সকাল থেকে সন্ধ্যা কিংবা রাত—যখনই ফোন দেবেন আপনার কাছে পৌঁছে যাবে চা। সময় নিয়ে আর চায়ের দোকানে যেতে হবে না। এতে একদিকে সময়ও বেচে যায় আবার চা-পানের নেশাটাও কাটানো যায়।
Advertisement
বলছিলাম ভ্রাম্যমাণ চা-বিক্রেতা কবিরের কথা। একটা পুরোনো ভ্যাসপা মোটরসাইকেল। যার সামনে বাঁধা দুটি ফ্ল্যাক্স। সিট কভারের নিচে রাখা থাকে ওয়ান টাইম কাপ, চিনি। ফোন পেয়ে মাগুরা শহরের অলিগলিতে এভাবেই চা নিয়ে হাজির হচ্ছেন ভ্রাম্যমাণ চা-বিক্রেতা কবির।
মাগুরার শহরতলী শিবরামপুর গ্রামে স্ত্রী আর দুই সন্তানকে নিয়ে কবির হোসেনের সংসার। করোনার সময় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয় তার চায়ের দোকান। বেচাবিক্রি একদমই কমে যায়। এতে করে সংসার সামলানো ও ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ মেটানো সম্ভব হচ্ছিল না। তখন উপার্জনের ভাবনা থেকেই এক ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগ নেন কবির। কিছু গচ্ছিত আর ধার করা টাকা দিয়ে পুরোনো একটি ব্যাটারিচালিত ভ্যাসপা মোটরসাইকেল ও দুটি ফ্ল্যাক্স সংগ্রহ করে নেমে পড়েন চা বিক্রির কাজে।
চা বিক্রিতে ব্যতিক্রমী উদ্যোগে এরইমধ্যে মানুষের নজর কেড়েছেন কবির। নির্দিষ্ট কোনো দোকান না থাকায় ফেরি করে চা বিক্রি করেন তিনি। তবে ফেরি করে চা বিক্রির ধরন অনেকটাই ভিন্ন। তার চায়ের চাহিদাও রয়েছে ব্যাপক।
Advertisement
কবির হোসেন বলেন, যারা আমার তৈরি চা পান করেন তাদের বেশিরভাগই দোকানি ও ব্যবসায়ী। সময়ের অভাবে তারা তাদের প্রতিষ্ঠান ফেলে চা পান করতে কোথাও যেতে পারেন না। তাই ফোন করে বললে চা নিয়ে হাজির হয়ে যাই।
প্রতিদিন চা বিক্রি করে দিনে ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা আয় হয়। ওই টাকায় সংসারের খরচসহ ছেলের পড়ালেখার খরচ চালান তিনি। কবিরের স্বপ্ন চা বিক্রির টাকায় ছেলেকে ইঞ্জিনিয়ার বানাবেন। তার ছেলে নরসিংদীর একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়াশোনা করছেন।
নিয়মিত চা পান করেন শহরের নতুন বাজারের হোটেল ব্যবসায়ী মেঘা বিশ্বাস। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, দোকান ফেলে চা পান করতে যাওয়ার সময় হয় না। তাই ফোন করলে কবির ভাই চা দিয়ে চলে আসেন। এতে আমার সময় বেচে যায়। তাছাড়া তার চায়ের মানও অনেক ভালো।
শহরের মুদি ব্যবসায়ী অলিভ শিকদার বলেন, মাগুরা শহরে এটা একটা ভিন্নধর্মী উদ্যোগ। যখনই চায়ের প্রয়োজন পড়ে আমরা কবিরকে ফোন দিই। সে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নভাবে চা পরিবেশন করে।
Advertisement
শহরের খন্দকার প্লাজার কাপড় ব্যবসায়ী সজল খন্দকার বলেন, কবির ভাইয়ের চা বিক্রির ব্যতিক্রমী উদ্যোগ আসলেই প্রশংসার দাবিদার।
এসআর/এএসএম