ভ্রমণ

নীলাভ জলে ডলফিন নাচে পর্যটকবরণ

মধ্যদুপুরে সাগরের নীলাভ জলের বুক চিরে ছুটছে স্পিডবোট। কড়া রোদ কিছুটা অসহনীয় হয়ে উঠেছে। যার প্রভাব বোটের যাত্রীদের চোখে-মুখে স্পষ্ট। ক্লান্ত শরীর এলিয়ে কেউ কেউ বোটে ঝিমুচ্ছিলেন। কেউবা রোদ থেকে বাঁচতে চোখ বুজে।

Advertisement

হঠাৎ ভেসে এলো ডলফিন দেখার আহ্বান। অল্প সময়ে পরিচিত হয়ে ওঠা কণ্ঠ। তিনি বলে উঠলেন, ‘এই তোমরা দেখ, একটু এগোলেই ডলফিন দলবেঁধে তোমাদের স্বাগত জানাবে। তোমরা যতো জোরে চিৎকার করবে, ততো বেশি ডলফিন দেখতে পাবে।’

যিনি এ ঘোষণা দিলেন তার নাম চাংকি। পেশায় তিনি একজন ট্যুরগাইড। তার ডলফিন দেখার আহ্বানে সবাই বেশ চনমনে হয়ে উঠলেন। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ঝিমুনি-ক্লান্তি ঝেড়ে নড়েচড়ে বসলেন স্পিডবোটের যাত্রীরা। অথচ কিছুক্ষণ আগেই দুপুরের কড়া রোদের তাপমাত্রায় মাথার ঘিলু গলে সিদ্ধ হওয়ার দশা।

ট্যুর অপারেটর চাংকির ঘোষণার মিনিট খানেক পেরোনোর আগেই চোখের সামনে নীলাভ স্বচ্ছ জলে দেখা মিললো ডলফিনের নাচানাচি। দলবেঁধে তারা লাফিয়ে উঠছে পানি থেকে অনেক উপরে। অভূতপূর্ব এই দৃশ্যে ক্লান্ত পর্যটকরা বিমোহিত।

Advertisement

ক্ষণিকের ঘোর কাটিয়ে তারা ট্যুর অপারেটরের কথামতো শুরু করলেন চিৎকার। পর্যটকরা যতো চিৎকার করেন, ডলফিনও ততো বেশি লাফাতে থাকে। কখনো খুব কাছাকাছি, কখনো কিছুটা দূরে। স্পিডবোটে থাকা পর্যটকদের মুখে তখন, ওই যে ডলফিন, এখানে চলে এসেছে...।

ডলফিনগুলো যেন পর্যটকদের স্বাগত জানাতে স্পিডবোটের গতির চেয়ে আরও বেশি দ্রুতগতিতে প্রতিযোগিতায় নেমে গেলো। নেচে নেচে পর্যটকদের স্বাগত জানালো তারা।

পর্যটনে বিশ্বের নাম্বার ওয়ান মালদ্বীপের ডলফিন পয়েন্টে দেখা গেলো এমন দৃশ্য। ওয়ার্ল্ড ট্যুরিজমের খেতাবপ্রাপ্ত মালদ্বীপের ডলফিন পয়েন্টের দৃশ্য চোখ জুড়িয়ে যায়। এই ভালো লাগার অনুভূতি হয়তো পুরোপুরি ভাষায় প্রকাশ সম্ভব হবে না।

ভারত মহাসাগরে অবস্থিত মালদ্বীপে রয়েছে সহস্রাধিক দ্বীপ। ‘ওয়ান আইল্যান্ড ওয়ান রিসোর্ট’ অর্থাৎ প্রতিটি দ্বীপে একটি করে রিসোর্ট গড়ে উঠেছে এখানে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ভ্রমণপিপাসু ও ধনাঢ্য ব্যক্তিরা মালদ্বীপে ঘুরতে আসেন নিয়ম করে। অবসরের ফাঁকে তাদের সময় কাটানোর সবচেয়ে পছন্দের জায়গা হয়ে উঠেছে দ্বীপগুলো।

Advertisement

আহমেদ সিরাজ নামে আরেকজন ট্যুরগাইড জানান, মালদ্বীপের রিসোর্টগুলোর একেকটির ভাড়া প্রতিদিন সর্বনিম্ন এক হাজার ডলার থেকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার ডলার।

তিনি জানান, ৫০ হাজার ডলার ভাড়ার রিসোর্টটি সমুদ্রের তলদেশে গড়ে তোলা হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ধনাঢ্য ব্যক্তিরা মালদ্বীপে আসলে এসব রিসোর্টে ওঠেন। ভাড়া আকাশচুম্বী হলেও সমুদ্রের তলদেশের রিসোর্ট খালি পাওয়া কষ্টসাধ্য। সব সময়ই বুকড থাকে।

রিসোর্টগুলোতে কেউ কেউ পৌঁছান ভাড়া করা ছোট প্লেনে। শনিবার মহাসাগর ঘুরে বেড়ানোর সময় মাথার ওপর দিয়ে কিছুক্ষণ পর পর ছোট ছোট প্লেন বিভিন্ন রিসোর্টে ছুটে যেতে দেখা যায়।

স্পিডবোটে ঘুরে বেড়ানোর সময় দ্বীপগুলোতে বিভিন্ন ধরনের রিসোর্ট চোখে পড়ে। সমুদ্রের বুকে নীলাভ পানিবেষ্টিত দ্বীপগুলোকে মনে হয় যেন, একেকটি সাজানো বাগান। সারি সারি নারিকেল গাছসহ সাজানো গোছানো গাছপালা চোখে পড়ে।

মালদ্বীপের অধিকাংশ রিসোর্ট বেসরকারি মালিকানায় পরিচালিত হয়। পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে যা যা প্রয়োজন, তা করতে রিসোর্ট মালিকরা কার্পণ্য করেন না। সরকারি হস্তক্ষেপ না থাকায় মালদ্বীপের ট্যুরিজম জনপ্রিয়তা লাভ করেছে বলে জানান ট্যুরগাইডে ক্যারিয়ার গড়া আহমেদ সিরাজ।

এমইউ/এএএইচ/এমএস