খেলাধুলা

নির্মাণ ক্রিকেট ফিরিয়ে আনতে চান তামিম

বাংলাদেশের ক্রিকেটে আজ যে সাফল্য তার পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান নির্মাণ স্কুল ক্রিকেটের। এক সময় সারাদেশব্যাপি প্রায় সবগুলো স্কুল নিয়ে অনুষ্ঠিত হতো নির্মাণ স্কুল ক্রিকেট। যে কারণে দেশব্যাপি ক্রিকেটের গণজাগরন এবং ওখান থেকেই খেলাটির এত জনপ্রিয়তা। ক্রিকেটার তৈরীর কারখানায় পরিণত হয়েছিল নির্মাণ স্কুল ক্রিকেট; কিন্তু যেই না দেশে ক্রিকেট নিজেদের একটা অবস্থান তৈরী করে নিল, তখনই হারিয়ে গেছে নির্মাণ স্কুল ক্রিকেট।ক্রিকেটার তৈরীর সেই কারখানাই আবার চালু করার উদ্যোগ নিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের ওপেনার তামিম ইকবাল খান। তার বাবার নামে অনুর্ধ্ব-১৩, অনুর্ধ্ব-১৫ এবং অনুর্ধ্ব-১৮ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে যাচ্ছেন চট্টগ্রামে। নাম হবে ইকবাল মেমোরিয়াল ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। চট্টগ্রাম থেকে পর্যায়ক্রমে বয়সভিত্তিক এই টুর্নামেন্টটি তামিম ছড়িয়ে দিতে চান সারা দেশে। যদিও ভেন্যু হবে চট্টগ্রাম। দেশের প্রত্যেকটি একাডেমীকে আমন্ত্রণ জানিয়ে নিয়ে আসা হবে চট্টগ্রামে। তামিমের ইচ্ছা, নির্মাণ স্কুল ক্রিকেটের মতই সাড়া জাগাতে সক্ষম হবে তার এই টুর্নামেন্ট। শুধু সাড়া জাগানোতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, মানসম্মত একটি টুর্নামেন্ট আয়োজন করার পর এখান থেকে প্রতিভাবান ক্রিকেটার উঠে আসবে বলেও বিশ্বাস করেন তামিম ইকবাল। আবার এই টুর্নামেন্টের মাধ্যমে একটা স্লোগানও তুলে ধরা হবে সবার মাঝে। সেটা হলো, ‘সে নো টু ড্রাগ, ইয়েস টু ক্রিকেট।’প্রাণ-ফ্রুটো বিএসজেএ মিডিয়া কাপ ক্রিকেটের ড্র অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে চট্টগ্রামে তার নিজের উদ্যোগে অনুষ্ঠিতব্য বয়স ভিত্তিক ক্রিকেট টুর্নামেন্ট নিয়ে নিজের স্বপ্নের কথা জানান তামিম ইকবাল। তামিমের কাছে তার টুর্নামেন্টের সর্বশেষ অবস্থার কথা জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘আমি এই টুর্নামেন্টের ঘোষণা দিয়েছিলাম বেশ কিছুদিন আগে। এখন এটা নিয়ে একটা পেশাদার ইউনিট কাজ করছে। আমরা তিনটা টুর্নামেন্ট করতে যাচ্ছি ইনশাআল্লাহ। অনুর্ধ্ব-১৩, অনুর্ধ্ব-১৫ এবং অনুর্ধ্ব-১৮। অনুর্ধ্ব-১৮ টুর্নামেন্ট নিয়ে আমি খুব উত্তেজিত। কারণ, এটা ২দিনের টুর্নামেন্ট এবং ফাইনালটা হবে তিনদিনের। ঘরোয়া ক্রিকেটে তরুণ ক্রিকেটাররা এমন সুযোগ খুব কম পায় যে দু’দিনের ম্যাচ খেলবে। অনুর্ধ্ব-১৩ এবং অনুর্ধ্ব-১৫ হবে ৩০ ও ৪০ ওভারের টুর্নামেন্ট। তো এটার লক্ষ্য একটাই, চট্টগ্রামের ক্রিকেটকে উন্নত করা। চট্টগ্রামের ক্রিকেটকে এগিয়ে নেয়া, ক্রিকেটার তুলে নিয়ে আসা।’একটা মানসম্পন্ন টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হবে জানিয়ে তামিম বলেন, ‘টুর্নামেন্ট তো অনেকই হয়। কিন্তু আমি চাই যে, এই টুর্নামন্টের একটা মূল্য থাকবে। যখন বাংলাদেশ দলের জন্য কিংবা বিপিএলের জন্য খেলি, তখন বিপিএল কিংবা জাতীয় দলের একটা মূল্য থাকে। আমি জানি যে এখানে (বিপিএলে) ভালো খেললে আমার নিজের জন্য ভালো এবং এগুলো গোনায় ধরা হবে। এই টুর্নামেন্টটাকে আমি সেভাবে তৈরী করতে চাই যে, যখনই এখানে যারা খেলবে তারা যেন মনে করে যে মানসম্পন্ন একটি টুর্নামেন্টে খেলছে তারা।’কিভাবে মূল্যবান একটি টুর্নামেন্ট করবেন তামিম? সে ব্যাখ্যা দিলেন তিনি। বললেন, ‘আন্তর্জাতিক নিয়ম-নীতিগুলো এখানে বাস্তবায়ন করা। আমরা দেখি যে ২০ ওভারের ম্যাচ খেলতে গিয়ে অনুর্ধ্ব-১৩’র একটি টুর্নামেন্টে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা সময় লেগে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে সিনিয়ররা যদি ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট সময় পায়, তাহলে তারাও পাবে সমান সময়। এছাড়া যখন বাংলাদেশের জার্সি দিয়ে, আপনার নাম লিখে দেয়া হয় তাহলে নিশ্চয় তার মূল্য হবে আপনার কাছে অনেক বেশি। সেভাবে শিশু-কিশোর ক্রিকেটারদের জার্সিতে নাম লিখে, স্পন্সরের লোগো লাগিয়ে দিলে তাদের কাছে এর মূল্য অনেক বেড়ে যাবে। এসবই অনেক কিছু যোগ করা হবে টুর্নামেন্টে। এর কার্যক্রমও বেশ জোরালো গতিতে এগিয়ে চলছে। অনুর্ধ্ব-১৩ এবং ১৫’য় ৮টি করে দল এবং অনুর্ধ্ব-১৮’য় ৬টি দল অংশ নেবে।’প্রশ্ন হলো এ ধরনের উদ্যোগ তো ক্রিকেট থেকে বের হয়ে, অবসর নেয়ার পর। কিন্তু এখনই কেন উদ্যোগটা নিচ্ছেন তামিম? জবাবে তিনি বলেন, ‘ক্রিকেট তো আসলে অনেককে অনেক কিছু দেয়। আমাকেও অনেক কিছু দিয়েছে। আমারও দায়িত্ব আছে দেশের জন্য, দেশের ক্রিকেটের জন্য কিছু করার। এছাড়া আমার আব্বা কতটা স্পোর্টস পাগল ছিলেন তা আপনারা সবাই জানেন। তাকে কেন্দ্র করে এই টুর্নামেন্ট আয়োজনের চিন্তা আসে আমার মাথায়। এছাড়া যখন জাতীয় লিগ খেলতে যাই, তখন আমার চট্টগ্রামে মানের ক্রিকেটারের অভাবটা বেশ ভালোভাবে টের পাই। কোন জায়গায় আমাদের ঘাটতি আছে সেটা বুঝতে পারি। সেই ঘাটতিটা কিন্তু অনেক বড়। সে ক্ষেত্রে চট্টগ্রামের ক্রিকেট তুলে নিয়ে আসার জন্য আমি নিজের মধ্যেই দায়িত্ববোধটা টের পাই।’নির্মান স্কুলের মত নিজের টুর্নামেন্টকে দেশব্যাপি ছড়িয়ে দেওয়ার স্বপ্নের কথা জানিয়ে তামিম বলেন, ‘যদিও প্রথমদিকে টুর্নামেন্টটা চট্টগ্রাম ভিত্তিক করার চিন্তা করছি; কিন্তু আমার ইচ্ছা রয়েছে- এই টুর্নামেন্টটাকে পুরো দেশে ছড়িয়ে দেয়ার। আমার পরিকল্পনা হচ্ছে নির্মাণ স্কুল ক্রিকেটের মত। আমরা সব সময় শুনতাম নির্মাণ স্কুলের কথা। আপনি যদি প্রতি এলাকায়, প্রতি বাসায় গিয়ে খোঁজ করেন, তাহলে দেখতে পাবেন কেউ না কেউ নির্মাণ স্কুল ক্রিকেট খেলে বড় হয়েছে। ওই জিনসটা এখন বাংলাদেশ ক্রিকেটে মিস করতেছি। তবে এটা অনেক লম্বা একটি পথ। আমরা মাত্র শুরু করছি। তবে এমন একটা কিছু করতে চাই, যে ছোট শিশু কিংবা কিশোর এবং তাদের অভিভাবকরা মনে করবে যে- না এই টুর্নামেন্টে আমরা খেলতে চাই। এখানে খেললে ভালো কিছু করা সম্ভব হবে। আর ভালো খেললে তো ভালো সুযোগ চলে আসবেই।’   আইএইচএস/আরআইপি

Advertisement