জাতীয়

করোনায় মৃতদের বেশির ভাগের ছিল পূর্বের শারীরিক জটিলতা: গবেষণা

চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া বেশিরভাগ মানুষের শরীরে আগে থেকে নানা জটিলতা ছিল। এছাড়া মৃত্যুবরণ করা এসব ব্যক্তিদের অধিকাংশের বয়স পঞ্চাশোর্ধ। করোনায় নারীর তুলনায় পুরুষের মৃত্যুহার বেশি।

Advertisement

চট্টগ্রামে পরিচালিত একটি গবেষণায় এ তথ্য উঠে আসে। চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) উপাচার্য গৌতম বুদ্ধ দাশ ও চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. ইসমাইল খানের নেতৃত্বে এ গবেষণা হয়।

গবেষকরা জানান, গত মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জেনারেল হাসপাতালে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ২৩৪ জন রোগীর ওপর এ গবেষণা চালানো হয়। এদের মধ্যে ১৫৬ জনই মৃত্যুবরণ করেন এবং সুস্থ হন ৭৮ জন। মৃত্যু হওয়া ৭৩ শতাংশের বয়স ছিল পঞ্চাশোর্ধ্ব। আবার এদের মধ্যে ৮৯ দশমিক এক শতাংশ রোগী আগে থেকে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, হাঁপানিসহ নানা স্বাস্থ্য জটিলতায় ভুগছিলেন। এছাড়া মারা যাওয়া রোগীদের মধ্যে ৭০ দশমিক ৮৩ শতাংশ পুরুষ এবং ৬২ দশমিক ২৮ শতাংশ নারী।

গবেষকরা আরও জানান, মৃত্যুবরণ করা রোগীদের রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ ছিল স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে কম। যার গড় পরিমাণ ১০ দশমিক ৬ মিলিমিটার। হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক মাত্রা প্রতি ডেসিলিটারে ১২ থেকে ১৭ গ্রাম। মারা যাওয়া ৭৩ শতাংশ রোগীর রক্তে অক্সিজেনের চাপ ছিল স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে গড়ে ৫০ দশমিক ৪ মিলিমিটার কম। স্বাভাবিক মাত্রা ৭০-৯০ মিলিমিটার। এছাড়া ৯৮ শতাংশ রোগীর রক্তে সি-রিঅ্যাক্টিভ প্রোটিনের (সিআরপি) পরিমাণ ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি। স্বাভাবিক মাত্রা লিটারে ৫ মিলিগ্রামের কম হলেও এসব রোগীর রক্তে সিআরপি প্রতি লিটারে গড়ে ১০২ দশমিক ৪ মিলিগ্রাম পর্যন্ত পাওয়া গেছে। এর বাইরে মারা যাওয়া ৭৫ শতাংশ রোগীর রক্তে ফেরিটিনের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে উচ্চমাত্রা পরিলক্ষিত হয়। যার পরিমাণ ছিল প্রতি মিলিলিটারে ৯০১ দশমিক ৫ ন্যানোগ্রাম। স্বাভাবিক মাত্রা প্রতি মিলিলিটারে ৯-৩৭০ ন্যানোগ্রাম।

Advertisement

অন্যদিকে ৬৫ দশমিক ২ শতাংশ রোগীর রক্তে ডি-ডাইমারের পরিমাণ স্বাভাবিকের (শূন্য দশমিক পাঁচ মাইক্রোগ্রাম প্রতি মিলিলিটারে কম) চেয়ে উচ্চমাত্রা পরিলক্ষিত হয়, যা ছিল ২ দশমিক শূন্য ২ মাইক্রোগ্রাম। এছাড়া ৭৬ শতাংশ রোগীর রক্তে ট্রপোনিনের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি, শূন্য দশমিক ৮১ ন্যানোগ্রাম পর্যন্ত ছিল। এর স্বাভাবিক মাত্রা শূন্য দশমিক ৪ ন্যানোগ্রাম।

জানতে চাইলে উপাচার্য গৌতম বুদ্ধ দাশ জাগো নিউজকে বলেন, করোনা শনাক্তের পর রক্তের সংশ্লিষ্ট পরীক্ষা শেষে নিশ্চিত হতে হবে আগে থেকে শারীরিক জটিলতা আছে কি না। তাহলে সঠিকভাবে চিকিৎসা দেওয়া যাবে। বিশেষ করে পঞ্চাশোর্ধ রোগীদের করোনা শনাক্তে সতর্ক থাকতে হবে।

গবেষণা কার্যক্রমে অন্যান্যদের মধ্যে অংশগ্রহণ করেন- চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক সেখ ফজলে রাব্বি, চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-পরিচালক বিদ্যুৎ বড়ুয়া, সহকারী অধ্যাপক ইফতেখার আহমেদ, জেনারেল হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ কনসালট্যান্ট মো. আবদুর রব, জুনিয়র কনসালট্যান্ট রাজদ্বীপ বিশ্বাস, জুনিয়র কনসালট্যান্ট মৌমিতা দাশ, সিভাসুর বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ত্রিদীপ দাশ, সিভাসুর মলিকিউলার বায়োলজিস্ট প্রণেশ দত্ত, সিরাজুল ইসলাম ও তানভির আহমেদ নিজামী।

মিজানুর রহমান/জেডএইচ/

Advertisement