করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ‘ওমিক্রন’ ছড়িয়ে পড়েছে ভারতে। তাই সংক্রমণ রোধে বেনাপোল বন্দরে বাড়তি সতর্কতা বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তবে ছয় দিন অতিবাহিত হলেও দেশের সবচেয়ে বড় এই স্থলবন্দরে চোখে পড়েনি কোনো সুরক্ষাব্যবস্থা। এতে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
Advertisement
বেনাপোল চেকপোস্ট ঘুরে দেখা গেছে- মাস্ক, পিপিই ছাড়া ভারতীয় ট্রাকচালকরা অবাধে ঢুকছে বেনাপোল বন্দরে। তাদের কোনো স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে না। বন্ধ আছে পণ্যবাহী ট্রাকে জীবাণুনাশক স্প্রে কার্যক্রম।
তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছেন, করোনা কমে আসায় স্বাস্থ্যবিধি শিথিল করা হয়েছিল। এরই সুরক্ষাব্যবস্থা জোরদারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে ইমিগ্রেশনে পাসপোর্টধারী যাত্রী যাতায়াতের ক্ষেত্রে থার্মাল স্ক্যানারে শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা আর করোনা নেগেটিভ সনদ গ্রহণের মধ্যে সীমাবদ্ধ আছে স্বাস্থ্য বিভাগের কার্যক্রম। তবে সংক্রমিত দেশ থেকে কেউ এলে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
Advertisement
ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে (২৮ নভেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর) বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ভারতে যাতায়াত করেছেন ১২ হাজার ৬০ জন দেশি-বিদেশি পাসপোর্টযাত্রী। এর মধ্যে ভারতে গেছেন ৬ হাজার ৪০১ জন ও ভারত থেকে এসেছেন ৫ হাজার ৬৫৯ জন। এর আগের সপ্তাহে (২১ নভেম্বর থেকে ২৭ নভেম্বর) পর্যন্ত ভারতে যাতায়াত করেছেন ১১ হাজার ৮০৭ জন পাসপোর্টযাত্রী। এর মধ্যে ভারতে গেছেন ৫ হাজার ৯৯৩ জন ও ভারত থেকে এসেছেন ৫ হাজার ৮১৪ জন।
তবে এখানে বর্তমানে স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় কর্তৃপক্ষের এখনো কোনো পদক্ষেপ না থাকায় ঝুঁকি বাড়ছে ‘ওমিক্রন’ সংক্রমণের। গত তিন মাস আগেও বেনাপোল বন্দরে করোনা সংক্রমণ রোধে জোরদার ছিল সব ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থা। তবে মাঝে সংক্রমণ কমে আসায় সুরক্ষা ব্যবস্থা গুটিয়ে ফেলে বন্দর কর্তৃপক্ষ। কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থাও তুলে দেয় স্বাস্থ্য বিভাগ। বর্তমানে ভারত যাতায়াতকালে ইমিগ্রেশনে পাসপোর্টযাত্রীদের থার্মাল স্ক্যানারে শরীরের তাপমাত্রা নির্ণয় আর করোনা নেগেটিভ সনদ পরীক্ষা করে স্বাস্থ্য বিভাগ।
করোনার নতুন ধরন ‘ওমিক্রন’ সংক্রমণ রোধে দ্রুত সব ধরনের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশি ট্রাক চালক মিন্টু মিয়া জানান, মাস্ক বা পিপিই কিনতে কেউ তাদের সহযোগিতা করেন না। এ খরচ একজন ট্রাকচালকের পক্ষে ব্যয় করা কঠিন।
Advertisement
ভারতীয় ট্রাকচালক দিলীপ কুমার বলেন, আগে পিপিই, মাস্ক ছাড়া বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করা যেত না। এখন কেউ পিপিই বা মাস্ক পরতে বলে না। তাই পড়া হয়নি।
বেনাপোল ইমিগ্রেশন স্বাস্থ্য বিভাগের মেডিকেল কর্মকর্তা আবু তাহের জাগো নিউজকে বলেন, আফ্রিকা মহাদেশ থেকে আগত যাত্রীদের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতার নির্দেশ আছে। যদিও এখনো আফ্রিকা মহাদেশ থেকে কোনো যাত্রী বেনাপোল ইমিগ্রেশন দিয়ে আসেনি। করোনা সংক্রমিত দেশ থেকে ফিরলেই ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে যাত্রীদের। ভারত-বাংলাদেশ পাসপোর্টযাত্রীদের শরীরের তাপমাত্রা নির্ণয় ও করোনা সনদ পরীক্ষা করছে স্বাস্থ্য বিভাগ। বাকি কার্যক্রম এখন পর্যন্ত শিথিল আছে।
ইমিগ্রেশন ও কাস্টমের তল্লাশি কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ মানুষের মুখে মাস্ক নেই। যাদের মাস্ক আছে তা গলায়। ক্যামেরা দেখে অনেককেই মাস্ক পরতে দেখা যায়। তবে ভারত থেকে আসা পাসপোর্টযাত্রীদের মাস্ক পরে আসতে দেখা গেছে। ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস তল্লাশি কেন্দ্র ও প্যাসেঞ্জার টার্মিনালের আশপাশে যারা ভিড় করছে তাদের মুখে কোনো মাস্ক নেই।
বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাজু আহমেদ বলেন, ভারত থেকে আসা প্রত্যেক যাত্রীকে ইমিগ্রেশন কাউন্টারে প্রবেশের আগে মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। যেসব যাত্রী মাস্কবিহীন বাংলাদেশে প্রবেশ করছেন তাদের মধ্যে ফ্রি মাস্ক সরবরাহ করা হচ্ছে।
বেনাপোল স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক (ট্রাফিক) সঞ্জয় বাড়ৈ বলেন, করোনা সংক্রমণ কমে আসায় বন্দরে স্বাস্থ্যবিধি শিথিল করা হয়েছিল। আবারও জোরদারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ভারত থেকে আসা পণ্যবাহী ট্রাকগুলোতে জীবাণুনাশক স্প্রের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললেও চেকপোস্ট আমদানি-রপ্তানি গেটে কোনো ট্রাকে স্প্রে করা হচ্ছে না। ট্রাকচালক ও হেলপারদের মাস্ক ব্যবহার করতে দেখা যায়নি।
মো. জামাল হোসেন/এসজে/জেআইএম