ধর্ম

জুমার দিন দরূদ পড়া যে কারণে বিশেষ ইবাদত

‘জুমার দিনটি তোমাদের দিন সমূহের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ দিন। এই দিনে আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করা হয়েছে, এই দিনে তাঁকে মৃত্যু দেওয়া হয়েছে, এই দিনে শিঙ্গায় ফুঁ দেওয়া হবে এবং মহা বিপর্যয় (কেয়ামত)ও ঘটবে এই দিনেই। তাই এই দিনে তোমরা বেশি বেশি আমার উপর দরুদ পাঠ কর। কেননা জুমার দিনে তোমাদের দরুদ আমার কাছে পেশ হয়’- প্রসিদ্ধ গ্রন্থ সুনানে আবু দাউদে হজরত আউস বিন আউস হাদিসটি বর্ণনা করেছেন।

Advertisement

হাদিসের পরিভাষায় জুমার দিনটি মুসলিম উম্মাহর জন্য মর্যাদার ও ফজিলতপূর্ণ দিন। এ দিন দরূদ পাঠের মর্যাদাও বেশি। কেননা নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে এ দিনে দরূদ পড়ার কথা বলেছেন এবং এদিন তাঁর কাছে উম্মতের দরূদ বিশেষভাবে পেশ করা হয়।

মুসলিম উম্মাহর করণীয়

এ হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী মুসলিম উম্মাহর করণীয় হলো- জুমার দিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর বেশি বেশি দরূদ পাঠ করা। এটি অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ আমল। আর এ কথায় কোনো সন্দেহ নাই যে, সর্বশ্রেষ্ঠ দরূদ তো তা-ই; যা প্রতিনিয়ত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের শেষ বৈঠকে পাঠ করা হয়। যা দরূদে ইবরাহিম নামে পরিচিত। যদিও হাদিসের বর্ণনায় দরূদে ইবরাহিম বলে এটিকে নামকরণ করা হয়নি। তাহলো-

Advertisement

اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ، وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ، إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ، اَللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ، وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ، إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিঁউ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ, কামা সাল্লাইতা আলা ইবরাহিম ওয়া আলা আলি ইবরাহিম। ইন্নাকা হামিদুম মাঝিদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিঁউ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ, কামা বারাকতা আলা ইবরাহিমা ওয়া আলা আলি ইবরাহিম। ইন্নাকা হামিদুম মাঝিদ।’

এ দরূদ প্রসঙ্গে হাদিসের বর্ণনা হলো এমন-

হজরত আব্দুর রহমান ইবনু আবু লাইলা রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, কাব ইবনু উজরা রাদিয়াল্লাহু আনহু আমার সঙ্গে দেখা করে বললেন, আমি কি আপনাকে এমন একটি হাদিয়া (উপহার) দেব না; যা আমি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে শুনেছি?

Advertisement

আমি বললাম, হ্যাঁ, আপনি আমাকে সে হাদিয়া (উপহার) দিন।

তিনি বললেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম- হে আল্লাহর রাসুল! আপনাদের উপর অর্থাৎ আহলে বাইতের উপর কীভাবে দরূদ পাঠ করতে হবে? কেননা, আল্লাহ তো (শুধু) আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন- আমরা কিভাবে আপনার প্রতি সালাম জানাবো!

তিনি (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমরা এভাবে বলো-

اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ، وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ، إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ، اَللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ، وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ، إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিঁউ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ, কামা সাল্লাইতা আলা ইবরাহিম ওয়া আলা আলি ইবরাহিম। ইন্নাকা হামিদুম মাঝিদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিঁউ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ, কামা বারাকতা আলা ইবরাহিমা ওয়া আলা আলি ইবরাহিম। ইন্নাকা হামিদুম মাঝিদ।’

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বংশধরদের উপর রহমত বর্ষণ করুন, যেভাবে আপনি ইবরাহিম আলাইহিস সালাম এবং ইবরাহিম আলাইহিস সালামের বংশধরদের উপর রহমত বর্ষণ করেছেন। নিশ্চয়ই আপনি অতি প্রশংসিত, অত্যন্ত মর্যাদার অধিকারী।

হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বংশধরদের উপর বরকত দান করুন; যেভাবে আপনি বরকত দান করেছেন ইবরাহিম আলাইহিস সালাম এবং ইবরাহিম আলাইহিস সালামের বংশধরদের উপর। নিশ্চয়ই আপনি অতি প্রশংসিত, অতি মর্যাদার অধিকারী।’ (বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি, নাসাঈ, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ মুসনাদে আহমাদ, দারেমি)

এছড়া ছোট বড় দরূদ আছে, যার জন্য যেটি সহজ তিনি জুমার দিনের মর্যাদা ও ফজিলত পাওয়ার জন্য বেশি বেশি পড়বেন। হাদিসের বর্ণনায় ছোট্ট একটি দরূদ এমন-

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই অভিশাপ দিলেন যে, ‘সেই ব্যক্তির নাক ধূলা-ধূসরিত হোক, যার কাছে আমার নাম উচ্চারণ করা হলো, অথচ সে (আমার নাম শুনেও) আমার প্রতি দরূদ পড়ল না।‘ (অর্থাৎ অন্তত আরবিতে সংক্ষেপে ছোট্ট বাক্যে- صَلَّى اللهُ عَلَى مُحَمَّد - সাল্লাল্লাহু আলা মুহাম্মাদ কিংবা صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّم - সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলল না।)’ (তিরমিজি, মুসনাদে আহমাদ)

আবার হাদিসের বর্ণনা অনুসারে জুমার দিন যে সময়গুলোতে দোয়া কবুল হয়; তন্মধ্যে অন্যতম একটি সময় হলো- আসর থেকে মাগরিব পর্যন্ত সময়টি। এ সময়েও বেশি বেশি দরূদ পড়া যেতে পারে।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জুমার দিনের অন্যান্য ফজিলত ও মর্যাদার পাশাপাশি জুমার দিন বেশি বেশি দরূদ পড়ে ফজিলত ও মর্যাদার অধিকারী হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/জিকেএস