রংপুরে মেরামতের জন্য পর্যাপ্ত টাকা বরাদ্দ না পাওয়ায় অবশেষে দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ৭০ লাখ টাকা মূল্যের একটি জিপ গাড়ির নিলাম কার্যক্রম শুরু হয়েছে। অব্যবহৃত ৩৩টি মোটরসাইকেল এবং ১টি জরাজীর্ণ জিপের সঙ্গে দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ৭০ লাখ টাকা মূল্যের এ জিপটি নিলাম করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বিআরটিএকে লিখিতভাবে চিঠি দিয়েছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস।
Advertisement
এদিকে দীর্ঘদিন ধরে গাড়ি না থাকার ফলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাসহ অন্য কর্মকর্তারা পুরাতন গাড়িতে চড়তে বাধ্য হওয়ায় জ্বালানি বাবদ খরচ বৃদ্ধিসহ সময় আপচয় বাড়ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রংপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের জন্য বরাদ্দকৃত মিটসুবিশি জিপ গাড়িটি (রেজিঃ নম্বর-ঢাকা মেট্রো-ঘ ১৫-২১১৫) ২০১৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি কুড়িগ্রামের কাঁঠালবাড়ি এলাকায় দুর্ঘটনার শিকার হয়। এসময় গাড়িতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের তৎকালীন পরিচালকসহ (অর্থ) বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের এক কর্মকর্তা ছিলেন। দুর্ঘটনায় পরিচালকসহ গাড়িতে থাকা তিনজনই কমবেশি আহত হন।
দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ির চালক মো. আলী হোসেন সরকার বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের পরিচালকের নির্দেশে কুড়িগ্রামে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার জন্য নিয়ে যাওয়ার সময় জিপ গাড়িটি দুর্ঘটনার শিকার হয়। জিপ গাড়িটি ২০১৫ সালের মডেল এবং ২০১৬ সালে তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
Advertisement
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের একটি সূত্রে জানা গেছে, সাড়ে ৪ লাখ টাকা খরচ করলে গাড়িটি ব্যবহারের উপযোগী হতো। বিষয়টি উল্লেখ করে একাধিকবার প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরে লিখিতভাবে অবগত করেও কোনো লাভ হয়নি।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ এম শাহজাহান সিদ্দিক বলেন, জিপ গাড়িটি যখন দুর্ঘটনার শিকার হয় তখন তিনি অন্যত্র কর্মরত ছিলেন। তবে তিনি শুনেছেন আগের প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিআরটিএ কর্তৃপক্ষকে দিয়ে গাড়িটির কী কী ক্ষতি হয়েছে এর একটি তালিকা করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরে পাঠিয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, গাড়ি মেরামতের জন্য আমরা খরচ করতে পারি ৫০ হাজার টাকা, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর পারে ৭৫ হাজার টাকা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় পারে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত। তাই জিপ গাড়িটি নতুন হওয়া সত্ত্বেও মেরামতের প্রয়োজনীয় টাকা না পাওয়ায় বাধ্য হয়ে অন্য জরাজীর্ণ ৩৩টি মোটরসাইকেল ও ১টি গাড়ির সঙ্গে ওই জিপটি নিলাম করার জন্য বিআরটিএকে চিঠি দিয়েছি।
তিনি বলেন, পরবর্তীতে বিভিন্ন উপজেলা পরিদর্শনসহ দ্রুত যাতায়াতের সুবিধার্থে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরে গাড়ির জন্য আবেদন করলে তাদেরকে একটি পুরাতন প্রাডো জিপ দেয়া হয়েছে। বর্তমান জিপটি এক লিটার জ্বালানি দিয়ে মাত্র ৪ কিলোমিটার যাওয়ায় আর্থিক অপচয় বৃদ্ধি পেয়েছে।
Advertisement
বিআরটিএ রংপুরের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মো. এরশাদ মিয়া বলেন, কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান গাড়ি নিলাম করার জন্য আবেদন করলে প্রতি গাড়ি পরিদর্শনের জন্য ৪৫০ টাকা এবং শতকরা ১৫ টাকা হারে ভ্যাট নেয়া হয়। প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ পেলে পরিদর্শন করে নিলাম কার্যক্রম শুরু করা হবে।
রংপুর জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আকবর হোসেন বলেন, জনস্বার্থে দুর্ঘটনা কবলিত মূল্যবান জিপটি একটি নির্দিষ্ট কমিটির মাধ্যমে সরকার মেরামতের উদ্যোগ নিতে পারে। এতে আর্থিক অপচয় রোধ হবে। পাশাপাশি নিলামের নামে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের মূল্যবান সম্পদ বেহাত হওয়া থেকে রক্ষা পাবে।
এফএ/জেআইএম