প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার পর ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে মন্ত্রিসভা থেকে সদ্য পদত্যাগ করা ডা. মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় করা অভিযোগটি ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলামের কাছে যাচ্ছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শাহবাগ থানায় অভিযোগটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) একজন শিক্ষার্থী দায়ের করেন।
Advertisement
বুধবার (৮ ডিসেম্বর) শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মওদুদ হাওলাদার জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জুলিয়াস সিজার তালুকদার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পক্ষে ডা. মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের চরিত্র হননের অপচেষ্টা ও বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে একটি গোষ্ঠীর মধ্যে বিরোধ সৃষ্টির অভিযোগ আনা হয়েছে।
অভিযোগটি ডিএমপি কমিশনারের বরাবর পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিটে পাঠানো হবে। এরপর মামলা হবে কি না সেই সিদ্ধান্ত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নেবেন বলে জানান শাহবাগ থানার ওসি।
Advertisement
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, “ডা. মুরাদ হাসান বলেছেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রস্রাব করার সময়ও আমার নাই’। এতে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, দেশের সর্বপ্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠকে তিনি উদ্দেশ্যমূলকভাবে তাচ্ছিল্য করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যবাহী রোকেয়া ও শামসুন্নাহার হলের নারী শিক্ষার্থীদের চরিত্র হননের অপচেষ্টা করে বলেছেন, ‘তারা রাতে নিজের হলে অবস্থান না করে বিভিন্ন পাঁচ তারকা হোটেলে রাত্রিযাপন করেন’। এই বাক্য দ্বারা তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের চরিত্র হননের অপচেষ্টা করেছেন। আমরা মনে করি, যেকোনো বিদ্যাপীঠই পবিত্র স্থান। একজন নাগরিকের চারিত্রিক বিষয়ে মন্তব্য করার ক্ষেত্রে একটি সীমারেখা রক্ষা করা সব নাগরিকের দায়িত্ব।”
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ‘ওই দুটি মন্তব্যের মাধ্যমে শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, বরং বিদ্যাপীঠগুলোর প্রতি তীব্র অশ্রদ্ধা প্রদর্শনের মাধ্যমে মধ্যযুগীয় কায়দায় ঘৃণার রাজনীতি করার অপপ্রয়াস দেখিয়েছেন। অন্যদিকে নারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারমূলক বক্তব্য দিয়ে তাদের চরিত্র হননের অপচেষ্টা করে নারীর রাজনীতি ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের বিরোধিতা করেন। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আপামর শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে নাগরিক ও রাজনৈতিক মূল্যবোধবিরোধী এই ন্যক্কারজনক বক্তব্যকে সামাজিকভাবে মান ক্ষুণ্ণ বলে মনে করছি।’
সম্প্রতি তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান এবং তার মেয়ে জাইমা রহমানকে নিয়ে একটি সাক্ষাৎকারে অসৌজন্যমূলক মন্তব্য করেন। এর পরপরই মুরাদের একটি ফোনালাপ ফাঁস হয়, যেখানে তাকে অশ্লীল ভাষায় চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহিকে তার সঙ্গে দেখা করার জন্য বলতে শোনা যায়। ফোনে চিত্রনায়ক ইমনকে প্রতিমন্ত্রী বলছিলেন, ঘাড় ধরে যেন মাহিকে তার কাছে নিয়ে যান। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন মহলে ডা. মুরাদের শাস্তির দাবি ওঠে। এর আগে জাইমা রহমানকে নিয়ে তার নারীবিদ্বেষী বক্তব্যেও উঠে সমালোচনার ঝড়।
এরই মধ্যে সোমবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর মঙ্গলবার দুপুরে মন্ত্রণালয়ে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন ডা. মুরাদ। একই দিন তাকে জামালপুর জেলা আ’লীগের পদ থেকে অব্যাহতি দিতেও কেন্দ্রে সুপারিশ করা হয়।
Advertisement
টিটি/এআরএ/জেআইএম