সাহিত্য

সাদাত হোসাইনের আরশিনগর: সময়ের উৎকৃষ্ট প্রতিচ্ছবি

২০১৫ সালের বইমেলায় প্রাণ সঞ্চার করেছিলেন তরুণ ঔপন্যাসিক সাদাত হোসাইন। তার উপন্যাস ‘আরশিনগর’ পাঠককে মুগ্ধ করেছিল। তার পরের বছরও বিষয়টি লক্ষ্য করেছি। সাদাত হোসাইনের লেখার ওপর মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। আরশিনগরের পাশাপাশি ‘অন্দরমহল’ এবং ‘মানবজনম’ সমানভাবে টানছে পাঠককে। এরপর থেকেই সাদাতের আলোচনা পাঠকমুখে চলতে থাকে। ধীরে ধীরে তা যেন পূর্ণতা পাচ্ছে।

Advertisement

কেননা তার ‘আরশিনগর’ পড়ে আমি উপলব্ধি করেছি, মানব মনের বহু সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম বিষয়ে অসাধারণ আর গভীর বোধের সংমিশ্রণে তিনি তৈরি করেছেন উপন্যাসটি। এ উপন্যাসের প্রতিটি চরিত্রের কথোপকথন বর্ণনায়ও আমি বিস্মিত এবং মুগ্ধ। দীর্ঘ উপন্যাসটি পড়ে শেষ করার পরপরই আমার প্রথম যে কথাটি মনে হয়েছে, সেটা হলো—অসাধারণ, অসাধারণ এবং অবশ্যই অসাধারণ।

সাদাত বাংলা উপন্যাসে নতুন স্রোতের সূত্রপাত ঘটিয়েছেন। যা বহমান থাকবে অনন্তকাল। এমনটাই আশা করছি। নীরবে-নিভৃতে কাজ করে যাচ্ছেন সাদাত। তার কথার মধ্যেই গল্প নিহীত। একটি জাদুকরী ক্ষমতা আছে বলতে হবে। তার বিনয়-নম্রতা সবাইকে মুগ্ধ করবে। পাঠককে ভালোবাসার, কাছে টানার ক্ষমতা আছে তার। সে ক্ষমতা হয়তো সবার থাকে না। সমকালীন লেখক-কবিদের প্রতি তার সমীহ আলোচনার দাবি রাখে। তরুণ এ ঔপন্যাসিক সমকালীন তরুণদেরও পাশে রেখে এগিয়ে যেতে চান। তারুণ্যের বিপ্লব বা জয়জয়াকার তার লক্ষ্য। শিল্প-সাহিত্যে তার একনিষ্ঠতায় আগামীর গদ্য সাহিত্য ভান্ডার ব্যাপক সমৃদ্ধ হবে।

‘আরশিনগর’ উপন্যাসটি তার বৃহৎ কলেবরের প্রথম উপন্যাস। আড়াই শতাধিক পৃষ্ঠার ‘আরশিনগর’ নিয়ে আলোচনা করতে গেলে একটি সমালোচনা গ্রন্থ হবে। উপন্যাসের প্রতিটি চরিত্র নিয়ে আলাদা আলাদা আলোচনার দাবি রাখে। সংক্ষেপে শুধু এর একটি দিক নিয়ে হয়তো আলোচনা করা যায়। কেননা আরশিনগরের সামাজিক, রাজনৈতিক, পারিবারিক এবং অর্থনৈতিক দিক নিয়ে আলোচনা করতে দীর্ঘ প্ল্যাটফর্মের প্রয়োজন।

Advertisement

শুরুতেই যদি বলি, আরশিনগরে যতগুলো মৃত্যু সংঘটিত হয়েছে। তার প্রত্যেকটির বিবরণ আলাদা করে বলার দাবি রাখে। তবে এর প্রত্যেকটি মৃত্যুই আমার কাছে অনিবার্য মনে হয়েছে। উপন্যাসে দেশের এক সময়ের রাজনৈতিক উত্তাল সময়, সামাজিক প্রেক্ষাপট, ব্যক্তির জিঘাংসা ফুটে উঠেছে। এত কিছুর পরেও মানব-মানবীর ভালোবাসা বা বিচ্ছেদের আর্তনাদ অমোঘ সত্য হয়ে ধরা দিয়েছে। মনে হয়েছে ঘটনাগুলো খুব কাছের। চিরচেনা পরিবেশের।

সর্বোপরি বলতে গেলে, আরশিনগরে মুগ্ধতার যেন শেষ নেই। গল্পই আমাকে টেনে নিয়ে গেছে শেষ অবধি। উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র আরশির জন্ম থেকে শুরু করে নানা বাঁকে মোড় নিয়েছে কাহিনি। সেই বাঁকে বাঁকে এগিয়ে যায় পাঠকের মন। আরশির জন্মকালে মায়ের মৃত্যু, দাদির ভালোবাসায় বেড়ে ওঠা, সৎ মায়ের আগমন, অন্যের ঘরে আশ্রিতা, আশ্রয়ের স্থান বদল, আড়ালে থেকে পড়াশোনা, টেলিভিশনে কাজ, গ্রামে ফিরে আসা, বাবার মৃত্যু—সবকিছুই টেনে নিয়ে যায় পাঠকের চোখ। তবে এতে ঘটনার ঘনঘটা থাকলেও কোথাও একটু বিরক্তির ছাপ পড়েনি।

পূর্বতন কোনো লেখকের ছায়াও খুঁজে পাইনি আরশিনগরে। কারো দ্বারা প্রভাবিত হয়ে নয় বরং গ্রামীণ জনপদের মানুষের মুখে শোনা কোনো কাহিনিই উঠে এসেছে আরশিনগরে। আরশিনগর নামে বাস্তবে কোনো গ্রাম আছে কি না আমার জানা নেই; থাকলেও এমন ঘটনা ঘটেছে কি না—লেখকই ভালো বলতে পারবেন। তবে আমার মনে হয়, ঘটনাগুলো ঘটতে পারে। সেখান থেকেই হয়তো উপাদান সংগ্রহ করে থাকবেন লেখক। আমার মনে হয়েছে, সাদাত নিজের পথেই হাঁটছেন। তিনি পথ তৈরি করে এগোচ্ছেন।

তার গল্পের স্থান শহর এবং প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল। ১৯৮৪-১৯৮৫ সালের উত্তাল সময় থেকে শুরু। যযাতিপুর নামে অখ্যাত একটি গ্রামের অনগ্রসর মানুষের কাহিনি দিয়ে শুরু হওয়া গল্প এগিয়ে গেছে ইট-পাথরের শহর কিংবা রাজধানীর বুকেও। প্রসঙ্গক্রমে এসেছে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ। পিছিয়ে থাকা গ্রামে এসেছে পাকা সড়ক। নদীর পাড়ে গড়ে উঠেছে বাজার। স্বচ্ছলতা এসেছে অর্থনীতিতে। খেটে খাওয়া মানুষের নিরন্তর সংগ্রামই এর উপজীব্য। পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলে প্রভাব বিস্তারের নোংরা প্রতিযোগিতার চিত্র এঁকেছেন লেখক।

Advertisement

আরশিনগরের নিলুফা বানু, আম্বরি বেগম, মজিবর মিয়া, লতু হাওলাদার, লাইলি, শুকরঞ্জন ডাক্তার, সুজাতা রানী, মিলি, রুবিনা, আসিফ, ইমাম সাহেব, চরমপন্থি নেতা লোকমান, গলাকাটা বশির, আবদুল মমিন, যশোদা মাস্টার, তালেব মাঝি, হারাধন, মোস্তফা, কামরুন্নাহার, জায়েদ, আশিষ, রুপাই, সকাল, বিধানচন্দ্র, দুলাল মেম্বার, জালাল কাজী, মজিদ বেপারী, তহুরা, মনাই, আতাহার তালুকদার, আফজাল তালুকদাররা যেন আমাদের চিরচেনা প্রতিবেশি। আমাদেরই প্রতিনিধি তারা। উপন্যাসে বিবৃত মালোপাড়া, মোঘলগঞ্জ, স্টিমারঘাটা, খাসেরহাট, রাঙ্গারোড, শরীয়তপুর, আলিপুর—বাংলাদেশেরই প্রত্যন্ত অঞ্চল।

উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র আরশি। তাকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়েছে ঘটনা। ঘটনার শাখা-প্রশাখা বিস্তার লাভ করেছে। প্রত্যেকটি ঘটনার সূত্র এক জায়গায় গিয়ে মিশেছে। কোনো ছন্দপতন নেই। গল্পের প্রয়োজনে চরিত্রের জন্ম হয়েছে। আবার প্রয়োজন শেষে হারিয়ে গেছে। আরশির জন্ম, নির্লিপ্ততা, বেড়ে ওঠা, মন্দভাগ্য, ঘটনাচক্রে স্থান পরিবর্তন, প্রেমে পড়া, প্রতিষ্ঠা লাভ প্রভৃতি সাবলীলভাবে তুলে এনেছেন লেখক।

সে সময় রাজনৈতিক অস্থিরতা, চরমপন্থিদের উৎপাতে জনজীবন কেমন বিপর্যস্ত হয়েছিল, তা-ই সুনিপুণভাবে বর্ণিত হয়েছে। অনগ্রসর গ্রামাঞ্চলে অভাব-অনটনে উচ্চবিত্ত বা প্রভাবশালীদের প্রভাব বিস্তার চমৎকার বিন্যাসে ফুটে উঠেছে। সেখানে অনেক মৃত্যুর সমাবেশ দেখেছি, তবে প্রত্যেকটি মৃত্যুই অনিবার্য ছিল। কারণ একেকটি চরিত্রের মৃত্যুর আগেও লেখককে ভাবতে হয়েছে অনেক। যৌক্তিক কারণ ছাড়া মৃত্যু সংঘটিত হলে লেখককেই জবাবদিহি করতে হবে। এটাই স্বাভাবিক। প্রতিটি বিপদের মুহূর্ত সৃষ্টি এবং সংকট উত্তরণে দারুণ মেধার পরিচয় দিয়েছেন লেখক। ফলে মানুষের উত্থান-পতন জলের মতো পরিষ্কার হয়ে উঠেছে। যে যযাতিপুর গ্রাম থেকে কাহিনির সূত্রপাত হয়েছিল; সেই যযাতিপুর গ্রামে এসেই কাহিনির সমাপ্তি ঘটেছে। মাঝখানে ঘুরে এসেছি অনেকটা পথ, অনেকটা বছর। আরশির কিশোরী বয়স থেকে যুবতী হওয়া পর্যন্ত।

আরশিনগরে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে। মনস্তাত্ত্বিক বোঝাপড়া আছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের আধুনিকতা স্পর্শ করেছে মানুষকে। বিদ্যুৎবিহীন অন্ধকার গ্রামে বিদ্যুৎ আসে। দেশে বেসরকারি টেলিভিশনের যাত্রা শুরু হয়। ঘটনার ওই সময়ের। তবু লেখক গ্রামবাংলার পুথিপাঠকে বড় করে তুলেছেন। সামনে ধরে রেখেছেন। দাদির মুখে শোনা পুথিপাঠই আরশিকে একসময় তারকা হতে সাহায্য করে। মনোবিকারের নানাবিধ প্রসঙ্গ এসেছে মিলি এবং আশিষের সংসারে। গর্ভধারণ, সন্তান প্রসব, বালিকার যুবতী হওয়ার প্রাক্কালীন মুহূর্ত, রতিক্রিয়া, অবৈধ সঙ্গম এসেছে বর্ণনায়। অথচ এতটুকুও অশ্লীল মনে হয়নি।

আমার এখনো মনে হয়, আরশিনগরের ঘোর থেকে বের হতে বোধহয় সময় লাগবে। কেননা, একটা ঘটনা আমাকে এখনো ভাবায়, গৃহশিক্ষক বিধানচন্দ্র আরশিকে ইঙ্গিতে ভালোবাসার কথা বলেই উধাও হয়ে যান। রাতে একাকী পেয়েও স্পর্শ করেন না। ঠোঁটের কাছে ঠোঁট নিয়ে ফিরে এসেছেন। চলে গেছেন এলাকা ছেড়ে। আরশির বাধা বা আপত্তি ছিল না। কারণ ওটাই ছিল আরশির প্রথম স্পর্শ। পরে বিধানচন্দ্রের প্রতি আরশির প্রেম প্রকাশ পায় অথচ বিধানচন্দ্র তা কোনো কালেই জ্ঞাত হতে পারেননি। কেননা তার আগেই তিনি অন্তরালে চলে যান। বিধানের লেখা কবিতাগুলো ভাবায় আরশিকে। বিধানের রেখে যাওয়া খাতাটা আরশিকে স্বস্তিতে থাকতে দেয় না। সেই রাতের প্রথম স্পর্শ তাকে কুড়ে কুড়ে খায়। অপরদিকে মহল্লার পরিচিত কিংবা পরবর্তীতে সহকর্মী আসিফ প্রবলভাবে ভালোবাসে আরশিকে। আরশি তা বোঝে, তবুও অন্তরালের মানুষটাকেই তার বেশি মনে পড়ে। যদিও বিধানের আর কোনো খোঁজ আমরা পাইনি। অন্তরালে চলে যাওয়ার কারণও জানতে পারিনি।

এত এত হিংসা-রাহাজানি এবং প্রাণহানীর পরেও যযাতিপুরে কি শান্তি ফিরে এসেছিল? আমরা জানি না। বিশাল জিজ্ঞাসা রেখে গেছেন লেখক। যদিও কাহিনির নেতিবাচক চরিত্র লতু হাওলাদার তার বিশ্বস্ত সহযোগী চরমপন্থি নেতা আবদুল মমিনের হাতেই খুন হন। লাইলির মৃত্যু হয় আগুনে পুড়ে। লোকমানের মৃত্যু হয় বশিরের হাতে। যশোদা মাস্টার খুন হন রাঙ্গারোডে। জালাল কাজী খুন হন। নদীতে ভেসে আসে জোড়া লাশ। ভাঙাবাড়িতে পাওয়া যায় মৃতদেহ। খুন-খারাবির এক পর্যায়ে যযাতিপুরে খুন হওয়ার মতো আর তো কেউ ছিল না। তবে তো শান্তি আসার কথা। হয়তো এসেছিল।

যযাতিপুরের ডাইনি এবং আরশিনগরের উল্লেখযোগ্য একটি চরিত্র লাইলি। একটি রহস্যময় চরিত্রও বটে। সম্পর্কে আরশির বাবা মজিবর মিয়ার মামাতো বোন। বিয়ের আগেই দুবার বাড়ি থেকে পালিয়েছিল। দুই-তিনমাস থাকার পর আবার ফিরেও আসে। সবশেষে আরশির মা লতিফা বানু কন্যাসন্তান জন্ম দিয়ে পরপারে চলে গেলে বিবাহ হয় মজিবর মিয়ার সঙ্গে। অর্থাৎ আরশির সৎ মা হিসেবে বাড়িতে আসে। শর্তারোপ করে মেয়েকে গছিয়ে দিয়ে মজিদ বেপারী আরশির জীবনকে দুর্বিষহ করে দেন। এদিকে মজিবর মিয়ার স্বচ্ছলতা গায়ে কাটা লাগায় লতু হাওলাদারের। শুরু হয় অপমান আর চক্রান্ত। তাতেও হাত মেলায় লাইলি।

লতু হাওলাদারের সহযোগিতায় মজিবরের শরীর পঙ্গু করে দেয় লোকমান। পরে সেই চরমপন্থি লোকমানের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে মজিবরকে আরও সর্বস্বান্ত করতে উঠেপড়ে লাগে লাইলি। আরশির নামে কেনা জমি এবং সবজির আড়ৎ নিজের মেয়ে তহুরার নামে দিতে চাপ প্রয়োগ করে লাইলি। পঙ্গু মজিবরের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে মাঝে মাঝেই লোকমানের শয্যাসঙ্গী হয় লাইলি। কিন্তু কোনো এক রাতে দেখে ফেলে আরশি। সেই রাতেই পালাতে হয় কিশোরী আরশিকে। ওদিকে লতু হাওলাদারের বাড়ি ছেড়ে পালাবার পথে ইমাম সাহেব উদ্ধার করে আরশিকে। সে অনেক লম্বা ঘটনা। আরশির জীবনেও আসতে শুরু করে পরিবর্তন। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের সহজ-সরল মেয়েটির আশ্রয় মেলে ইমাম সাহেবের বাড়িতে। সেখানে অর্থাভাব, চাকরি হারানো ইমাম সাহেব বাধ্য হয়ে আরশিকে নিয়ে যায় ঢাকা শহরে। যযাতিপুরের পুত্রবধূ রুবিনার কাছে। জীবনের মোড় ঘুরতে থাকে আরশির।

আরশির জীবনের মোড় ঘুরতে থাকলেও শোচনীয় হতে থাকে নিস্ব মজিবর মিয়ার জীবন। সেই রাতে লোকমানের হাত থেকে আরশিকে বাঁচাতে লোকমানের প্রতিপক্ষ বশির লোকমানকে খুন করে। কিন্তু আরশিকে আর খুঁজে পায় না। খালি বাড়িতে এখন সুযোগ নেয় লতু হাওলাদারের বিদেশ ফেরত ছেলে মোস্তফা। শারীরিক সম্পর্কে লাইলির অংশীদার হন তিনি। কিন্তু রোষানলে পড়ে বাবার। লাইলিকে হাত করে সম্পত্তি চান লতু হাওলাদার। কিন্তু লাইলিকে বউ হিসেবে লতু হাওলাদার মেনে নেবেন কেন? তাই রাতের অন্ধকারে আগুন ধরিয়ে দেন মজিবরের ঘরে। সেদিনই দীর্ঘ বছর পেরিয়ে বাবার সন্ধানে যযাতিপুর যায় আরশি। দগ্ধ ঘর থেকে বাবাকে উদ্ধার করলেও পঙ্গু আহত মজিবরকে বাঁচাতে পারে না সে।

এরকম হাজারো ঘটনা-অনুঘটনা নিয়ে এগিয়ে যায় আরশিনগর। আরশির দাদি আম্বরি বেগম, মালোপাড়ার শুকরঞ্জন ডাক্তার, যশোদা মাস্টার, ডাক্তার রুবিনার ভূমিকা মনে রাখার মতো। আপত্য সংগ্রামের সঙ্গেই এগিয়ে যায় তাদের জীবন। সে জীবন হতাশার, ব্যর্থতার, হাহাকারের বা পরাজয়ের। তবুও কোনো একদিন সুখের দেখা পাবেন বলে আমৃত্যু লড়াই করে যান। শুধু তারাই লড়াই করেন না, পাঠককেও যে কোনো পরিস্থিতিতে লড়াই করার মানসিকতা তৈরি করতে অনুপ্রেরণা জোগান। লেখকের সার্থকতা এখানেই।

তবে দীর্ঘ উপন্যাসের কোথাও এতটুকু অসঙ্গতি নেই। কথার পরে কথা সাজিয়ে দারুণ কথামালা তৈরি করেছেন সাদাত। উপন্যাসের সমাপ্তি টেনেছেন তিনি এভাবে—‘মানুষ কত কত অপেক্ষায় নির্ঘুম রাত কোটায়। কত কত অপেক্ষার তৃষ্ণায় দিন কাটায়। কী অদ্ভুত এই মানবজনম! কী অদ্ভুত! এ যেন আয়নার মতোন এক উল্টো জগৎ। এই উল্টো জগতের নাম আসলে আরশিনগর!’

এসইউ/জিকেএস