দেশজুড়ে

গরুর মাথা কাটতে মাত্র ২০ মিনিট সময় নেন অন্ধ নাদিম

২৩ বছর আগে গরু জবাই করতে গিয়ে মাথায় শিঙের গুঁতো লাগে মো. নাদিমের (৪৮)। এর প্রভাবে দৃষ্টিশক্তি হারান তিনি। তবে চোখে না দেখলেও ২৩ বছর ধরে গরুর মাথা কাটার কাজ নিখুঁতভাবে করে যাচ্ছেন নাদিম। গরুর একটি মাথা কাটতে সময় নেন ২০ থেকে ২৫ মিনিট।

Advertisement

চার সন্তানের বাবা নাদিম বসবাস করেন নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের আদমজীর শিমুলপাড়া বিহারী কলোনিতে। তার যমজ দুই মেয়ে আদমজীর উম্মুল ক্বোরা স্কুল থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। তবে আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি তার দুই ছেলে।

নাদিমের একার আয়ে সংসার চলে না। তার স্ত্রী একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে নয়ন ইপিজেডে মালামাল লোড আনলোডের কাজ করেন। ছোট ছেলে মিলন ওয়েল্ডিংয়ের একটি ওয়ার্কশপে কাজ শিখছেন।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২৩ বছর আগে গরু জবাই করতে গিয়ে মাথায় শিঙের গুঁতো লাগে নাদিমের। এতে মাথায় গুরুতর আঘাত পেলে তার চোখে নানারকম সমস্যা দেখা দেয়। পরে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। পরে ভারতের মাদ্রাজে যান। তবে তিনি আর দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবেন না বলে জানান মাদ্রাজের চিকিৎসকরা।

Advertisement

তবে দুই চোখে দেখতে না পেলেও অল্প সময়ে গরুর মাথা বানানোর (মাথা কাটা) কাজ ঠিকই করতে পারেন মো. নাদিম। এতে তার কোনো সমস্যা হয় না।

এমন অসম্ভব কাজ কীভাবে করেন জানতে চাইলে নাদিম বলেন, তিনি অন্ধ হওয়ার প্রায় ১০ বছর আগে থেকেই কসাইয়ের কাজ করতেন। তার দুই চোখ নষ্ট হওয়ার পর তার মামার সাহায্যে আবারও এই কাজ করা শুরু করেন। কারও ওপর নির্ভরশীল না হয়ে তিনি অনুমান করে হেঁটে বাজারে গিয়ে কসাইয়ের কাজ করেন। এতে তার কোনো সমস্যা হয় না।

মামা মাহবুব আলম বলেন, নাদিমের চোখে আলো ফিরিয়ে আনার জন্য তিনি অনেক টাকা খরচ করেছেন। এলাকাবাসীর কাছ থেকে পাওয়া সাহায্য নিয়ে মাদ্রাজে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। তবে নাদিম দৃষ্টিশক্তি ফিরে পায়নি। তারপরও সে নিখুঁতভাবে গরুর মাথা কাটতে পারেন।

কসাই নাদিমের স্ত্রী ইসরাত জাহান বলেন, আমার স্বামী অন্ধ বলে আমার কোনো কষ্ট নেই। তিনি অনেক ভালো মানুষ। আমি যতদিন বেঁচে থাকবো ততদিন এভাবেই তার সেবা করে যাবো।

Advertisement

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রিফাত ফেরদৌস বলেন, নাদিমের বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এসআর/জেআইএম