সমতা বিধানে সক্ষমতা থাকলে একাধিক বিয়ের ক্ষেত্রে অনুমোদন দেয় ইসলাম। যদি কেউ সমতা রক্ষা করতে না পারে তবে একটি বিয়ে যথেষ্ট। যদি কেউ একাধিক বিয়ে করে ফেলে তবে তার করণীয় হলো সুন্নাতের অনুসরণ ও অনুকরণ করা। একাধিক স্ত্রীর সঙ্গে কিভাবে সংসার করেছেন প্রিয় নবি?
Advertisement
একাধিক বিয়ে ক্ষেত্রে সমতা বিধান করার নির্দেশ দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ। যদি কেউ স্ত্রীদের মধ্যে সমতা রক্ষা করতে অপারগ হবে বলে মনে হয়; তবে তাদের জন্য একটি বিয়ের নির্দেশই এসেছে। আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-
وَ اِنۡ خِفۡتُمۡ اَلَّا تُقۡسِطُوۡا فِی الۡیَتٰمٰی فَانۡکِحُوۡا مَا طَابَ لَکُمۡ مِّنَ النِّسَآءِ مَثۡنٰی وَ ثُلٰثَ وَ رُبٰعَ ۚ فَاِنۡ خِفۡتُمۡ اَلَّا تَعۡدِلُوۡا فَوَاحِدَۃً اَوۡ مَا مَلَکَتۡ اَیۡمَانُکُمۡ ؕ ذٰلِکَ اَدۡنٰۤی اَلَّا تَعُوۡلُوۡا
আর তোমরা যদি আশংকা কর যে, পিতৃহীনাদের প্রতি সুবিচার করতে পারবে না, তবে বিবাহ কর (স্বাধীন) নারীদের মধ্যে যাকে তোমাদের ভাল লাগে; দুই, তিন অথবা চার। আর যদি আশংকা কর যে, (একাধিক স্ত্রীর প্রতি) সুবিচার করতে পারবে না, তবে একজনকে (বিবাহ কর) অথবা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীকে (স্ত্রীরূপে ব্যবহার কর)। এটাই তোমাদের পক্ষপাতিত্ব না করার বেশি কাছাকাছি।’ (সুরা নিসা : আয়াত ৩)
Advertisement
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর বিবিদের সঙ্গে ন্যয়সংগতভাবেই সমতা বিধান করে সংসার করতেন। একাধিক বিয়ে করা ব্যক্তিদের জন্য প্রিয় নবি হতে পারেন সর্বোত্তম আদর্শ। হাদিসে পাকে এসেছে-
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর বিবিদের মাঝে খুবই ন্যায়সংগতভাবে পালা বণ্টন করতেন। আর তিনি (আল্লাহর কাছে দোয়া করে) বলতেন-
اللَّهُمَّ هَذِهِ قِسْمَتِي فِيمَا أَمْلِكُ فَلاَ تَلُمْنِي فِيمَا تَمْلِكُ وَلاَ أَمْلِكُ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা হাজিহি ক্বিসমাতি ফিমা আমলিকু ফালা তালুমনি ফিমা তামলিকু ওয়া লা আমলিকু।’
Advertisement
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমার সামর্থ্য অনুযায়ী এই আমার পালা বণ্টন। যে ব্যাপারে শুধু তোমারই পূর্ণ শক্তি আছে, আমার কোনো শক্তি নেই, সেই (পালা বণ্টনের মাধ্যমে সমতা রক্ষার) ব্যাপারে আমাকে তিরস্কার করো না।’ (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)
এই হাদিসে ‘লা তালুমনি ফিমা তামলিকু ওয়া লা আমলিকু’-এর ব্যাখ্যায় ইসলামিক স্কলারদের মতামত হলো- ‘আন্তরিক প্রেম-ভালোবাসার উপর আমার কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই (এটা কম-বেশী হতে পারে)।
স্ত্রীদের সঙ্গে আচরণেও সমতা রক্ষা করা
প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সব স্ত্রীদের সঙ্গেই উত্তম আচরণ করতেন। কোনো স্ত্রী কোনো দিন তাকে আচরণের তারতম্য হয়েছে মর্মে কোনা কথা বলতে পারেনি। হাদিসে পাকে এসেছে-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তির কাছে দুইজন স্ত্রী আছে; সে ব্যক্তি যদি তাদের মধ্যে সমতা না রাখে তবে কেয়ামতের দিন সে ব্যাক্তি তার দেহের এক পার্শ্ব ভাঙ্গা অবস্থায় উপস্থিত হবে।’ (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)
কুমারী ও অকুমারী নারীকে বিয়ে করলে…
তবে কেউ যদি কোনো কুমারী নারীকে দ্বিতীয় বিয়ে করে; সে বিষয়েও সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা এসেছে হাদিসে-
হজরত আনাস ইবনু মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সুন্নাত নিয়ম হচ্ছে, নিজের স্ত্রী থাকার পরেও কোনো লোক কুমারী নারীকে বিয়ে করলে সে তার সঙ্গে একাধারে সাতদিন অবস্থান করবে এবং সায়্যিবা (অকুমারী) নারীকে বিয়ে করলে একাধারে তিন দিন তার সাথে অবস্থান করবে।’ তিরমিজি, ইবনে মাজাহ, বুখারি, মুসলিম)
কোনো কোনো আলেম তথা ইসলামিক স্কলাররা এ হাদিস মোতাবেক আমল করেছেন। তারা বলেছেন, নিজের স্ত্রী থাকার পরেও কোনো লোক কুমারী নারীকে বিয়ে করলে সাত দিন তার নিকট অবস্থান করবে। তারপর (সাতদিন অতিবাহিত হওয়ার পর) উভয়ের মধ্যে সঠিকভাবে পালা বণ্টন করবে। সায়্যিবা (অকুমারী) মহিলাকে যদি সে লোক বিয়ে করে তবে তিনদিন তার সাথে অবস্থান করবে। এই মত দিয়েছেন ইমাম মালিক, শাফিঈ, আহমাদ ও ইসহাক রাহমাতুল্লাহি আলাইহি।
তবে তাবেঈদের মধ্যে কেউ কেউ নিজ স্ত্রী থাকাবস্থায় কোনো লোক কুমারী নারীকে বিয়ে করলে তিন দিন এই শেষোক্তের কাছে অবস্থান করবে এবং সায়্যিবা (অকুমারী) নারীকে বিয়ে করলে তার কাছে দুইদিন অবস্থান করবে। তবে প্রথমোক্ত অভিমতটি বেশি গ্রহণযোগ্য।
সুতরাং মুমিন মুসলমানের মধ্যে যারা একাধিক বিয়ে করেছে কিংবা যারা একাধিক বিয়ে করতে চায়; তাদের উচিত, সমতা বণ্টনের ব্যাপারে একনিষ্ঠ থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করা। প্রিয় নবির শেখানো দোয়াটি বেশি বেশি পড়ে সমতা বণ্টনের ব্যাপারে আশ্রয় প্রার্থনা করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর একাধিক বিয়ে করা ব্যক্তিদের জন্য তাদের স্ত্রীদের মধ্যে সমতা বণ্টন করার তাওফিক দান করুন। হাদিসের উপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এএসএম