দেশজুড়ে

মাস্ক পকেটে রেখে সৈকতের সৌন্দর্য উপভোগ

করোনার প্রাদুর্ভাব কম থাকায় সপ্তাহিক ছুটির দিন ছাড়াও প্রায় প্রতিদিন কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতসহ পর্যটনস্পটগুলোতে পর্যটকের পদচারণা বাড়ছে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে চরম উদাসীন পর্যটকরা। অনেকেই মানছেন না সরকারের বেঁধে দেওয়া বিধি-নিষেধ। বেশিরভাগ পর্যটকই মাস্ক ছাড়া সৈকতে ঘোরাঘুরি করছেন। আবার অনেকে মাস্ক খুলে রেখে গোসলে নামছেন।

Advertisement

করোনা সংক্রমণরোধে দীর্ঘ সাড়ে চার মাস বন্ধ ছিল কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতসহ অন্যান্য বিনোদনকেন্দ্র। গত ১৯ আগস্ট পর্যটনকেন্দ্র খুলে দেওয়ার পর থেকে ধীরে ধীরে সৈকতে মানুষের ভিড় বাড়ছে। দীর্ঘসময় ঘরে বন্দি এবং শহরের যান্ত্রিক জীবন থেকে মুক্তি পেতে কক্সবাজার ভ্রমণে ছুটে আসছেন পর্যটকরা। যাচ্ছেন সেন্টমার্টিন, হিমছড়ি, ইনানী, মহেশখালীসহ অন্যান্য পর্যটনস্পটে। তবে, যে যার মতো করে সৈকতে ঘোরাফেরা করছেন। শারীরিক দূরত্ব যেমন মানা হচ্ছে না, তেমনি কারো মুখে থাকছে না মাস্ক।

আহমদ সরকার নামের এক পর্যটক বলেন, ‘মাস্ক ছাড়া বালিয়াড়িতে নামতে দেয় না প্রশাসন। তাই ১০ টাকায় দুটি মাস্ক নিয়ে নেমেছি। কিন্তু, সৈকতে অনেকের মুখে মাস্ক না থাকায় আমরাও পকেটে নিয়ে ফেলেছি।’

কুমিল্লার বিশ্বরোড পদুয়ার বাজার এলাকার সরোয়ার হাসান শামীম বলেন, ‘সৈকতে স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা কারো মধ্যেই দেখছি না। লবণাক্ত হাওয়ায় ভাইরাস দুর্বল থাকবে, হয়েতো এ চিন্তায় সবাই নির্লিপ্ত।’

Advertisement

চট্টগ্রামের জিইসি মোড় এলাকার ফেরদৌস জাহান দম্পতি বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর সন্তানদের নিয়ে কক্সবাজার সৈকতে এসেছি। কোথাও বের হলেই মুখে মাস্ক পড়তে পড়তে ক্লান্ত। সৈকতে লবণ হাওয়ায় এসেও যদি মাস্ক পড়তে হয় তাহলে এখানে আসার কী দরকার?’

পর্যটন ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনার কারণে গত বছর পাঁচ মাস বন্ধ ছিল রিসোর্ট। এ বছরও চার মাস বন্ধ। গতবছরের ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার সুযোগ না পেতেই আবার লকডাউনে ক্ষতি পাহাড় সমান। ক্ষতি পোষাতে না পেরে কর্মচারীদের ছাঁটাই করতে হয়েছে। তারা আশা করছেন, এবার সেই ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারবেন। স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে তারা সচেতন আছেন।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) কক্সবাজার শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. মাহবুবুর রহমান বলেন, করোনা একটা মহামারি। সরকারের চেষ্টায় আমরা বিশাল একটা ভোগান্তি এড়াতে পেরেছি। তবে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন সবাইকে ভাবাচ্ছে। এ মুহূর্তে আমাদের সবার উচিত আরও সচেতন হয়ে সব কার্যক্রম পরিচালনা করা। একেবারে লকডাউনের চেয়ে স্বাস্থ্যবিধি মানা বাঞ্ছনীয়।

কক্সবাজার হোটেল-গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাসেম সিকদার জাগো নিউজকে বলেন, ‘সরকারের দেওয়া সব শর্ত মানা হচ্ছে। সৈকতে পর্যটকরা স্বাস্থ্যবিধি মানছেন কি-না সেই দায়িত্ব আমাদের নয়। কক্সবাজারে পর্যটন জোনে যেসব হোটেল-মোটেল রয়েছে সবকটি স্বাস্থ্যবিধি মেনে পর্যটকদের রুম বুকিং দিচ্ছে।’

Advertisement

ট্যুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজার জোনের পুলিশ সুপার জিল্লুর রহমান বলেন, করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে হোটেলে ৫০ শতাংশের বেশি কক্ষ ভাড়া না দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। পর্যটকদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে কক্সবাজারের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার আহ্বান জানান তিনি।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, পর্যটকরাও দেশের নাগরিক। তাই স্বাস্থ্যবিধি সবার মানা প্রয়োজন। সামাজিক দূরত্বের পাশাপাশি স্যানিটাইজার ব্যবহার ও মুখে মাস্ক পরা অবশ্যই দরকার।

তিনি বলেন, সৈকত এলাকায় স্বাস্থ্যবিধি সচেতনতায় নিয়মিত মাইকিং করা হচ্ছে। প্রয়োজনে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিদের্শনা দেওয়া আছে। পর্যটকদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে অনুরোধ জানান তিনি।

সায়ীদ আলমগীর/এসআর/জেআইএম