প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার পর ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান। চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির সঙ্গে কথোপকথনের একটি কল রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানোর পর এ নিয়ে সারাদেশে ব্যাপক সমালোচনার মধ্যেই গতকাল সোমবার চট্টগ্রামে চলে যান তিনি। এর একদিন পরই মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার আগ মুহূর্তে চট্টগ্রাম থেকে গোপনে ফেরেন ঢাকায়।
Advertisement
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, সোমবার দুপুরের পর চট্টগ্রাম পৌঁছে পাঁচতারকা হোটেল রেডিসনে ওঠেন ডা. মুরাদ। সেখানে ডাবল বেডের বিলাসী কক্ষে দিন কাটিয়ে রাতেই সেখান থেকে চেকআউট করেন। মঙ্গলবার সকালে গোপনে ঢাকায় ফিরে চলে যান ধানমন্ডিতে নিজ বাসায়। বর্তমানে তিনি ধানমন্ডির বাসায়ই অবস্থান করছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মাহিয়া মাহির সঙ্গে ফোনালাপে আপত্তিকর ও বিতর্কিত কথোপকথনের কল রেকর্ড ফাঁসের পর সোমবার দুপুর থেকেই মুরাদ হাসানের ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। ওইদিন মন্ত্রণালয়েও নিজ কার্যালয়ে আসেনি তিনি। বিকেলে জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ শিশুকল্যাণ পরিষদ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি করা হলেও সেখানেও যাননি প্রতিমন্ত্রী। মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্তও তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
এদিকে আজ দুপুর সাড়ে ১২টায় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করে পাঠান ডা. মুরাদ। পরে বিকেল ৩টায় তার পক্ষে পদত্যাগপত্রটি মন্ত্রিপরিষদ সচিবের দপ্তরে জমা দেন তথ্য প্রতিমন্ত্রীর জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন। সচিবের পক্ষে তার একান্ত সচিব মাহমুদ ইবনে কাসেম পদত্যাগপত্রটি গ্রহণ করেন।
Advertisement
প্রধানমন্ত্রী বরাবর পাঠানো এ পদত্যাগপত্রে বলা হয়, গত ১৯ মে ২০১৯ স্মারকমূলে আমাকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। আমি অদ্য ৭ ডিসেম্বর ২০২১ থেকে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে ব্যক্তিগত কারণে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে ইচ্ছুক।
এতে বলা হয়, এমতাবস্থায় আপনার নিকট বিনীত নিবেদন এই যে, আমাকে অদ্য ৭ ডিসেম্বর তারিখ থেকে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে অব্যহতি প্রদানের লক্ষ্যে পদত্যাগপত্রটি গ্রহণে আপনার একান্ত মর্জি কামনা করছি।
এর আগে সোমবার রাতে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তার বাসভবনে ডা. মুরাদ হাসানের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানান, আজ (সোমবার) সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়েছে। মুরাদ হাসানকে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। রাত ৮টায় মুরাদ হাসানকে এ বার্তাটি পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান এবং তার মেয়ে জাইমা রহমানকে নিয়ে একটি সাক্ষাৎকারে অসৌজন্যমূলক মন্তব্য করেন। এর পরপরই মুরাদের একটি ফোনালাপ ফাঁস হয়, যেখানে তাকে অশ্লীল ভাষায় চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহিকে তার সঙ্গে দেখা করার জন্য বলতে শোনা যায়। ফোনে চিত্রনায়ক ইমনকে প্রতিমন্ত্রী বলছিলেন, ঘাড় ধরে যেন মাহিকে তার কাছে নিয়ে যান। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন মহলে ডা. মুরাদের শাস্তির দাবি ওঠে। এর আগে জাইমা রহমানকে নিয়ে তার নারীবিদ্বেষী বক্তব্যেও উঠে সমালোচনার ঝড়।
Advertisement
এদিকে প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার দিনই ডা. মুরাদকে জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের পদ থেকে অব্যাহতি দিতে কেন্দ্রে সুপারিশ করা হয়েছে। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদকের পদে রয়েছেন। ওই পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দিতে কেন্দ্রে সুপারিশ করেছে জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগ।
জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমেদ চৌধুরী এক ভিডিও বার্তায় জানান, ডা. মুরাদ হাসান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা দেশের সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের আহত করেছে। এমনকি দেশের সুধীসমাজ আহত হয়েছে। সেজন্য আমরা জামালপুরবাসী লজ্জিত, জামালপুরবাসী দেশবাসীর কাছে লজ্জিত। এ কর্মকাণ্ডের জন্য তাকে ধিক্কার জানাই।
আইএইচআর/এমকেআর/এএসএম