‘বিশ্বের দীর্ঘমেয়াদী রাজত্বকারী শাসক’ হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন ব্রিটিশ রানি এলিজাবেথ। বয়স ৯৫ বছর হলেও সমানতালে কর্মক্ষেত্রে বিরাজমান রানি। এ বয়সেও রাজদরবার ঠিকই চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন নিজ দক্ষতায়।
Advertisement
যে বয়সে বেশিরভাগ মানুষই অন্যের সাহায্য ছাড়া ঠিকভাবে চলাফেরা করতে পারেন না, সে বয়সেই কি না রানি নিজেকে, পরিবারকে ও রাজকার্যও সমানতালে সামলাচ্ছেন। যা সত্যিই দৃষ্টান্তমূলক।
ব্রিটিশ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ১৯২৬ সালের ২১ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি তার পিতা রাজা জর্জ ৬ এর মৃত্যুর পর রানি আসনে বসেন ২য় এলিজাবেথ।
বাবার মৃত্যুর সময়, তার বয়স ছিল ২৫ বছর। তখন তিনি স্বামী প্রিন্স ফিলিপের সঙ্গে কেনিয়া সফরে ছিলেন। পরের বছর, ১৯৫৩ সালের ২ জুন রাজমুকুট মাথায় সিংহাসনে আসীন হন রানি।
Advertisement
বিবিসি’র প্রতিবেদন অনুসারে, রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ২০১৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী রাজা হিসেবে বিবেচিত হন।
তিনি তার প্রপিতামহী রানি ভিক্টোরিয়ার (৬৩ বছর) দীর্ঘ শাসনকেও অতিক্রম করেছেন। ৬৯ বছর ধরে রানি রাজকীয় দায়িত্ব পালন করে চলছেন।
দ্য নিউইয়র্ক পোস্টের এক প্রতিবেদন অনুসারে, রানির শরীরে বার্ধক্যের ছাপ পড়লেও তার চলাফেরা কিংবা কাজকর্মে বয়সের প্রভাব পড়েনি।
ব্রিটিশ-সংস্কৃতি গবেষক ব্রায়ান কোজলোস্কি দ্য পোস্টকে বলেছেন, ‘রানির বয়স অনুসারে তিনি সত্যিই সুস্থ-সবল হিসেবে দিন কাটাচ্ছেন।’
Advertisement
‘লং লিভ দ্য কুইন! ২৩ রুলস ফর লিভিং ফ্রম ব্রিটেন’স লংগেস্ট-রাইনিং মোনার্ক ’ নামক বইতে কোজলোস্কি রানির দৈনন্দিন জীবনযাত্রার কয়েকটি বিষয় তুলে ধরেছেন।
রানি কী খান, তার কাজের সময়সূচী, অবসর সময়ে কী করেন, কীভাবে পারিবারিক ও পেশাদারিত্বের ভারসাম্য বজায় রাখেন তা উল্লেখ করা হয়েছে বইয়ে।
নিউ ইয়র্ক পোস্টের এক প্রতিবেদনে ব্রিটিশ-সংস্কৃতি গবেষক ব্রায়ান কোজলোস্কি তুলে ধরেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের দীর্ঘায়ু হওয়ার পেছনের ৫ রহস্য-
শরীরচর্চা করে নিয়মিত
শরীর সুস্থ রাখতে শরীরচর্চার বিকল্প নেই। ঠিক একইভাবে দীর্ঘায়ু লাভ করতেও শরীরচর্চা বিরাট ভূমিকা রাখে। রানি এলিজাবেথও এ বিষয়ে বিশ্বাসী।
তিনি পোষা কুকুরকে সঙ্গে নিয়ে নিয়মিত হাঁটেন। এ ছাড়াও রানি ঘোড়ার পিঠেও নিয়মিত চড়েন। যা তার শরীরকে ফিট রাখতে সাহায্য করে।
এলিজাবেথ সাধারণ খাবার খেতেই পছন্দ করেন। কোজলোস্কি বলেছেন, রানি বিকেলে স্যান্ডউইচ ও দার্জিলিংয়ের চা খেতে খুবই পছন্দ করেন।
এমনকি কেক খেতেও ভালোবাসেন। যদিও মিষ্টি খাবার এড়িয়ে যান রানি, তবে মাঝেমধ্যে তার ডায়েটিশিয়ানরা পছন্দের খাবার খাওয়ার অনুমতি দেন।
রাজকীয়দের মদ্যপানের বিষয়টি অস্বাভাবিক নয়। নিউ ইয়র্ক পোস্টের প্রতিবেদন অনুসারে, রানি সকালে এক গ্লাস ককটেল উপভোগ করেন।
দুপুরের খাবারের সঙ্গে এক গ্লাস ওয়াইন বা শ্যাম্পেন ও সন্ধ্যায় আরেক গ্লাস শ্যাম্পেন প্লাস ড্রাই মার্টিনি পান করেন রানি।
সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি এড়িয়ে চলেন
সৌন্দর্য ঠিক রাখতে রানি যদিও কোনো নামী দামী ব্র্যান্ডের প্রসাধনী ব্যবহার করেন না। তবে কোজলোস্কির দাবি, রানি মিল্ক অব রোজেস ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করেন।
তিনি প্রয়োজন ছাড়া মেকআপ ব্যবহার করেন না। সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি এড়িয়ে চলতে ছাতা ব্যবহার করেন সব সময়। নিয়মিত সানস্ত্রিনও ব্যবহার করতে ভুলেন না রানি।
মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখেন
কোজলোস্কি রানির সুস্থতার মূল বিষয় হলো মানসিক সুস্থতা। তিনি প্রতিদিন সকালে প্রাতঃরাশের সময় খবরের কাগজ পড়েন। সব রাজনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের বিষয় সম্পর্কে অবগত থাকেন সব সময়। যা তার মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখে।
মানসিক সুস্থতা
রানি মানসিকভাবে সুস্থ থাকার চেষ্টা করেন সব সময়। দুশ্চিন্তা করতে একদমই পছন্দ করেন না তিনি। সব সময় কোনো না কোনো কাজে ব্যস্ত থাকার চেষ্টা করেন এ বয়সেও।
মনোবিজ্ঞানীরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, দ্বিতীয় এলিজাবেথ তার মায়ের চেয়েও বেশিদিন বাঁচবেন। তার মা ২০০২ সালে ১০১ বছর বয়সে মারা গিয়েছিলেন। মানসিক সুস্থতা দীর্ঘায়ু ও রোগব্যাধি থেকে দূরে রাখতে বিরাট অবদান রাখে।
জেএমএস/জিকেএস