লাইফস্টাইল

অতিরিক্ত পালং শাক খাওয়া কতটা ক্ষতিকর

শীত আসতেই বাজারে উঠতে শুরু করেছে পালং শাক। ভিটামিন এ, সি থেকে শুরু করে নানা ধরনের খনিজ থাকে এই শাকে। স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী এই শাক। স্বাদে এমনকি পুষ্টিতেও অনন্য পালং শাক।

Advertisement

যেহেতু এই শাক শীতেই পাওয়া যায়, তাই অনেকে অতিরিক্ত খেয়ে থাকেন। দেখা যায়, প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এই শাকের বিভিন্ন পদ পাতে রাখেন।

এতে কোনো সমস্যা নেই, বরং দৈনিক পাতে শাক-সবজি অবশ্যই রাখা উচিত। তবে অতিরিক্ত পালং শাক খাওয়া কারো কারো জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। জেনে নিন পালং শাকের ৪টি পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে-

পালং শাকে প্রচুর পরিমাণে অক্সালেট থাকে। যা অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে কিডনিতে পাথর তৈরি হতে পারে। এই শাকে থাকা ভিটামিন কে রক্ত পাতলাকারী ওষুধের ক্ষেত্রে পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।

Advertisement

পালং শাক যেভাবে কিডনিতে পাথরের ঝুঁকি বাড়ায়

পালং শাকে থাকে অক্সালেট, যা অতিরিক্ত গ্রহণের ফলে কডনিতে পাথর তৈরি হতে পারে। প্রস্রাবে অক্সালেটের পরিমাণ বৃদ্ধির ফলে এই পাথরগুলো তৈরি হয়। কিডনিতে পাওয়া যায় ক্যালসিয়াম অক্সালেট পাথর।

১০০ গ্রাম পালং শাকে ৯৭০ মিলিগ্রাম অক্সালেট থাকে। ফুটন্ত পালং শাকে অক্সালেটের ঘনত্ব কিছুটা কমতে পারে। এই শাকের সঙ্গে ক্যালসিয়াম-ভিত্তিক খাবার- (যেমন দই বা পনির) মিশ্রিত করলেও পাথর গঠন প্রতিরোধ করতে পারে।

যদিও প্রতিটি ব্যক্তির শারীরিক অবস্থা ভিন্ন হয়, সেক্ষেত্রে পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়াও ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে। তবে কোনো কিছু অতিরিক্ত করা ভালো না।

Advertisement

তাই অতিরিক্ত পালং শাকও খাওয়া উচিত নয়। বিশেষ করে আপনার যদি কিডনির সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে তবেই পালং শাক খান।

রক্ত পাতলাকারী ওষুধের কার্যকারিতা নষ্ট করে

পালং শাকে থাকে উচ্চ মাত্রার ভিটামিন কে। যা রক্ত পাতলাকারী ওষুধের কার্যকারিতা কমায়। স্ট্রোক প্রতিরোধে রক্ত পাতলাকারী ওষুধ দেওয়া হয়। তাই এমন রোগীদের ক্ষেত্রে পালং শাক খাওয়া কমাতে হবে।

আধা কাপ রান্না করা পালং শাকে ৪৪৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন কে থাকে। এক কাপ কাঁচা পালং শাকে ১৪৫ মিলিগ্রাম পুষ্টি থাকে। রান্না করা পালং শাকে ভিটামিন কে এর মাত্রা বেশি থাকে কারণ তাপ পুষ্টির শোষণ বাড়ায়।

আর ভিটামিন কে শরীরের জন্য অনেক উপকারী। করোনারি হৃদরোগ, ক্যানসার ও অস্টিওপরোসিস প্রতিরোধে ভিটামিন কে এর ভূমিকা আছে।

খনিজ শোষণে বাঁধা দেয়

কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, অক্সালেট-সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ খনিজ শোষণকে বাঁধা দিতে পারে। অক্সালেট একটি অ্যান্টিনিউট্রিয়েন্ট। পালং শাকের অক্সালেট ক্যালসিয়ামের মতো খনিজ পদার্থের শোষণে বাধা সৃষ্টি করে।

এতে অক্সালেট ও ক্যালসিয়াম উভয়ই থাকে। ফলে প্রচুর পরিমাণে পালং শাক খেলে ক্যালসিয়াম শোষণকে ব্যাহত করতে পারে। পালং শাকের অক্সালেটগুলো আয়রনের সঙ্গে বিক্রিয়া ঘটাতে পারে ও স্ফটিক গঠন করে এর শোষণকে বাধা দেয়।

পালং শাক থাইরযয়েডের সমস্যাও বাড়াতে পারে বলে মনে করা হয়। এতে থাকা গয়ট্রোজেন নামক কিছু যৌগ এ সমস্যার সৃষ্টি করে। তবে এ বিষয়ে গবেষণা এখনও মিশ্র। তাই থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে ডায়েটে পালং শাক রাখার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

গেঁটেবাত বাড়ায়

পালং শাকে থাকে পিউরিন নামক রাসায়নিক যৌগ। যা গাউটে প্রভাব ফেলে বলে মনে করা হয়। যদিও এ বিষয়ে আরো গবেষণা প্রয়োজন। তবুও গাউটের সমস্যা থাকলে পালং শাক খাওয়ার বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

কিছু গবেষণা অনুসারে, পালং শাক অতিরিক্ত গ্রহণের ফলে রক্তচাপ ও রক্তে শর্করার মাত্রা খুব কমে যেতে পারে। যারা উচ্চ রক্তচাপ ও রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য ওষুধ খাচ্ছেন, তাদের ক্ষেত্রে এই শাক বিপজ্জনক হতে পারে।

পালং শাক কারো কারো ক্ষেত্রে পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করলেও স্বাস্থ্যের জন্য এটি অনেক উপকারী। তবে যে কোনো খাবারই নির্দিষ্ট পরিমাণে খাওয়া উচিত।

সূত্র: স্টাইলক্রেজ

জেএমএস/জিকেএস