বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য বিষয়ক সংকটগুলোর একটি হলো এইডস। এই মারণব্যাধি জন্য দায়ী এইচআইভি ভাইরাস। ইউএনএইডস-এর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ৩৪ মিলিয়ন মানুষ এইডস আক্রান্ত।
Advertisement
প্রতিদিন এইডসে গড়ে আক্রান্ত হচ্ছেন সাড়ে ৫ হাজার মানুষ। এ পর্যন্ত প্রায় ৩৫ মিলিয়ন মানুষ এ প্রাণঘাতী রোগে মারা গেছেন।
১৯৮০ সালে প্রথম এই ভাইরাস ছড়াতে শুরু করে বলে জানা যায়। সে সময় থেকে এটি নিয়ে বিচিত্র সব ধারণা তৈরি হতে থাকে যার অনেকগুলোই একেবারে ভ্রান্ত। জেনে নিন এইডস সম্পর্কিত যত ভুল ধারণা-
>> ‘এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্তদের সঙ্গে মেলামেশা করলেই এ রোগ ছড়ায়’-এমন ধারণা ঠিক নয়। তবে বিজ্ঞানীদের মতে, এটি কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়। একই বাতাসে নিশ্বাস নিলে, হাত মেলালে, জড়িয়ে ধরলে, চুমু খেলে, একই পাত্রে খাবার খেলে কিংবা পানি খেলেও আক্রান্তের সম্ভাবনা থাকে না।
Advertisement
এমনকি ব্যক্তির ব্যবহৃত সামগ্রী ব্যবহার করলে বা তার ব্যবহৃত টয়লেট ব্যবহার করলে আপনিও এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত হবেন না। এটি যে ছোঁয়াচে না সেই ধারণা দূর করতেই, ১৯৯১ সালে রাজকুমারী ডায়ানা এইচআইভি পজিটিভ ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করেছিলেন।
>> এইডসের নিরাময় নিয়ে প্রচলিত কিছু মিথ জেনে নিন- আফ্রিকার কিছু দেশ, ভারত ও থাইল্যান্ডে অনেকের বিশ্বাস তৈরি হয়েছিলো যে, এইডসে আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে কুমারী মেয়ের যৌন মিলন ঘটালে এই ভাইরাস দূর হয়ে যায়। যা একেবারেই ভুল ধারণা।
এ বিশ্বাসের কারণে একসময় কুমারীদের ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ১৬শ শতকে ইউরোপে সিফিলিস ও গনোরিয়া আক্রান্ত হলে একই ধরনের বিশ্বাস প্রচলিত ছিল।
>> অনেকেরই ধারণা আছে, ‘মশা দ্বারাও ছড়াতে পারে এইচআইভি ভাইরাস’- এটিও ভুল ধারণা। যদিও রক্তদ্বারা এই ভাইরাস ছড়ায় কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, মশা বা রক্ত খায় এমন কিট দ্বারা আপনি আক্রান্ত হবেন না।
Advertisement
তার দুটি কারণ। একটি হলো একজনের শরীর থেকে রক্ত খেয়ে সে সেই রক্ত দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তির শরীরে ইনজেকশন দেওয়ার মতো করে রক্ত ঢুকিয়ে দেয় না। আর মশা বা অন্য কিটের শরীরে এই জীবাণু খুব সামান্য সময়ই বেঁচে থাকে।
>> যৌন মিলনের পর গোসল করলে এইচআইভি ভাইরাস পরিষ্কার হয়, এই ধারণাও একেবারেই ভুল।
>> কনডম ব্যবহার করলেই যে এইচআইভি আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকবে না, এ ধারণাও ভুল। কারণ যৌন মিলনের সময় কনডম ছিদ্রও হতে পারে। তাই শুধু কনডম ব্যবহার নয় বরং নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতি চারজন ব্যক্তির অন্তত একজন জানেন না যে তার এই ভাইরাস আছে। যাদের সংখ্যা এক কোটি। সে হয়তো নিজের অজান্তেই অন্যকে আক্রান্ত করছে।
>> এইচআইভিতে আক্রান্তরা অল্প বয়সে মারা যায়- এ ধারণাটিও ভুল। বর্তমানে নানা ধরনের চিকিৎসার মাধ্যমে এইচআইভি পজিটিভ ব্যক্তিও দীর্ঘদিন সুস্থ জীবনযাপন করতে পারছেন।
জাতিসংঘের এইডস বিষয়ক সংস্থা বলছে, আক্রান্তদের মধ্যে ৪৭ শতাংশের ক্ষেত্রে এইচআইভি জীবাণুর মাত্রা নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় আছে।
>> প্রচলিত ধারণা হচ্ছে আক্রান্ত নারী সন্তান জন্ম দিলে তার শিশুরও শরীরে এই জীবাণু চলে যাবে। তবে সব সময় এমনটি ঘটে না।
আক্রান্ত মায়ের শরীরের জীবাণুর মাত্রা যদি নিয়ন্ত্রণে থাকে তাহলে সন্তান জন্মদানের সময় সে শিশুকে আক্রান্ত নাও করতে পারে।
>> অনেকে মনে করেন, যেহেতু কোনো লক্ষণ নেই তাই কোন লক্ষণ দেখা না দিলে এইচআইভি আক্রান্ত নন এটিও ভুল ধারণা।
এই জীবাণুতে আক্রান্ত হওয়ার পরও একজন ব্যক্তির শরীরে দীর্ঘদিন কোনো ধরনের লক্ষণ নাও দেখা দিতে পারে। এ কারণে অজান্তেই একজন আক্রান্ত ব্যক্তি ১০-১৫ বছরও বেঁচে থাকতে পারেন।
সূত্র: বিবিসি
জেএমএস/এমএস