ভ্রমণ

যে শহরে থাকতে লাগে না ভাড়া

এটিই হয়তো বিশ্বের সবচেয়ে উন্মুক্ত ও স্বাধীন শহর! যেখানে নেই কারও ভয়, রাজত্ব কিংবা দাসত্ব। ঘরহীন, বেকার ও যাযাবর মানুষদের অগ্রাধিকার আছে শহরটিতে। বলছি, ক্যালিফোর্নিয়ার ইম্পেরিয়াল কাউন্টিতে অবস্থিত স্ল্যাব সিটির কথা।

Advertisement

সল্টন সাগরের পূর্বে মেক্সিকান সীমান্তের উত্তরে এই শহরের অবস্থান। মরুভূমি এলাকা হওয়ায় সেখানে গ্রীষ্মে প্রচণ্ড গরম পড়ে। শীতে প্রায় ২০০০ অতিথি পাখি ভিড় জমায় স্ল্যাব সিটিতে।

যদিও এ শহরে নেই তেমন কোনো সুযোগ-সুবিধা। নেই বিদ্যুৎ কিংবা পানির সুব্যবস্থা। এ কারণে বাসিন্দারা সৌর শক্তি ও জেনারেটরের উপর নির্ভর করেন।

শত অভাব থাকলেও সেখানে বসবাসকারী ১৫০ মানুষ খুবই শান্তিতে থাকেন। কারণ তারা স্বাধীনভাবে বসবাস করেন এই শহরে।

Advertisement

মাসে মাসে ঘর ভাড়া দেওয়ার তোড়জোড় নেই তাদের। যা তাদেরকে মানসিকভাবে স্বস্তি দেয়। এ শহরে থাকতে তাই অবসরপ্রাপ্ত, বেকার ও যাযাবর মানুষেরা ভিড় করেন।

পেট্রলের যোগান না থাকায় স্ল্যাব সিটির বাসিন্দারা কাছাকাছি নিল্যান্ড শহরে গাড়ি চালাতে পারে। যেখানকার জনসংখ্যা ১০০০। তাই নিকটস্থ এই শহর থেকেই সব ধরনের সুবিধা গ্রহণ করেন স্ল্যাব সিটির বাসিন্দারা।

এ শহরের নাম কেন স্ল্যাব সিটি? সেখানে গেলে দেখতে পাবেন না বড় বড় দালানকোঠা। শুধুই আছে স্ল্যাব দিয়ে তৈরি ছোট ছোট ঘর। এ শহরের ইতিহাস দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কালের।

১৯৪২ সালে নৌবাহিনী কর্তৃক সোনারান মরুভূমিতে ৬০০ একরের বেশি জমিতে একটি মার্কিন মেরিন কর্পস ঘাঁটি স্থাপন করা হয়।

Advertisement

মিলিটারি মিউজিয়ামের তথ্য অনুসারে, সেখানে তারা প্রায় ৩০টি কাঠামো, ৮.২ মাইল (১৩.১ কিলোমিটার) পাকা রাস্তা ও বিভিন্ন উপযোগিতা তৈরি করা হয়।

যুদ্ধ শেষে প্রতিরক্ষা বিভাগ ১৯৬১ সালে ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যে জমি ফিরিয়ে দেয়। সামরিক ভবনগুলো ভেঙে ফেলা হয়েছিল। তবে কংক্রিটের স্ল্যাবগুলো অবশিষ্ট ছিল।

পরবর্তীতে স্ল্যাব সিটিতে ১৯৬০ সালে কয়েকজন শ্রমিক থাকতে শুরু করেন। তারা সেখানে পাতা কাটার জন্য গিয়েছিলেন। এরপর সেখানে একেক করে মানুষের আনাগোণা বেড়ে যায়।

সুবিধামতো অনেকেই স্ল্যাব দিয়ে থাকার জায়গা গড়ে নেন। একে একে স্ল্যাব সিটিতে বাড়তে শুরু করে যাযাবর থেকে শুরু করে অবসরপ্রাপ্ত, শিল্পী, দার্শনিক থেকে শুরু করে অন্যান্যরা।

আসলে যারা স্বাধীনভাবে বাঁচার ইচ্ছে পোষণ করেন তারাই মূলত স্ল্যাব সিটির বাসিন্দা বনে যান। আর এ কারণে নানা ধরনের অসুবিধা স্বত্ত্বেও বাসিন্দারা সেখানে বসবাস করছেন।

‘দ্য রেঞ্জ’ হলো স্ল্যাব সিটির একটি ভেন্যু। যেটি বিভিন্ন সঙ্গীতশিল্পী ও পারফর্মারদের জন্য স্টেজ হোম। সেখানে ঘুরতে যাওয়া দর্শকরা শনিবার রাতের শো দেখতে পারেন।

সূত্র: কালচার ট্রিপ

জেএমএস/এএসএম