সালতামামি

পরিসংখ্যানে ২০১৫ সালে বাংলাদেশের ক্রিকেট

স্বপ্নের মত একটা বছর কাটল বাংলাদেশ ক্রিকেটের। ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলে পুরো বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে টাইগার ক্রিকেটাররা। ওয়ানডে ক্রিকেটে সাফল্য ছিল রীতিমত ঈর্ষনীয়। বিদেশি কন্ডিশনে ইংল্যান্ডের মতো পরাশক্তিকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে বিস্ময় উপহার দেয় বাংলাদেশ। পক্ষপাতমূলক আম্পায়ারিং না হলে সেমিফাইনালেও খেলা অসম্ভব ছিল না বাংলাদেশের। এরপর দেশের মাটিতে পাকিস্তানকে ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ। ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার মত দৈত্য বধ। কি ছিলনা এই একটি বছরে!

Advertisement

যদিও পরিসংখ্যানের বিচারে ২০১৫ এর সাফল্য তালিকায় কিন্তু প্রথম হতে পারেনি। ২০০৯ সালে ১৯ ওয়ানডে খেলে ১৪টি জয় পায় বাংলাদেশ। জয়ের হার ছিল ৭৩ শতাংশ। আর এ বছর ১৮ ওয়ানডের মধ্যে জয় ১৩টিতে। জয়ের হার ৭২ শতাংশ। তবে পরিসংখ্যান যাই বলুক না কেন, পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার মত দলকে মাটিতে নামিয়ে দাপুটে জয় তুলে নেওয়ায় ২০১৫-এর ধারে কাছেও নেই পূর্বের কোন সাফল্য। এই বছরে বাংলাদেশের চেয়ে বেশি সাফল্য রয়েছে একমাত্র বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার। ২০১৫ সালে ১৯টি ওয়ানডে খেলে অসিরা জিতেছে ১৫টি ম্যাচে। সাফল্যের হার ৮৩.৩৩ ভাগ।

তবে ওয়ানডের সাফল্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারেনি বাংলাদেশের টেস্ট এবং টি-টোয়েন্টি। এ বছর পাঁচটি টেস্ট খেলে কোন জয় না পেলেও হার মেনেছে মাত্র একটিতে। ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বৃষ্টির আশীর্বাদে টেস্ট ড্র হলেও পাকিস্তানের বিপক্ষে তামিম ইকবাল-ইমরুল কায়েসের বীরত্বপূর্ণ ব্যাটিংয়েই খুলনা টেস্টে ড্র করেছিল টাইগাররা। আর টি-টোয়েন্টিতে পাঁচ ম্যাচে দুই জয়ের বিপরীতে রয়েছে তিনটি হার। তবে মধ্যে পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়টি ছিল মনে রাখার মত একটি ঘটনা।

চলতি বছরে টেস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৫৫৫ রান ছিল দলীয় সর্বোচ্চ স্কোর। একই সিরিজে দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে এ বছরের দলীয় সর্বনিম্ন রান ছিল ২০৩। পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে তামিম ইকবালের করা ২০৬ রান টেস্টে বাংলাদেশের কোন ব্যাটসম্যানের মাধ্যে সর্বোচ্চ ব্যাক্তিগত সংগ্রহ।

Advertisement

ওয়ানডেতে দলীয় সর্বোচ্চ সংগ্রহটিও পাকিস্তানের বিপক্ষে। প্রথম ওয়ানডেতে করা ৩২৯ রান এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের দলীয় সর্বোচ্চ রান। দলীয় সর্বনিম্ন রান এসেছিল দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। প্রথম ওয়ানডেতে ১৬৯ অলআউট হয় বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টিতেও সর্বোচ্চ সংগ্রহ পাকিস্তানের বিপক্ষে। একমাত্র ম্যাচে ১৪১ রানের জবাবে ১৪৩ রানই এ বছরের দলীয় সর্বোচ্চ স্কোর। আর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৯৬ রান ছিল সর্বনিম্ন।

২০১৫ সালে বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রান করেছেন মুশফিকুর রহিম। ১৮ ম্যাচে ১৬ ইনিংস ব্যাট করে ৫১.১৩ গড়ে করেছেন ৭৬৭ রান। এর মধ্যে সেঞ্চুরি ২টি এবং হাফ-সেঞ্চুরি ৪টি। মুশফিকের চেয়ে দুই ইনিংস বেশি ব্যাট করে দ্বিতীয় সংগ্রাহক তামিম ইকবাল। ৪৬.৩৭ গড়ে করেছেন ৭৪২ রান, সেঞ্চুরি হাকিয়েছেন ২টি এবং হাফ-সেঞ্চুরি ৫টি। তবে ১৮ ইনিংসের মধ্যে ২ ইনিংসে ডাক মেরেছেন তিনি। পক্ষান্তরে মুশফিক একটিও ডাক মারেননি।

তবে ওয়ানডের মতো টেস্টে সে সাফল্যের ধারাবাহিকতা রাখতে পারননি মুশফিকুর রহিম। টেস্ট ক্রিকেট এই বছর সবচেয়ে বেশি রান করেছেন ইমরুল কায়েস। ৮ ইনিংসে একটি সেঞ্চুরি ও   ২টি হাফসেঞ্চুরির সাহায্যে তার সংগ্রহ ৩৮৪ রান। টি-টোয়েন্টিতে ৫ ম্যাচে ৯১ রান নিয়ে চলতি বছরের সেরা সংগ্রাহক সাব্বির রহমান।

বোলিংয়ে ২০১৫ সালের ওয়ানডেতে সেরা বোলার এ বছরেই অভিষেক হওয়া বিস্ময়বালক মুস্তাফিজুর রহমান। ৯টি ওয়ানডে খেলে ২৬টি উইকেট নিয়ে সর্বোচ্চ শিকারি হচ্ছেন এই পেসার। এর মধ্যে ৫টি করে উইকেট নিয়েছেন ৩ বার। ওয়ানডের পাশাপাশি টি-টোয়েন্টিতেও সেরা মুস্তাফিজ। ৫টি ম্যাচ খেলে ৬টি উইকেট নিয়েছেন তিনি। তবে টেস্টে বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল বোলার তাইজুল ইসলাম। ৬ ইনিংসে বল করার সুযোগ পেয়ে ১১ উইকেট নিয়েছেন এই স্পিনার।

Advertisement

চলতি বছরে বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডেতে সর্বাধিক বাউন্ডারি মেরেছেন সৌম্য সরকার। ৮৮টি চার এবং ১৫টি ছক্কাসহ মোট ১০৩বার বলকে বাউন্ডারির বাইরে নিয়েছেন তিনি। স্ট্রাইক রেট ১০২.২৮। এরপর ৮৯টি চার এবং ১০টি ছক্কাসহ মোট ৯৯টি বাউন্ডারি মেরে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন তামিম ইকবাল। তার স্ট্রাইক রেট ৮১.৬২। ৭৩টি চার এবং ১১টি ছক্কাসহ মোট ৮৪টি বাউন্ডারি মেরে পরে থাকলেও ১০১.৫৮ স্ট্রাইক রেট নিয়ে তামিমের উপরেই রয়েছেন মুশফিক।

২০১৫ সালে ওয়ানডেতে পাঁচ সেরা ব্যাটসম্যান

ব্যাটসম্যান

ম্যাচ

ইনিংস

রান

সর্বোচ্চ

গড়

স্ট্রাইক রেট

শ/ অ.শ.

মুশফিকুর রহিম

১৮

১৬

৭৬৭

১০৭

৫১.১৩

১০১.৫৮

২/৪

তামিম ইকবাল

১৮

১৮

৭৪২

১৩২

৪৬.৩৭

৮১.৬২

২/৫

সৌম্য সরকার

১৫

১৫

৬৭২

১২৭*

৫১.৬৯

১০২.২৮

১/৪

মাহমুদউল্লাহ

১৫

১৪

৫০৬

১২৮*

৩৮.৯২

৭৮.২০

২/৩

সাকিব আল হাসান

১৬

১৪

৪২১

৬৩

৪২.১০

৮৯.৯৫

০/৪

শ : শতক, অ.শ: অর্ধশতক

২০১৫ সালে টেস্টে পাঁচ সেরা ব্যাটসম্যান

ব্যাটসম্যান

ম্যাচ

ইনিংস

রান

সর্বোচ্চ

শ/ অ.শ.

ইমরুল কায়েস

৩৮৪

১৫০

১/২

তামিম ইকবাল

৩৭৫

২০৬

১/১

সাকিব আল হাসান

২৯৪

৮৯*

০/২

মুমিনুল হক

২৫৮

৮০

০/২

মাহমদুউল্লাহ

২২১

৬৭

০/১

২০১৫ সালে ওয়ানডেতে পাঁচ সেরা বোলার

বোলার

ম্যাচ

ওভার

মেডেন

রান

উইকেট

সেরা

ইকোনোমি

৪/৫

মুস্তাফিজুর রহমান

৭৫.২

৩২১

২৬

৬/৪৩

৪.২৬

০/৩

সাকিব আল হাসান

১৬

১৪৪

৬৬৪

২৪

৫/৪৭

৪.৬১

১/১

মাশরাফি বিন মর্তুজা

১৬

১৩২

৬৯২

২১

৩/২০

৫.২৪

০/০

রুবেল হোসেন

১৪

১০৮.৩

৬১৩

১৮

৪/৫৩

৫.৬৪

১/০

নাসির হোসেন

১৫

৯৮.১

৪২৬

১৬

৩/২৬

৪.৩৩

০/০

২০১৫ সালে টেস্টে পাঁচ সেরা বোলার

বোলার

ম্যাচ

ইনিংস

ওভার

উইকেট

সেরা

ইকোনোমি

৫/১০

তাইজুল ইসলাম

১৪৭.৪

১১

৬/১৬৩

৪.২৬

১/০

সাকিব আল হাসান

১১৮.৩

৪/১০৫

৪.৬১

০/০

জুবায়ের হোসেন

৩৫.১

৩/৫৩

৫.২৪

০/০

মোহাম্মদ শহীদ

১০৫

২/২৩

৫.৬৪

০/০

শুভাগত হোম চৌধুরী

৬৬

২/৭৬

৪.৩৩

০/০

আরটি/আইএইচএস