বিশেষ প্রতিবেদন

আধুনিক নগর গড়তে দরকার জনগণের ইতিবাচক সাড়া ও দপ্তরের সমন্বয়

ইকরামুল হক টিটু। ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচিত মেয়র। বিলুপ্ত ময়মনসিংহ পৌরসভারও সাবেক মেয়র। নবগঠিত সিটি করপোরেশনের প্রশাসকের দায়িত্বও পালন করেছেন অল্প কয়েকদিন। দেশের নতুন এই সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন সমস্যা, নাগরিক সেবা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে মেয়র ইকরামুল হক টিটু কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে।

Advertisement

নাগরিকদের ইতিবাচক সাড়া ও সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সমন্বয় হলে শিগগির একটি চমৎকার ও আধুনিক নগর ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। পাশাপাশি যে কোনো মূল্যে জনগণের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন এই ‘নগরপিতা’।

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সালাহ উদ্দিন জসিম। সঙ্গে ছিলেন মাহবুব আলম।

জাগো নিউজ: আপনি তো এর আগে পৌর মেয়র ছিলেন। পরে সিটি করপোরেশনের প্রশাসক, এখন নির্বাচিত মেয়র। কী তফাৎ দেখছেন?

Advertisement

ইকরামুল হক টিটু: সিটি করপোরেশন হওয়ার পরে আয়তন ও জনসংখ্যা যেমন বেড়েছে, পাশাপাশি জনগণের প্রত্যাশাও বেড়েছে। সঙ্গত কারণে সবাই মনে করেন, সিটি করপোরেশন সব ধরনের অবকাঠামো সুবিধা, যানজট নিরসন, জলাবদ্ধতা নিরসন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, পরিবেশের উন্নয়ন, শিক্ষা, চিকিৎসা সংক্রান্ত সেবাগুলো দিয়ে থাকে। সে হিসেবে পৌরসভার চেয়ে সিটি করপোরেশনে তাদের প্রত্যাশাটা বেশি।

স্বাভাবিকভাবে সিটি করপোরেশন একটি বড় পরিসর, সেখানে জনগণের সুবিধাগুলো আরও ব্যাপকভাবে নিশ্চিত করার সুযোগ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ভিশন অনুযায়ী সে কাজগুলো করার চেষ্টা করছি। তবে আমার প্রায় ২৬ মাস সময়ের মধ্যে ২০ মাসই ছিল কোভিডের সময়। এসময়ে মানুষের জীবনরক্ষা করাই ছিল আমাদের মূল চ্যালেঞ্জ। এসময়ে নগর অবকাঠামো উন্নয়নে তেমন কাজ করতে পারিনি। তবে এখন পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়েছে। ইনশাআল্লাহ, পরিস্থিতি পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসবে। আবারও পুরোদমে কাজ করে নগরবাসীর প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবো।

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু/ছবি: মাহবুব আলম

জাগো নিউজ: ময়মনসিংহ নতুন বিভাগ, নতুন সিটি করপোরেশন, বিভাগের সঙ্গে তো সিটি করপোরেশনের একটা সংযোগ আছে। বিভাগীয় সুযোগ-সুবিধা কী পেয়েছেন?

Advertisement

ইকরামুল হক টিটু: বিভাগ হওয়ার পর প্রশাসনিক সুযোগ-সুবিধা অনেকটাই মানুষের হাতের কাছে এসে পৌঁছেছে। আগে যেখানে বিভাগীয় কমিশনারের কাছে কোনো কাজের জন্য ময়মনসিংহের মানুষকে ঢাকায় যেতে হতো কিংবা আইনশৃঙ্খলা উন্নয়নে রেঞ্জ ডিআইজি ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ করতে হতো, এখন সেগুলো ময়মনসিংহেই হয়। এছাড়া শিক্ষা বোর্ড হওয়ায় আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো নিবিড় তত্ত্বাবধানের সুযোগ পাচ্ছে। মেধার প্রতিযোগিতায় আলাদা সুযোগ তৈরি হয়েছে।

ময়মনসিংহে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) দপ্তর খোলা হয়েছে। যারা পিএসসিতে পরীক্ষা দেবেন তারা ময়মনসিংহেই পরীক্ষা দিতে পারছেন, যার জন্য আগে ঢাকায় যেতে হতো, দু-তিনদিন সেখানে থাকতে হতো। বিভাগ হওয়ায় মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আশা করছি, এটি দ্রুত সময়ের মধ্যে হয়ে যাবে। এরই মধ্যে একটি নারী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এছাড়া প্রশাসনিক কমবেশি ৪০টি ইউনিট ময়মনসিংহ থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ফলে মানুষ সহজেই সেই সুবিধা নিতে পারছে। আগে সেসব সুবিধার জন্য মানুষকে ঢাকায় যেতে হতো।

আমি মনে করি, একটি বিভাগ বা সিটি করপোরেশন একটি উন্নয়নের বীজ। ময়মনসিংহের মাটিতে প্রধানমন্ত্রী সেই বীজ বপন করেছেন। এটা ধীরে ধীরে যত সম্প্রসারিত হবে, আমরা তত উন্নয়নের সুফল ভোগ করতে পারবো। এ বিভাগ ও সিটি করপোরেশন ঘিরে অবকাঠামো উন্নয়ন, শিল্প-বাণিজ্যের প্রসার, আর্থ-সামাজিক অবস্থানগত উন্নয়নের বিষয় নিয়ে অনেক ভাবনা রয়েছে এবং অনেক পরিকল্পনা হচ্ছে। আশা করছি, এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে কয়েক বছরের মধ্যে ময়মনসিংহকে নতুন রূপে দেখতে পাবো।

ময়মনসিংহ বিভাগ ও সিটি করপোরেশন হওয়ায় প্রশাসনিক সুযোগ-সুবিধা মানুষের হাতের কাছে এসে পৌঁছেছে বলে মনে করেন মেয়র/ছবি: মাহবুব আলম

জাগো নিউজ: আপনি দীর্ঘদিন ময়মনসিংহ নগরের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এই শহরের মৌলিক সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে পেরেছেন কি?

ইকরামুল হক টিটু: এখানকার আর্থ-সামাজিক অবস্থা অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে নিম্নমুখী। ময়মনসিংহে সেভাবে কোনো শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠেনি। ফলে কর্মসংস্থানের সমস্যাও প্রকট। নিম্ন-আয়ের নাগরিকদের ঢাকা-চট্টগ্রাম বা ঢাকার পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন শিল্প-কারখানামুখী হতে হয়। এটি একটি বড় বাধা। এছাড়া আজ থেকে ৮-১০ বছর আগে এখানে অবকাঠামোগত উন্নয়নও ছিল খুবই সীমিত। শিল্প-কারখানা স্থাপনে এটি অন্যতম বাধা।

এরই মধ্যে সেগুলো সম্প্রসারিত হচ্ছে। ভালুকা ও ত্রিশালে শিল্প-কারখানা স্থাপিত হয়েছে। দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা ছিল ইপিজেড, এরই মধ্যে সেটিও প্রক্রিয়াধীন। এটি হলে সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে। এছাড়া ব্রহ্মপুত্র নদ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। কিন্তু পরিস্থিতি এমন হয়েছিল যে, নদের পরিচিতিই হারিয়ে গিয়েছিল। বর্তমান সরকার ব্রহ্মপুত্র নদ খননের কাজ হাতে নিয়েছে। এটি সম্পন্ন হলে কৃষিনির্ভর ব্যবসায়িক কাজের বিস্তৃতি বাড়বে। ময়মনসিংহের হাজার বছরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রয়েছে। আমরা এগুলো হারাতে বসেছি, এর ওপরও জোর দিতে হবে। যেন পরবর্তী প্রজন্মের কাছে সংস্কৃতি-ঐতিহ্য তুলে ধরতে পারি।

এছাড়া খেলাধুলার অন্যতম জায়গা ময়মনসিংহ। জাতীয় ক্রিকেট দলে বিভিন্ন সময় ময়মনসিংহের দু-তিনজন খেলোয়াড় প্রতিনিধিত্ব করতেন। এখনো একাধিক খেলোয়াড় ময়মনসিংহের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করছেন। এখানে ক্রিকেটকে ঘিরে আমাদের আরও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা রয়েছে। ফলে সামাজিক অবক্ষয় বা যুব সমাজের অবক্ষয় রোধ করা সম্ভব হবে।

শিক্ষানগরী ময়মনসিংহে বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা এখন সময়ের দাবি। এটি হলে ময়মনসিংহের মানুষ ব্যাপকভাবে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাবে।

এসব ঘিরে আমরা যদি অবকাঠামো, রেল যোগাযোগ, সেতু নির্মাণসহ নানা বিষয় একটা রোডম্যাপের মধ্যে নিয়ে আসতে পারি, তাহলে ময়মনসিংহ একটি উন্নত জনপদ হিসেবে গড়ে উঠবে। সবচেয়ে বড় বিষয়- ঢাকার ওপর যে চাপ বাড়ছে, সেটি কমাতে হলে ময়মনসিংহের সার্বিক উন্নয়নে নজর দিতে হবে।

ময়মনসিংহ শহরের মধ্যে বাসস্ট্যান্ডের কারণে যানজট বাড়ছে, এটি মূল শহরের বাইরে স্থানান্তরের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে/ছবি: মাহবুব

জাগো নিউজ: প্রতিটি নগরের বড় সমস্যা যানজট, এই শহরেও সেটি প্রকট। যানজট নিরসনে আপনার নির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা আছে কি?

ইকরামুল হক টিটু: দেশের সব নগরেরই সমস্যা যানজট। একটি নগরের কম করে হলে ২৫ শতাংশ সড়ক নেটওয়ার্কিংয়ের আওতায় থাকতে হয়। এটি এখন কোনো শহরে নেই বললেই চলে। এটি আমাদেরও অন্যতম প্রধান সমস্যা। জনসংখ্যা বাড়ছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যানবাহনও বাড়ছে। আমরা যানজট নিরসনে সিটি করপোরেশনের আওতায় সড়ক প্রশস্তকরণ ও বাইপাস নির্মাণসহ নানা কাজ করছি। বেকারত্বের কারণে উপার্জনের জন্য নিম্ন-আয়ের অনেক মানুষ অবৈধ যানবাহন নিয়ে সড়কে নেমে যাচ্ছে, যার ফলেও যানজট তৈরি হচ্ছে। এসব অবৈধ যানবাহনও কঠোর তদারকির মধ্যে নিয়ে আসছি। এজন্য ভ্রাম্যমাণ আদালতও পরিচালনা করা হচ্ছে।

ময়মনসিংহের ভেতর দিয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) ৪০ কিলোমিটার রাস্তা রয়েছে। সেগুলো প্রশস্ত করার অনুরোধ করেছি। সেটি হলে যানজট অনেকটাই নিরসন হবে। ট্রাক, বাস, সিএনজি, থ্রি হুইলারসহ বিভিন্ন যানবাহন সমন্বয় করে চলাচলে অনুমতি দিতে হবে। আসলে একটি সিটির ধারণক্ষমতা কত? লাইসেন্স প্রদানকারীদের সেটি বিবেচনায় রাখতে হবে। অনেক সময় দেখি অনেকে লাইসেন্সের আবেদন করে অনুমতি পাওয়ার আগেই রাস্তায় গাড়ি নামান। এজন্য কঠোর নজরদারি করা প্রয়োজন। আমি সার্বিকভাবে মনে করি, যানজট থেকে মুক্তি পেতে হলে আমাদের সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।

ময়মনসিংহে শম্ভুগঞ্জ ব্রিজের মুখে যানজট হয় বাসস্ট্যান্ডের কারণে। এটি মূল শহরের বাইরে স্থানান্তরের প্রস্তাব দিয়েছি। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় প্রকল্প অনুমোদনে সম্মতি দিয়েছে। যত্রতত্র ট্রাক রাখার কারণেও যানজট হয়। এজন্য বেলতলি ব্রিজ সংলগ্ন জায়গায় একটি নতুন ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণেরও প্রস্তাব দিয়েছি। সেটা মন্ত্রণালয় অনুমোদনও দিয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে যদি এগুলো ঠিকমতো করতে পারি তাহলে নগরবাসী এর সুফল পাবে। আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল নগরের শেষ প্রান্তে বা বাইরে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করেছি। এটি করলে যানজট নিরসনে অনেকটাই ইতিবাচক সাড়া মিলবে।

সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, সওজ, বিআরটিএ, মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নসহ সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে সমন্বিতভাবে কাজ করতে পারলে এ সমস্যার পরিপূর্ণ সমাধান আসবে। অন্যথায় আমরা আমাদের রুলগুলো পালন করছি, সেটি হয়তো যানজট নিরসনে কিছুটা ভূমিকা রাখছে, কিন্তু অন্যান্য সেক্টর বা দপ্তর থেকে উদ্যোগ না নিলে এটি উপেক্ষিতই থেকে যাবে। সুতরাং সমন্বিত উদ্যোগই যানজট নিরসন করতে পারে বলে মনে করি।

যেকোনো মূল্যে জনগণের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন নগরপিতা মো. ইকরামুল হক টিটু/ছবি: মাহবুব আলম

জাগো নিউজ: বিভাগ হওয়ার পরে একটা মেগা পরিকল্পনা হয়েছে। সেটা বাস্তবায়নে অগ্রগতি কতদূর?

ইকরামুল হক টিটু: বিভাগীয় সদরদপ্তর স্থাপন ও পার্শ্ববর্তী এলাকাকে উন্নত করার একটি পরিকল্পনা ছিল। প্রাথমিক অবস্থায় পাঁচ হাজার একর জমি নিয়ে এটি করার কথা ছিল। কিন্তু সেই এলাকার মানুষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এটি সংকুচিত করে এক হাজার একরের মধ্যে নিয়ে আসা হয়েছে। পুনর্বাসন ও জমি অধিগ্রহণের কার্যক্রম বাস্তবায়নের একটি প্রকল্প প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। আশা করছি, দ্রুত এটা একনেকে অনুমোদন হবে এবং কাজ শুরু হবে।

এটি হওয়ার পর বিভিন্ন বিভাগ বা সংস্থার কাজ রয়েছে। আমাদের নগর ব্যবস্থা গড়ে তোলা, সড়ক নেটওয়ার্কিং, ফুটপাত, ড্রেনেজ ব্যবস্থা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বাস টার্মিনাল নির্মাণ বা বাস বে, সিকিউরিটি ল্যাম্প- এগুলোর একটি মাস্টারপ্ল্যান আমরা প্রস্তুত করেছি। অন্যান্য বিভাগ যেমন- বিদ্যুৎ, টিঅ্যান্ডটি, গ্যাস, সওজ, পুলিশ, গণপূর্ত, পরিবেশ উন্নয়ন, বন বিভাগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড- তাদেরও এখানে কাজ রয়েছে। সবার অংশগ্রহণের মাধ্যমে কাজগুলো করতে হবে।

কয়েকদিন আগে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে বিভিন্ন বিভাগীয় দপ্তরের প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকে আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়েছে। আমরা বেশকিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আরও বৈঠক করতে হবে। এটা চূড়ান্ত করতে পারলে আধুনিক নগর ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হবে। সেখানে মানুষ একদিকে যেমন বিভাগীয় সুবিধা ভোগ করবে, অন্যদিকে আধুনিক সিটিরও সুবিধা পাবে। সেই ধরনের পরিকল্পনা রয়েছে। এটি দৃশ্যমান পর্যায়ে আসতে আরও ৮-১০ মাস সময় লাগবে।

জাগো নিউজ: একটা নগরের উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ হচ্ছে রাজস্ব আদায় ও সেবার সমন্বয় করা। এ বিষয়ে আপনার পরিকল্পনা কী?

ইকরামুল হক টিটু: আসলে রাজস্ব আদায় ও উন্নয়ন একটি অন্যটির পরিপূরক। এটির ক্ষেত্রে নাগরিকদের সক্রিয় অংশগ্রহণের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও সেবাদানের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। যদি প্রতিষ্ঠান প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকে যে, আমরা সঠিক সময়ে সেবা দেবো, সেবার মান নিশ্চিত করবো, স্বচ্ছতা থাকবে, জবাবদিহিতা থাকবে, জনগণের অংশগ্রহণ থাকবে তাহলে জনগণও সিটি করপোরেশনকে স্বাচ্ছন্দ্যেই রাজস্ব দেবে। আমি মনে করি, এটা মুখ্য বিষয়। যদি সেবা না দিতে পারি, স্বচ্ছতা না থাকে, জনগণের অংশগ্রহণ না থাকে তাহলে রাজস্ব ন্যূনতম হোক বা যে পর্যায়েরই হোক তা আদায় করা কঠিন। জনগণের কাছে এ আস্থা নিশ্চিত করতে হবে যে, আমি যেটা নিচ্ছি সেটার যথাযথ ব্যবহার হচ্ছে। এসব বিষয় মাথায় রেখে কাজ করছি।

নগরে বেড়েছে অবৈধ যানবাহন, ফলে সড়কে বাড়ছে যানজট/ছবি: মাহবুব আলম

সিটি করপোরেশনের এই অল্প সময়ের (আড়াই বছর) মধ্যে নিরাপত্তা বাতি, সেবার কার্যক্রমকে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে আঞ্চলিক অফিস স্থাপন ও কয়েকটি সেবা অনলাইনে দেওয়া, রাত্রিকালীন বর্জ্য সংগ্রহ, ড্রেনেজ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের মাধ্যমে জলাবদ্ধতা নিরসন এবং করোনা সংকটের মধ্যে বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে সড়ক প্রশস্তকরণ বা যানজট নিরসনে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। কিছু ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করেছি। ব্যয় বাড়ায় রাজস্ব নির্ধারণ করেছিলাম, তবে জনগণের অনুরোধে সেটা কমিয়েও দিয়েছি। আশা করছি আমাদের নাগরিকরা এ কার্যক্রমে সহযোগিতা করবেন।

আমরা যে সেবা দিয়ে আসছি তার পাশাপাশি উন্নয়ন প্রকল্পে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ফান্ড দিতে হয়। সেই ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। সব সরকারের পক্ষ থেকে হবে, এটা মনে করি না। নিজস্ব অর্থায়নে কিছু কাজ করতে হবে, সেই সক্ষমতাও তৈরি করতে হবে। এজন্য নাগরিকদের সহযোগিতা চাই। আশা করি, তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসবে। যে কোনো মূল্যে জনগণের পাশে থাকবো, তাদের সেবা দেবো- এ ব্যাপারে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। করোনাকালে বিভিন্ন সেবার মাধ্যমে আমরা সেটা প্রমাণ করার চেষ্টা করেছি। ভবিষ্যতেও সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।

{ইকরামুল হক টিটুর জন্ম ১৯৭৬ সালের ১ আগস্ট ময়মনসিংহ জেলার একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারে। তার বাবা মরহুম ফজলে হক ও মা মরহুমা মানোয়ারা খাতুন। ময়মনসিংহের প্রি-ক্যাডেট হাইস্কুল, ময়মনসিংহ জিলা স্কুল ও মুকুল নিকেতন উচ্চ বিদ্যালয়ে তিনি প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের পড়াশোনা করেন। উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক (সম্মান) পাস করেন আনন্দমোহন কলেজ থেকে

তার কর্মজীবন শুরু হয় শামীম এন্টারপ্রাইজ (প্রা.) লিমিটেডের পরিচালক হিসেবে। মেয়র পদের পাশাপাশি বর্তমানে তিনি জেলা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন। আছেন সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা লিমিটেড, হোটেল সি ক্রাউন ও শামীম এন্টারপ্রাইজ প্রপার্টিজ লিমিটেডের পর্ষদে পরিচালক হিসেবেও}

এসইউজে/এআরএ/এইচএ/জেআইএম