মো. ফয়সাল ইসলাম
Advertisement
সব প্রতিবন্ধকতাকে পুঁজি করে সফলতার দিকে এগিয়ে যাওয়ার ব্যতিক্রম উদাহরণ আবায়া অ্যান্ড গাউনের সত্ত্বাধিকারী মারুফা জাহান। যাকে তার পরিবার ও পারিপার্শ্বিকতা ক্রমাগত নিরুৎসাহিত করে গেছে। এতে তিনি মোটেও হতাশ হননি। বিপরীতে আরও শক্তিশালী করেছেন সংকল্পকে। বরং এটাই ছিল তার পুঁজি।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগে স্নাতক করেছেন মারুফা। স্নাতকোত্তর করেছেন পাবলিক হেলথে। পড়াশোনার বিষয় হিসেবে রোগতত্ত্ব নিয়ে তার গবেষণা করার কথা ছিল। কিন্তু সেদিকে না গিয়ে তিনি নিজেকে আত্মপ্রকাশ করলেন একজন উদ্যোক্তা হিসেবে। শুধু তা-ই নয়, তার প্রতিষ্ঠানে এখন কর্মীসংখ্যা ৫০ জনেরও বেশি।
তিনি ছোটবেলা থেকেই ছিলেন আত্মনির্ভরশীল। স্নাতকোত্তর পড়ার খরচ নিজেই জোগাড় করার সিদ্ধান্ত নেন। সে জন্য প্রথমে শুরু করেন একটি স্কুলে চাকরি। পাশাপাশি টিউশনি। কিন্তু তাতে পড়ার খরচ সম্পূর্ণ জোগাড় সম্ভব নয়। তাই এগুলো বাদ না দিয়ে পাশাপাশি শুরু করেন আবায়া তৈরির কাজ, কোনো বিনিয়োগ ছাড়াই।
Advertisement
মারুফা সিদ্ধান্ত নিলেন ব্যতিক্রম কিছু করার। এভাবে নিজের জন্য প্রথম ডিজাইন করা শুরু করলেন। তারপর এ ডিজাইন করা আবায়া ও হিজাব দেখে অনেকেই আকৃষ্ট হন। এরপর তিনি বিভিন্নজনকে বানিয়ে দিতে শুরু করেন। আস্তে আস্তে শুরু হয় তার কাজের জনপ্রিয়তা। এরপর তিনি অর্ডার নিয়ে বানানো শুরু করেন। প্রতিষ্ঠা করেন ফ্যাক্টরি, গড়ে তোলেন শোরুম।
এভাবে শুরু হয় তার ব্যবসায়িক জীবন। কোনো বিনিয়োগ ছাড়া। তিনি সব সময়ই ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী কাজ করতেন। ক্রেতার যুগোপযোগী চাহিদাকে সব সময় সঠিকভাবে বুঝতে পেরেছেন। সে জন্য তার পণ্যের জনপ্রিয়তা কখনো কমেনি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে। তার ব্যবসার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য হলো, এখন পর্যন্ত তাকে কোনো ব্যাংক ঋণ নিতে হয়নি।
মারুফা সব সময়ই পরিকল্পনা মাফিক কাজ করেন। ব্যবসার সিদ্ধান্ত নিয়েই লাফিয়ে ব্যবসা শুরু করেননি। যেহেতু তিনি ব্যবসায়ের ছাত্রী নন; তাই প্রথমে এটি নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। ব্যবসাসংক্রান্ত বিভিন্ন বই, প্রবন্ধ ইত্যাদি সংগ্রহ করে পড়তে শুরু করেন। এরপর ব্যবসা শুরু করার জন্য ট্রেড লাইসেন্সসহ সরকারি যত রকম অনুমোদন দরকার; সেগুলোর ব্যবস্থা করেন।
তার ব্যবসায়িক জীবন শৃঙ্খলার সঙ্গে ধাপে ধাপে এগোলেও রাস্তাটি অত সহজ ছিল না। তিনি ব্যবসার সিদ্ধান্ত নিলে প্রথমেই বাধা হয় তার পাশের মানুষ। নারী হয়ে এটি তিনি করতে পারবেন না। তার পরিবার জানায়, তারা আত্মীয়-স্বজনকে বলতে পারেন না যে, তিনি এমন একটি ব্যবসা শুরু করেছেন।
Advertisement
এসব কথার বিপরীতে তিনি নিজেকে আরও শক্ত করে দাঁড় করান। এরই মধ্যে তিনি গর্ভধারণ করেন। সেটি তিনি ক্লায়েন্টদের কোনো ভাবেই বুঝতে দেননি। সন্তান জন্মদানের আগের দিন পর্যন্ত কাজ করে গেছেন। এমনকি সন্তানের জন্মের পরদিন থেকে কাজ শুরু করেছেন। তিনি বলেন, ‘চাকরিজীবী নারীরা ছয় মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি নেন। কিন্তু আমার তো ব্যবসা। তাই ছুটি নেব কার কাছ থেকে?’
মারুফা জাগো নিউজকে বলেন, ‘ব্যক্তিগত বিনোদন অনেকটাই ভুলে গিয়েছিলাম। তা বলে আমি মোটেও অসামাজিক নই। ছাত্রজীবনে রেডিওতে গান গাওয়া, ছবি আঁকা, বিতর্কসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলাম।’ প্রতিষ্ঠান নিয়ে তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আছে। তবে খুব দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা তিনি কখনোই করেন না। তিনি বলেন, ‘আমি কখনোই অতিরিক্ত ঝুঁকি নিয়ে কোনো কাজ করি না। পরিস্থিতি বুঝে অল্প সময়ের জন্য একের পর এক সিদ্ধান্ত নিয়ে সামনে এগোতে থাকি।’
আপাতত নতুনদের জন্য কিছু প্রশিক্ষণের আয়োজন করতে চান তিনি। তার মতো অন্যরাও স্বাবলম্বী হয়ে উঠুক—এটাই তার প্রত্যাশা। ব্যবসার জন্য সম্মাননাও পেয়েছেন তিনি। ২০১৯ সালে ক্যারিয়ার সলিউশনের পক্ষ থেকে ‘ওমেন এন্টারপ্রিনিয়র অব দ্য ইয়ার’ নির্বাচিত হন। ২০২০ সালে কানাডিয়ান একটি ব্লগ সাইট থেকে ‘টেন প্রমিজিং এন্টারপ্রিনিয়র’র একজন নির্বাচিত হন।
লেখক: ফ্রিল্যান্স ফিচার রাইটার।
এসইউ/এএসএম