দেশজুড়ে

এমন জননেতা এখনো আছেন!

কুড়িগ্রাম পৌরসভায় আলোচিত কাউন্সিলর প্রার্থী রোস্তম আলী তোতা। টানা সাতবারের মতো বিজয়ী হয়ে কুড়িগ্রাম পৌরসভার ইতিহাসে রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন। তিনি দুই হাজার ৩শ` ৪৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সারাফাত হোসেন চৌধুরী বিপ্লব পেয়েছেন ৬শ` ১ ভোট। অপর প্রতিদ্বন্দ্বী মোস্তাফিজার রহমান পাভেল পেয়েছেন ১৩৫ ভোট। প্রতিদ্বন্দ্বী ২ প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েই বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ভোটারের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কুশল বিনিময় শুরু করেছে। মানুষের সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্কই তার প্রধান শক্তি। কুড়িগ্রাম পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে ৬০ জন কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে একমাত্র তোতার পোস্টারে প্রার্থীর ছবি ছিল না। এ নিয়ে মানুষের কৌতুহল ছিল। কিন্তু তোতার সাফ কথা ছবি নয় নাম ও কাজে পরিচয়। ১৯৮১ সাল থেকে টানা সাতবার নির্বাচিত হয়ে ৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে রয়েছেন। তবে এটি তার অষ্টম নির্বাচন। কারণ ৭৯ সালে কাউন্সিলর পদে উপ-নির্বাচনে একবার ভোট করে পরাজিত হন। এই পরাজয় যে শিক্ষা দিয়েছে, তারপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। মানুষের হৃদয়ে বিশেষ জায়গা করে নিতে পেরেছেন। আর তাই প্রতিবারই সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়ে আসছেন। এবারও ব্যতয় ঘটেনি। শিশু সংগঠন মুকুল ফৌজ এর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সামাজিক কাজের সুচনা। এখন শিশু, নারী, পুরুষ, বৃদ্ধ সবার সঙ্গে হৃদতার সম্পর্ক। ৬১ বছর বয়সী তোতা প্রথম পরাজয়ের পর বুঝতে পারেন মানুষের ভালবাসা অর্জন ছাড়া জন প্রতিনিধি হওয়া সম্ভব নয়। আর তাই মানুষের আস্থা ও ভালবাসা অর্জনে নিবেদিত প্রাণ হিসেবে কাজ শুরু করেন। আর এ কাজেই তার সফলতা আসে ১৯৮১ সালে। বিপুল ভোটে বিজয় অর্জন করেন। স্ত্রী, ২ মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে তার সংসার। বড় মেয়ের বিয়ে হয়েছে। অপর দুই সন্তান অনার্স পড়ুয়া। কুড়িগ্রাম শহরের মিস্ত্রী পাড়ায় ১২ শতক জমিতে টিনশেড বাড়ি। তার আয়ের মূল উৎস দোকান ও বাড়ি ভাড়া। ছোটখাটো ব্যবসাও করেন মাঝে মধ্যে। বাড়ি ও দোকান ভাড়া বাবদ মাসিক আয় ১২ হাজার টাকা ছাড়াও কাউন্সিলর হিসেবে সন্মানী বাবদ পান পাঁচ হাজার টাকা। এই টাকা দিয়ে কোনোমতে দিন চলে যায় তার। এছাড়াও মজুদদারী মৌসুমী ব্যবসা করেন তিনি। তার বিরুদ্ধে ভোটে দাঁড়ালে জয়লাভতো দূরের কথা জামানত বাঁচানো নিয়ে শঙ্কায় থাকেন প্রতিপক্ষরা। এখন পর্যন্ত সাতটি নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে টানা জয় পেয়েছেন। কোনোবারই প্রতিপক্ষের কারো জামানত বাঁচেনি। অতীতের মতো এবারেও তার কোনো নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল না। সৎভাবে জীবন-যাপন করার কারণে মানুষ তাকে এতো ভালবাসেন বলে জানান তিনি। তিনি জাগো নিউজকে জানান, যতদিন শরীর ভালো থাকবে, জ্ঞান থাকবে, ততদিন মানুষের পাশে থাকবো।  এই ওয়ার্ডের প্রফেসর সালাউদ্দিন, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মাহফুজার রহমান, আক্তারুল ইসলাম বাদল, রং ব্যবসায়ী মুরাদ হোসেন, মাসুদ হোসেন, সাংবাদিক রাজু মোস্তাফিজ জানান, ভোটাররা তাদের যেকোনো সমস্যায় রোস্তম আলীকে কাছে পান। এমনকি পৌরসভায় কোনো কাগজ আনতে গেলে নিজের হাতে ফরম পূরণ করে বাড়ি পৌঁছে দেন সেই কাগজ। সবার সুখে-দুখে পাশে থাকেন। সকাল কিংবা গভীর রাতে ডাকলেই তাকে কাছে পাওয়া যায়। সবুজপাড়ার গৃহবধূ সাহিদা, বৈষ্যপাড়ার স্বপ্না বেগম জাগো নিউজকে জানান, শিশুদের টীকাদান, জন্মনিবন্ধন, পুষ্টিভাতাসহ সব কাজই সুষ্ঠুভাবে করে দেন রোস্তম আলী। তার বিরুদ্ধে কোনোদিন কোনো দুর্নীতির অভিযোগ তোলেননি কেউ। ভোটারদের দাবি সততা, কর্মনিষ্ঠা, দায়িত্ব বোধ এবং দীর্ঘ দিনের ধারাবাহিক সম্পর্ক রক্ষা করতে পারাই হলো তোতার বড় শক্তি। এ কারণে তিনি বারবার নির্বাচিত হন। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে কুড়িগ্রাম পৌরসভার মেয়র জেলে থাকার সময় ১০ মাস তিনি ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন। প্রায় পাঁচ হাজার ভোটার ৩নং ওয়ার্ডে। কম বেশি প্রতি বাড়িতে তার অবাধ যাতায়াত এবং সু-সম্পর্ক।তার ধারাবাহিক এ জয়ের রহস্য সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জাগো নিউজকে জানান,  গোমর ফাঁশ করতে কন? এটাতো ভাই ভোটের কৌশল। প্রথমে না বলতে চাইলেও পরে তিনি খুলে বলেন তার জয়ের রহস্য। তিনি বলেন, নির্বাচিত হবার দিন থেকে তিনি আবার ভোটের কাজ শুরু করেন। অর্থাৎ, ভোটারদের কাছাকাছি থাকেন। তাদের বিপদে আপদে সাহায্য করেন। তিনি বলেন, মানুষ ডাকলে হাজির হই। কথা দিয়ে কথা রাখি। সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করি। সবার সঙ্গে ভালো আচরণ করি। সৎ পরামর্শ দেই। সুষ্ঠুভাবে জিআর, ভিজিএফের চাল বিতরণ করি। নির্বাচন শেষে আবার মাঠে কাজ শুরু করেছি।  নাজমুল হোসেন/এমজেড/পিআর

Advertisement