একাধিক প্রতিষ্ঠান থেকে ফসলের কীটনাশক আমদানির সুযোগ, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমানোসহ চার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ এগ্রোক্যামিকেলস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএএমএ)।
Advertisement
তাদের অন্য দাবিগুলো হলো- এলডিসি কান্ট্রি হিসেবে কোনো প্যাটেন্ট প্রোডাক্ট বাংলাদেশে প্রযোজ্য না করা ও উৎপাদিত পণ্য আমদানিকারকদের কাঝে বিক্রি করতে যে বাধা আছে তা দূর করা।
বুধবার (৮ ডিসেম্বর) দুপুরে গুলশানের একটি হোটেলে দাবিগুলো উপস্থাপন করেন ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ার ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এস এম মোস্তাফিজুর রহমান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের এগ্রিকালচার ক্যামিকেলের বাজার চার হাজার কোটি টাকার মতো। তার সিংহভাগই বহুজাতিক কোম্পানির দখলে। পেস্টিসাইড উৎপাদনে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো আজ কঠিন প্রতিবন্ধকতার মুখে। এজন্য ব্যবহার করা হচ্ছে ২০১০ সালের পুরোনো একটি প্রজ্ঞাপন ও পেস্টিসাইড টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজারি।
Advertisement
তিনি আরও বলেন, ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদে পেস্টিসাইড সংক্রান্ত সর্বশেষ যে আইন প্রণীত হয় সেখানে দেশীয় কোম্পানিগুলোর জন্য বিদেশ থেকে কাঁচামাল ও অন্য সহায়ক উপাদান আমদানির ক্ষেত্রে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতার কথা উল্লেখ নেই। আইন, বিচার ও সংসদ-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সুপারিশেও দেশীয় কৃষিশিল্পের বিকাশের স্বার্থে কাঁচামাল ও অন্য সহায়ক উপাদান আমদানির জন্য প্রতিষ্ঠান (সোর্স) উন্মুক্ত করার সুপারিশ উল্লেখ রয়েছে।
এরপরও ২০১৫ সাল থেকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের কারিগরি পরামর্শ প্রদানকারী কমিটি পিটিএসি দেশীয় কোম্পানিগুলোর জন্য একাধিক বিদেশি সোর্স (প্রতিষ্ঠান) পছন্দের সুযোগ রুদ্ধ করে রেখেছে। তারা শর্ত দিয়ে উল্লেখ করেছে, বালাইনাশক রেজিস্ট্রেশন পাওয়ার তারিখ হইতে দুই বছরের মধ্যে রেজিস্ট্রার্ড বালাইনাশক ম্যানুফেকচারার বা সোর্স পরিবর্তনের আবেদন করা যাবে না। অথচ বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে এ নিয়ম ঠিক উল্টো।
বক্তারা বলেন, বহুজাতিক কোম্পানিগুলো বিভিন্ন দেশে প্রতিষ্ঠিত তাদের প্ল্যান্ট থেকে কাঁচামাল ও অন্য সহায়ক উপাদান যাতে প্রতিযোগিতামূলক দামে সংগ্রহ করতে পারে সে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এর ফলে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো আন্তর্জাতিক বাজার থেকে মূল্য যাচাই করে একাধিক সোর্সের কাছ থেকে কাঁচামাল আমদানি করতে পারছে। কিন্তু বিধিনিষেধের কারণে দেশীয় কোম্পানি তা পারছে না। তারা শুধু একটি নির্দিষ্ট বিদেশি সোর্সের (কোম্পানি) কাছ থেকে কাঁচামাল ও অন্য সহায়ক উপাদান আমদানি করতে পারে।
তিনি আরও জানান, কাঁচামাল আমদানি অনুমোদনের জন্য এই বিদেশি কোম্পানির নামের অনুমোদন আগেই নিয়ে রাখার নিয়ম করে রাখা হয়েছে। বিদেশ থেকে কাঁচামাল ও অন্য সহায়ক উপাদান আমদানি করতে চাইলে প্রত্যেকটি পণ্য ও চালানের জন্য উৎপাদকদের মন্ত্রণালয় থেকে প্রত্যেকবার ছাড়পত্র নিতে হবে। এটাও বিদ্যমান আইনের পুরোপুরি লঙ্ঘন। এভাবে দেশীয় কোম্পানিগুলো প্রতি পদে পদে হয়রানির শিকার হচ্ছে।
Advertisement
রহমান পেস্টিসাইড অ্যান্ড কেমিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবু জাহাঙ্গীর খান বলেন, দেশি কোম্পানিগুলোর উৎপাদিত পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রেও চরম বৈষম্য সৃষ্টি করে রাখা হয়েছে। বৈষম্যমূলক শর্তের কারণে দেশি কোম্পানিগুলো তাদের উৎপাদিত পণ্য আমদানিকারকদের কাছে বিক্রি করতে পারে না। শর্তের কারণে দেশি কোম্পানিগুলোকে স্থানীয় বাজারের ওপর পুরোপুরি নির্ভর করতে হচ্ছে। এই শর্ত প্রচলিত আইনের সম্পূর্ণ পরিপন্থি।
তিনি আরও বলেন, এ ধরনের শর্তের কারণে দেশি কোম্পানিগুলোর আন্তর্জাতিক বাজার যাচাইয়ের কোনো সুযোগ থাকছে না। এর ফলে দেশি পেস্টিসাইড কোম্পানিগুলোকে অত্যন্ত চড়া দামে কাঁচামাল ও অন্য সহায়ক উপাদান কিনতে হচ্ছে। এতে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর সঙ্গে ব্যবসায়িক অসম প্রতিযোগিতায় নামতে হচ্ছে দেশি কোম্পানিগুলোকে।
এসএম/এআরএ/জেআইএম