ধর্ম

নববর্ষ ও ইসলামী মূল্যবোধ

উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে নতুন বছরের উৎসব ‘নববর্ষ’ পালন করার সঠিক ইতিহাস পাওয়া যায় না। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় ঘরোয়া পরিবেশে পরিবার-পরিজন ও আত্মীয় স্বজনের মাঝেই নতুন বছরের প্রথম দিনে ভালো খাবার-দাবারের আয়োজন, নতুন পোশাক গ্রহণের মধ্যেই বর্ষবরণ উদযাপন সীমাবদ্ধ ছিল। ঘটা করে কখনো কোনো অনুষ্ঠান আয়োজন হতো না। সময়ের আবর্তে বর্তমানে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ঘটা করে ইত্যাদি অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই বর্ষবরণ উদযাপন করে থাকে। ইসলামে বর্ষবরণের কোনো রুসুম-রেওয়াজ বা অনুমোদন নেই। হোক তা ইংরেজি, বাংলা কিংবা আরবি নববর্ষের।

Advertisement

উপমহাদেশ থেকে শুরু করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আতশবাজি, ঘণ্টাধ্বনি, ফল খাওয়া, কাঁচ তথা তৈজশপত্র ছুঁড়ে মারা, যৌবন হারানো ও চুল-ভ্রু সাদা হওয়ার ভয়ে নির্ঘুম রজনী পার করার মধ্য দিয়ে ‘নববর্ষ’ উদযাপন করা হয়। কিন্তু ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে যার কোনো ভিত্তি নেই। অথচ নির্দিষ্ট সময় ও সূর্যকে আহবান করতে প্রতি বছর ৩১ ডিসেম্বর রাত ১২ টা ০১ মিনিটে নববর্ষ উদযাপনের উদ্দেশ্যে আতশবাজি, বাদ্যযন্ত্রের তালে নাচ-গান, তরুণ-তরুণীর ফ্রি স্টাইলে ফুর্তিসহ বিভিন্ন আনন্দ উৎসব শুরু হয়। যার ফলশ্রুতিতে ঘটে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। অথচ অন্যায় ও যৌন উত্তেজনামূলক কোনো কাজ এবং আতশবাজিসহ অপচয়মূলক  কাজ কোনো ধর্মই সমর্থন করে না।

বর্ষবরণে ইসলামি মূল্যবোধরাতের গুরুত্বপূর্ণ যে সময়টিকে আনন্দ উৎসবের লক্ষ্যে টগবগে যৌবনের লাগামছাড়া নেশা মেটানোর সময় হিসাবে বেছে নেয়া হয়, গভীর রাতের সে সময়টির ব্যাপারে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘মহান আল্লাহ দুনিয়ার আকাশে নেমে এসে আহবানকারীকে, অসুস্থকে, ক্ষমাপ্রার্থীকে যা ইচ্ছা তা ডেকে ডেকে দিয়ে যান। (মুসলিম, মিশকাত)হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা অন্ধকার রাতের ঘনঘটার ন্যায় ফেতনার পূর্বে দ্রুত আমল কর, (যখন) ব্যক্তি ভোর অতিবাহিত করবে মুমিন অবস্থায়, সন্ধ্যা করবে কাফির অবস্থায়, অথবা সন্ধ্যা অতিবাহিত করবে মুমিন অবস্থায়, ভোর অতিবাহিত করবে কাফির অবস্থায়। মানুষ তার দ্বীনকে বিক্রি করে দিবে দুনিয়ার সামান্য কিছুর বিনিময়ে।’ (মুসলিম)

সুতরাং বর্ষবরণে ইসলামি সংস্কৃতি হওয়া উচিত ছিল, রাতের অন্ধকারে বিদায় নেয়া বছরের সকল অন্যায় ও অপরাধমূলক কাজের জন্য আল্লাহর দরবারে রোনাজারি করা এবং আগামীর দিনগুলোতে সুন্দর ও সৎ জীবনযাপনে দৃপ্ত শপথে আল্লাহর সাহায্য চাওয়া। কিন্তু আজকের মুসলিম আক্বিদা বিশ্বাসের মানুষ ভিন্নধর্মী সংস্কৃতিতে আকৃষ্ট হয়ে নিজেদের দ্বীন ও ঈমানকে করছে কুলষিত। তাইতো রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘রাতের মধ্যে এমন একটি সময় আছে, যদি কোন মানুষ সে সময় লাভ করতে পারে, তবে আল্লাহর নিকট ইহকাল ও পরকালের কোনো কল্যাণ চাইলে আল্লাহ তাকে দান করেন। আর এ সময়টি প্রতি রাতেই রয়েছে। (মুসলিম, মিশকাত)

Advertisement

অনুষ্ঠান যদি করতেই হয় ,তবে রাত্রি জাগরণ করে আল্লাহর দরবারে রোনাজারি করে বিগত জীবনে ভুলত্রুটি থেকে ক্ষমা চেয়ে ভবিষ্যৎ জীবনের কল্যাণে বিনিদ্র রজনী অতিবাহিত করাই হচ্ছে উত্তম। যেহেতু আতশবাজি, ঘণ্টাধ্বনি, কল্যাণের উদ্দেশ্যে ফল খাওয়া, কাঁচ তথা তৈজশপত্র ছুঁড়ে মারা, যৌবন হারানো ও চুল ভ্রু সাদা হয়ে যাওয়ার ভয়ে নির্ঘুম রজনী অতিবাহিত করাসহ বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার, নগ্ন নারীর পুরুষসংমিশ্রণ ইত্যাদি কাজ ইসলামে হারাম সেহেতু মুসলিম মাত্রই এ কাজ থেকে বিরত থাকা ঈমানের ফরজ দায়িত্ব।

পরিশেষে...আল্লাহ মুসলিম উম্মাহকে আহবান করে বলছেন, ‘আল্লাহ জীবন-মৃত্যু সৃষ্টি করেছেন পরীক্ষা করার জন্য, কে সবচেয়ে বেশি সুন্দর আমল করতে পারে।’ (সুরা মুলক : আয়াত ২)। আসুন, আমরা বিগত জীবনের ভুল সংশোধনে আমলনামা সমৃদ্ধকরণের প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হই। আল্লাহ অনত্র বলেছেন, হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক কথা বল। তিনি তোমাদের আমল-আচরণ সংশোধন করবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন। যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করে, সে অবশ্যই মহা সাফল্য অর্জন করবে। (সুরা আহযাব : আয়াত ৭০-৭১)সুতরাং আমরা বর্তমান সময়ে ফেতনার সে অন্ধকারে বাস করছি, আমাদের চারপাশে ঘোর মূর্খতার অন্ধকার, কুসংস্কারের অন্ধকার, বিদআতের অন্ধকার ও শিরকের অন্ধকারে সঠিক পথ খুজে পাওয়া দুষ্কর। বিশেষ করে ইহুদি-খৃস্টান ও কাফেরদের সংস্কৃতি আমাদের ঘ্রাস করে রেখেছে। আমরা তাতে গভীরভাবে মগ্ন হয়ে পড়েছি। নিজেদের দ্বীন ও আদর্শের পরিবর্তে তাদের কালচার ও আবিষ্কৃত অনুষ্ঠানে মেতে আছি। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে, আমাদের পরিবার-পরিজন, সন্তান-সন্তুতিসহ মুসলিম উম্মাহকে অন্যায় ও ফাহেশা কাজ থেকে হেফাজত করে কল্যাণের পথে এগিয়ে আসার তাওফিক দান করুন। আমিন।এমএমএস/আরআইপি