোগ। যদিও অনেকেই বাতজ্বর ও বাতকে মিলিয়ে ফেলেন। বাত হলো জয়েন্ট বা গিরার সমস্যা। এক্ষেত্রে জয়েন্টে ফুলে যায় ও ব্যথা হয়।
Advertisement
আর বাতজ্বর হলো রিউমেটিক ফিবার। এখানে জয়েন্টের চেয়ে হার্ট বেশি যুক্ত হয়। এটি স্ট্রেপটোকক্কাস ব্যাকটেরিয়ার কারণে ঘটে। সাধারণত ৫-১৫ বছর বয়সীদের মধ্যে রোগটি বেশি দেখা যায়।
বাত রোগের কিছু লক্ষণের সঙ্গে এর মিল আছে বলে নাম বাতজ্বর। বাতজ্বরজনিত হৃদরোগ বেশ জটিল একটি রোগ। এক্ষেত্রে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অতিসংবেদনশীলতার কারণে গলা ব্যথা হতে পারে।
এ বিষয়ে এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ডিওলজি ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপক ও ক্লিনিক্যাল কার্ডিওলজি ডিভিশনের প্রধান ডা. হারিসুল হক বলেন, ‘অনেক সময় টনসিলে প্রদাহ বেড়ে যায়। আবার রোগী দাঁত উঠালেও গলায় সংক্রমণ হতে পারে।’
Advertisement
‘এর কয়েকদিন পর আবার হার্টের ভাল্ভের মধ্যে প্রদাহ দেখা দেয়। শুধু হার্টের ভাল্ভে নয়, শরীরের অন্যান্য জায়গায়, জয়েন্ট, মস্তিষ্কে সমস্যা হয়। এসব মিলিয়ে যেই রোগটি, এটি হলো বাত জ্বর বা রিউমেটিক ফিবার। তবে এটি রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস থেকে আলাদা।’
এ চিকিৎসক আরও বলেন, ‘বাতজ্বরে হৃদযন্ত্র আক্রান্ত হওয়ার পরও বেশিরভাগ রোগী চিকিৎসার পর সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যায়। তবে স্বল্পসংখ্যক রোগীর হৃদযন্ত্রের ভাল্ভের স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে।’
‘আর যারা প্রায়ই যারা বাতজ্বরে ভোগেন, তাদের ভাল্ভের রোগ হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। ফলে রোগীর শ্বাসকষ্ট, বুক ধড়ফড় ও কাশি হতে পারে। পানি জমার কারণে পায়ের পাতা ফুলে যেতে পারে। রোগী অল্পতেই হাঁপিয়ে ওঠে, কর্মক্ষমতা কমে যায়, এমনকি অকালে মৃত্যুও হতে পারে।’
জেনে নিন বাতজ্বরের লক্ষণসমূহ-
Advertisement
>> প্রায়ই জ্বর হওয়া। জ্বর কমানো বেশি ডোজের ওষুধ দিতে হয় রোগীকে।
>> গলায় ও হাতে-পায়ে র্যাশ হতে পারে।
>> হাঁটু, কনুই ইত্যাদি স্থানে গোটার মতো হয়, যা ব্যথামুক্ত।
>> কারো কারো গলার ভেতর ব্যথা করে।
>> হাত-পায়ের আঙুলের জয়েন্টগুলো ফুলে ওঠে ও ব্যথা করে।
>> বুকের বাম পাশে ও স্তনের নিচে ব্যথা হতে পারে।
>> জিহ্বা ও শরীরে কালো কালো দাগ দেখা দিতে পারে।
এ ছাড়াও হৃৎপিণ্ড প্রদাহ, বুকে ব্যথা, বুক ধড়ফড় করা, অস্থির লাগা। সাধারণত শরীরের বড় অস্থিসন্ধি যেমন-গোড়ালি, কবজি, চোয়াল, কনুই ইত্যাদি স্থানে ব্যথা হয়, ফুলে যায় ও লালচে হয়। এই ব্যথা সব সময় একই অস্থিসন্ধিতে থাকে না। একেকবার একেক স্থানে ব্যথা হয়। সকালে হাঁটুতে তো রাতে ব্যথা হয় কনুইতে।
তবে সবার ক্ষেত্রেই যে এসব লক্ষণ পাবে, তা কিন্তু নয়। অনেকের শরীরেই এসব লক্ষণ তীব্রভাবে প্রকাশ পায় না। বয়স বাড়তেই ভাল্ভের সমস্যা দেখা দেয়। বাতজ্বর থেকে হার্টের ভাল্ভের সমস্যাই বেশি হয়।
ডা. হারিসুল হক বলেন, ‘ভাল্ভের সমস্যাগুলো যখন ধীরে ধীরে হতে থাকে, আস্তে আস্তে ভাল্ভ সংকুচিত হয়ে যায়, আবার অনেক সময় ভাল্ভ ঠিকমতো বন্ধও হয় না।’
‘তকবে এটা সাধারণত বয়স হলেই হয়। তখন দেখা যায় রোগী হাঁটতে কিংবা পরিশ্রমের কোনো কাজ করতে পারছেন না। এক্ষেত্রে দিনদিন রোগীর হাঁপানোর মাত্রা বাড়তে থাকে। যা বাতজ্বরজনিত হৃদরোগের অন্যতম লক্ষণ। তাই বাতজ্বরের রোগীদের অবশ্যই হার্টের প্রতি যত্নশীল হতে হবে ও নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।’
জেএমএস/জিকেএস