ক্ষুধায় পেটে আগুন জ্বলছে। শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টা বাজলেও পেটে কিছু পড়েনি তখনও। বেসরকারি এয়ারলাইন্স ইউএস বাংলার আমন্ত্রণে মালদ্বীপ সফরে যাওয়ার জন্য হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ৩ নম্বর টার্মিনালের ভেতরে দাঁড়িয়ে বেসরকারি একটি টেলিভিশনের ক্যামেরাম্যানের হেলথ কার্ড মালদ্বীপের ইমিগ্রেশনে দেওয়ার জন্য অনলাইনে পূরণ করছি। যদিও নিজেরটা বৃহস্পতিবারই অনলাইনে দেওয়া লিংকে প্রবেশ করে প্রয়োজনীয় কাজ করে রেখেছিলাম। কিন্তু একজন রিপোর্টার সহকর্মী ও বেসরকারি টেলিভিশনের ওই ক্যামেরাম্যানকে সাহায্য করতে গিয়ে নাস্তা করা হয়ে ওঠেনি। সে গল্পে পরে আসছি।
Advertisement
যাচ্ছি মালদ্বীপ। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের আমন্ত্রণে দুই রাত-তিন দিনের সফর। বিভিন্ন গণমাধ্যমের বিশাল দল। বেলা পৌনে ১১টায় ফ্লাইট ছাড়ার সিডিউল থাকলেও সকাল ৮টায় শাহজালাল বিমানবন্দরে হাজির থাকতে হবে এমন অনুরোধ ‘মালদ্বীপ ট্যুর’ নামে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের অ্যাডমিন ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক জনসংযোগ কামরুল ইসলামের। রাতে একদফা লাগেজ গোছানোসহ প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করতে করতে মধ্যরাতে ঘুমাতে যাই। তিন-চার ঘণ্টা ঘুমিয়ে উঠে ফজরের নামাজ আদায় করে আবার ফাইনাল চেক করে রেডি। নাস্তা করার সময় থাকলেও এয়ারপোর্টে ইউসিবি ব্যাংকের লাউঞ্জে নাস্তা করার সুযোগ (ক্রেডিট কার্ড) থাকায় ইচ্ছে করে বাসা থেকে নাস্তা করে আসিনি। কিন্তু সব ইচ্ছা পূরণ হয় না, এটাই বাস্তবতা। দুই সহকর্মীর হেলথ কার্ড পূরণ করার অনুরোধের ঢেকি গিলতে গিয়ে নাস্তা না সেরেই উঠতে হয় বিমানে।
মালদ্বীপ সফরে বিভিন্ন প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ার ৮৭ জনের বিশাল গ্রুপ। করোনার কারণে গত কয়েকদিন যাবৎ প্রস্তুতি নিতে হয়েছে। ১ ডিসেম্বর (যাত্রার ৪৮ ঘণ্টা আগে) করোনা টেস্টের জন্য নমুনা দেওয়া, নেগেটিভ রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা, ৪ কপি করে করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট, পাসপোর্ট সাইজের ছবি, পাসপোর্ট এবং ভ্যাকসিন কার্ড ফটোকপি, প্রিন্ট করা ইত্যাদিসহ সামগ্রিক প্রস্তুতি গ্রহণ করতে করতে কমবেশি সবাই ক্লান্ত। ফলে বিমানে উঠেই ক্লান্তিতে সবার একদফা ঘুম।
ঢাকা থেকে মালদ্বীপে যেতে সময় লাগলো চার ঘণ্টা। যাত্রার আগে অনেক ভেবেছিলেন হয়তো বড়জোর ঘণ্টা দুয়েক লাগবে। বিমান ছাড়ার ঘণ্টাখানেক পর বিমানবালা প্রথম দফায় নাস্তা নিয়ে আসতেই প্রথম দফায় সবাই চাঙা হয়। এরও ঘণ্টাখানেক পর আসে লাঞ্চ। বিমানবালাকে জিজ্ঞাসা করে জানা যায় করোনার ঝুঁকিজনিত কারলে অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রীদের খাবার দেওয়া বন্ধ থাকলেও আন্তর্জাতিক রুটে খাবার দেওয়া হচ্ছে।
Advertisement
সফরের বেশিরভাগ সদস্যের মালদ্বীপ প্রথম যাওয়া, তাই সবার মধ্যে সারাক্ষণই এক ধরনের উৎসাহ, উদ্দীপনা ও কৌতূহল দেখা যায়। ‘আমরা ৩০ মিনিটের মধ্যে ইনশাল্লাহ মালদ্বীপে অবতরণ করতে যাচ্ছি।’
পাইলটের এমন ঘোষণা আসতেই জানালা দিয়ে অনেককেই মালদ্বীপ দেখার জন্য উঁকিঝুঁকি মারতে দেখা যায়। এ যেন কিশোর বয়সে প্রথম ভালোবাসার মানুষটাকে কাছে থেকে দেখার অনুভূতি। মালদ্বীপের রাজধানী মালের যে এলাকায় গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য হোটেল বরাদ্দ করা হয়েছে সে এলাকার নাম হুল হুমালে। তাই জানালা দিয়ে তাকিয়ে অনেকেই ঐ যে হুল হুমালে দেখা যায় বলে চিৎকার করে ওঠে। বিমানবন্দরে জটলা থাকায় বিমান আধঘণ্টার স্থলে আরও বেশ কিছুক্ষণ আকাশে চক্কর মারতে থাকে। এ সময় সবাই মালদ্বীপের বিমানবন্দরে নামার অপেক্ষায় থাকে।
এমইউ/ইএ/এসএইচএস/এমএস
Advertisement