ফিচার

যে কারণে পালিত হয় বিশ্ব এইডস দিবস

মরণঘাতী রোগগুলোর মধ্যে এইডস অন্যতম। বিশ্ব জুড়ে আজ পালিত হচ্ছে এইডস দিবস। ২০১৭ সালের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী এইডসে ২৮.৯ মিলিয়ন থেকে ৪১.৫ মিলিয়ন মানুষ মারা গেছে। যার মধ্যে শিশুও রয়েছে।

Advertisement

ইউএনএইডস-এর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ৩৪ মিলিয়ন মানুষ এইডস আক্রান্ত। প্রতিদিন গড়ে আক্রান্ত হচ্ছেন সাড়ে ৫ হাজার। এ পর্যন্ত প্রায় ৩৫ মিলিয়ন মানুষ এ প্রাণঘাতী রোগে মারা গেছেন।

এইডস বা এইচআইভি "মানব প্রতিরক্ষা অভাবসৃষ্টিকারী ভাইরাস" নামক ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট একটি রোগলক্ষণসমষ্টি। এই রোগ সম্পর্কে বিশেষভাবে সচেতন করার জন্যই এই দিন পালন করা হয়। যা মানুষের দেহে রোগ-প্রতিরোধের ক্ষমতা বা প্রতিরক্ষা হ্রাস করে।

১৯৮৮ সাল থেকে প্রতি বছর এইডস দিবস হিসেবে ১ ডিসেম্বর দিনটিকে বেছে নেওয়া হয়েছে। এইচআইভি সংক্রমণের জন্য এইডস মহামারি ছড়িয়ে পড়ার বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে এবং যারা এই রোগে মারা গেছেন তাদের প্রতি শোক পালন করতে এই দিনটিকে বেছে নেওয়া হয়েছে।

Advertisement

সরকারি ও স্বাস্থ্য আধিকারিকগণ, বেসরকারি সংস্থাগুলো এবং বিশ্বে বিভিন্ন ব্যক্তি, এইডস প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সকলকে সচেতন করতে এই দিনটি পালন করে থাকে।

সুইজারল্যান্ডের জেনেভাতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় এইডস সম্পর্কিত বিশ্ব কর্মসূচির দুজন জনতথ্য কর্মকর্তা জেমস ডব্লু বুন এবং টমাস নেটটার দ্বারা ১৯৮৭ সালের আগস্টে প্রথম বিশ্ব এইডস দিবসের পরিকল্পনা করা হয়েছিল।

বিশ্ব এইডস দিবসের ২০২১ এর প্রতিপাদ্য হচ্ছে, ‘সমতার বাংলাদেশ এইডস ও অতিমারি হবে শেষ’। প্রথম দুই বছর বিশ্ব এইডস দিবসের প্রতিপাদ্য তৈরি করা হয়েছিল শিশু এবং তরুণদের লক্ষ্য করে। তবে পরবর্তীতে তা আবার সংশোধন করা হয়।

নথিভুক্ত ইতিহাস অনুযায়ী বিশ্বব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ অন্যতম জনস্বাস্থ্য বিষয় হিসাবে পরিণত হয়েছে। বিশ্বের অনেক অঞ্চলে সাম্প্রতিক উন্নত অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল চিকিৎসা পৌঁছোনোর ফলে, ২০০৫ সালে সর্বোচ্চ সংখ্যায় মৃত্যুর পর এইডস মহামারিতে মৃত্যুর হার কিছুটা কমেছে (২০১৬ সালে ১ মিলিয়ন, যেখানে ২০০৫ সালে ছিল ১.৯ মিলিয়ন)।

Advertisement

১৯৯৬ সালে এইচআইভি / যৌথ জাতিসংঘের এইডস সম্পর্কিত কর্মসূচি (ইউএনএআইডিএস) চালু হয়েছিল, এবং এটি বিশ্ব এইডস দিবসের পরিকল্পনা ও প্রচারের দায়িত্ব অধিগ্রহণ করে। শুধু একটি দিনে মনোযোগ না দিয়ে, আনএইডস ১৯৯৭ সালে বছরব্যাপী যোগাযোগ, প্রতিরোধ ও শিক্ষার উপর গুরুত্ব দেওয়ার জন্য বিশ্ব এইডস অভিযান তৈরি করেছিল। ২০০৪ সালে বিশ্ব এইডস প্রচার, একটি স্বাধীন সংগঠনে পরিণত হয়।

প্রতি বছর, পোপ জন পল দ্বিতীয় এবং দ্বাদশ বেনেডিক্ট বিশ্ব এইডস দিবসে রোগী এবং চিকিৎসকদের জন্য একটি শুভেচ্ছা বার্তা প্রকাশ করেন। ২০১৬ সালে, এইচআইভি এবং এইডস সম্পর্কিত এনজিওগুলো বিশ্ব এইডস দিবসটিকে বিশ্ব এইচআইভি দিবসের নামে করার জন্য একটি প্রচার কার্য শুরু করেছিল।

তারা দাবি করে যে এই পরিবর্তন সামাজিক ন্যায়বিচারের বিষয়গুলো এবং প্রি এক্সপোজার প্রফিল্যাক্সিস (ব্যাধির আক্রমণ হবার আগে চিকিৎসা) এর মতো চিকিৎসার অগ্রগতির ওপর জোর দেবে।

২০০৭ সালে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, হোয়াইট হাউস ভবনের উত্তরের বারান্দায়, ২৮ ফুট (৮.৫ মি) লম্বা এইডস ফিতা সাজিয়ে, বিশ্ব এইডস দিবসকে চিহ্নিত করা শুরু করে। তখন রাষ্ট্রপতি জর্জ ডব্লিউ. বুশের প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের পিইপিএফএআর প্রোগ্রামে বিশ্ব এইডস মহামারি মোকাবিলায় প্রতীকের মাধ্যমে প্রদর্শনের প্রস্তাব করেছিলেন। 

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র ‘দ্য সিআইএ ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্ট বুক’ - এর তথ্যানুসারে, সোয়াজিল্যান্ড, বোটসওয়ানা, লোসোথো, দক্ষিণ আফ্রিকায় এইডস রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এরমধ্যে সোয়াজিল্যান্ডে সবচেয়ে বেশি ২৭.৭৩ শতাংশ। বোটসওয়ানা- ২৫.১৬ শতাংশ, লেসোথো- ২৩.৩৯ শতাংশ, এবং সবচেয়ে কম সংক্রমণ রয়েছে অ্যাঙ্গোলাতে মাত্র ২.৪১ শতাংশ।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশে এইডসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২৩ হাজার। এ দেশে ১৯৮৯ সালে প্রথম এইচআইভিতে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এরপর থেকে ১০, ২০, ১০০ বা ২০০ জন করে নতুন রোগী প্রতিবছর শনাক্ত হয়েছে।

২০১৮ সালে নতুন রোগী বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৬৯ জনে। এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়ে প্রথম এক রোগী মারা যায় ২০০০ সালে। ২০১৮ সালে একই রোগে মৃতের সংখ্যা ১৪৮। এ বছর নতুন আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়েছে।

কেএসকে/জেআইএম