মতামত

গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠাই হোক ডা. মিলন দিবসের অঙ্গীকার

স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা ডা. শামসুল আলম খান মিলনের ৩১ তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ডা. মিলনের আত্মদানের মধ্য দিয়ে সেদিনের স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে নতুন গতি সঞ্চারিত হয়। ডা. মিলনের শহীদী আত্মদানের মাধ্যমে ১৯-এর ছাত্র গণঅভ্যুত্থান সফলতা লাভ করে। শহীদ ডা. মিলন ছিলেন বিএমএ-এর নির্বাচিত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং স্বৈরাচারী এরশাদ ঘোষিত গণবিরোধী স্বাস্থ্যনীতি আন্দোলনের মধ্যমনি।

Advertisement

আজকের এই দিনে ডা. মিলনকে আমরা স্মরণ করি একজন সংগ্রামী মানুষের পথিকৃৎ হিসেবে। একজন সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের নেতা হিসেবে আমি সেই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, অনেকদিন হয়ে গেল নতুন প্রজন্ম হয়তো জানে না সেই সময়ের অগ্নিঝরা দিনগুলোতে কী ঘটেছিল।

মূলত ২১ নভেম্বর থেকে ছাত্র আন্দোলনের একদল সন্ত্রাসী সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যে আন্দোলনের উপর সশস্ত্রভাবে চড়াও হয়। প্রথমে সানাউল হক নিরু ও গোলাম ফারুক অভির নেতৃত্বে ছাত্রদলের উপদলীয় কোন্দল মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। তাদের একটি অংশ স্বৈর শাসক এরশাদের সাথে হাত মিলায়। কিন্তু পরবর্তীতে নিরু ঐ ঘটনা প্রবাহ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়। বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে পুলিশি সহায়তায় অভি গ্রুপ সশস্ত্র আক্রমণ পরিচালনা করে ছাত্র-ছাত্রীদের উপর। এভাবে ২৩, ২৪ ও ২৫ পাল্টাপাল্টি লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে সর্বদলীয় ছাত্রঐক্য বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে সমর্থ হয়।

২৬ নভেম্বর বর্তমান নূর হোসেন চত্বরে সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যের ছাত্র-জনসভা ছিল। সেই সভাটির সভাপতিত্ব করেন হাবিবুর রহমান হাবীব। সঞ্চালনা করেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শফী আহমেদ। সভায় ২৬ নভেম্বর রাজপথে লাঠি কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। সভা শেষ করে আমরা যখন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফেরত আসি সেসময় সংবাদ আসে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে সরকারি সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হওয়া নিমাই নামের এক কিশোরের।

Advertisement

২৭ নভেম্বর সকাল আনুমানিক ১০টার দিকে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্রদের এক বিরাট লাঠি মিছিল ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। এর পরপরেই জগন্নাথ হল থেকে আরেকটি মিছিল এ লাঠি মিছিলে যুক্ত দেয়। স্বাভাবিক নিয়মে খণ্ড খণ্ড মিছিল মধুতে জমাতে হয়। পরবর্তী সময়ে কেন্দ্রীয় মিছিল শুরু হয়। সে দিন আমরা মিছিল না থামিয়ে লাইব্রেরি, টিএসসি, এলাকা চক্কর দিতে বললাম।

মিছিল হাকিম চত্বর অতিক্রম করেছে এমতাবস্থায় সন্ত্রাসীদেরআক্রমণ শুরু হয়। মিছিল ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় আকস্মিক হামলায়। ছাত্রঐক্যের নেতাকর্মীরা লাইবেরি চত্বর থেকে প্রতিরোধ শুরু করে। ডাকসু বং মধু থেকে কর্মীরা লাইব্রেরি, টিএসসি এলাকায় ছুটে যায়। দ্রুত দলগুলোতে সংবাদ পাঠানো হয়। আমরা আলোচনা বন্ধ করে লাইব্রেরির সামনে চলে আসি। ছাত্রদলের কর্মীরা সংবাদ নিয়ে আসে যুবদল সভাপতি মির্জা আব্বাসকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। থেমে থেমে আন্দোলন চলছিল।

সোয়া এগারোটানাগাদ বিএমএর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম খান মিলন ও ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন রিকশায় পিজিতে যাওয়ার পথে লাইব্রেরির পূর্ব কোনায় সন্ত্রাসীদের আক্রমণে পড়ে যান। গুলিতে ডা. শামসুল আলম খান মিলন নিহত হন। সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যের কর্মীরা ডা. মিলনকে রিকশায় করে মেডিকেলে নিয়ে যায়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মিলনের মৃত্যুর সংবাদ ক্যাম্পাসে পৌঁছানোর পর পরই ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। ছাত্র শিক্ষক কর্মচারীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। ডা. মিলন খুবই জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন। ছাত্রজীবন থেকে ছাত্রলীগের (জাসদ) রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন।

ঢাকা মেডিকেল শাখার সভাপতি ছিলেন। তারই প্রিয় বিদ্যাপীঠ ও কর্মস্থল মেডিকেলের শত শত কর্মচারী লাঠি নিয়ে কার্জন হলের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে সন্ত্রাসীদের ধাওয়া করতে। শুরু হয় সম্মিলিত প্রতিরোধ। সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যের কর্মীরা সন্ত্রাসীদের হঠাতে হঠাতে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত নিয়ে যায়। দোয়েল চত্বরের সামনে পুলিশের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে রাস্তায় শুয়ে পড়ে সন্ত্রাসীরা গুলি ছুড়তে থাকে।

Advertisement

লাগাতার প্রতিরোধের মুখে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যের একটি মিছিল বাবুল, মিলন, সাইফুদ্দিন মনি ও ছাত্রলীগ (না-শ) জাসদের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠ পেরিয়ে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দিকে পৌঁছায়। সন্ত্রাসীদের বন্দুকের গুলিতে ছাত্রদল নেতা ফজলুল হক মিলন আহত হয়। এদিকে লাইব্রেরি প্রাঙ্গণে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজুগুলিবিদ্ধ হয়। ডা. মিলনের মৃত্যু সংবাদ মহানগরীতে ছড়িয়ে পড়লে সর্বস্তরের মানুষ অফিস, আদালত ছেড়ে রাজপথে নেমে আসে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ছাত্র শিক্ষক কর্মচারীরা মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে আসেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকরাও মিছিল নিয়ে ওই মিছিলে মিলিত হন।

সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যের হাজার হাজার নেতাকর্মী ওই মিছিলে যোগ দেয়। মিছিলটি প্রেসক্লাবের সামনে এসে সমবেত হয়। আইনজীবীরা আদালত ছেড়ে রাজপথে চলে আসেন। ৮ দল ৭ দল ও ৫ দলীয় জোটের নেতারাও সমাবেশে যোগ দেন। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের নেতারাও প্রেসক্লাবে মিলিত হন। প্রায় ঘণ্টা দুয়েক সমাবেশ চলে। বিএমএর পক্ষ থেকে ডা. মাজেদ চিকিৎসকদের গণ পদত্যাগের কথা ঘোষণা করেন।

সমাবেশে প্রফেসর ইয়াজউদ্দিন, ড. কামাল হোসেন, ফয়েজ আহমেদ, ৮, ৭ ও ৫ দলীয় জেটের নেতারা, সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যের নেতারা বক্তৃতা দেন। সচিবালয় থেকে কতিপয় গণবিরোধী আমলা ব্যতীত সব কর্মকর্তা প্রেসক্লাবের সামনে সমবেত হন। সমাবেশ শেষ করে সর্বস্তরের জনতা মেডিকেলে চলে আসে। বস্তুত ডা. মিলনের শহীদী আত্মদানের মধ্য দিয়েই বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়। বিকেলে ঢাকা মেডিকেল থেকে ফজলুল হক মিলনকে আমি ও অসীম কুমার উকিল, ছাত্রলীগ নেতা (না-শ) বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি শহীদুল ইসলামকে দিয়ে স্কুটারে করে ডা. করিমের উপশম ক্লিনিকে পাঠিয়ে দেই নিরাপত্তার জন্য।

সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যের পক্ষ থেকে ২৮ নভেম্বর ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত হরতাল আহ্বান করা হয়। রাতে স্বৈরাচারী সরকার গণঅভ্যুত্থান ঠেকাতে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে জরুরি আইন জারি করে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, ও রাজশাহীতে অনির্দিষ্টকালের জন্য সান্ধ্য আইন জারি করে। এই ঘোষণার পর পরই হাজার হাজার ছাত্র হল থেকে রাস্তায় নেমে এসে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। জরুরি আইন জারি করার প্রতিবাদে সব সংবাদপত্র প্রকাশনা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সিদ্ধান্ত নেয়া হলো জরুরি অবস্থা ঘোষণা হলে আর কারফিউ জারি করলে ছাত্র-জনতাকে নিয়ে রাজপথে ঝটিকা মিছিল নামাতে হবে।

স্বৈরাচারী সরকারকে সর্বাত্মকভাবে অচল করে দেয়ার লক্ষ্যে সরকারি আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পদত্যাগ করতে আহ্বান জানানো হয়। এর মধ্যে চিকিৎসকরা পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে। সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধ করা হলে সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যের পক্ষ থেকে বুলেটিন প্রকাশ করা হবে আন্দোলনে সংবাদ জনতার মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে। তাছাড়া বিবিসি ও ভয়েস অব আমেরিকার প্রতিনিধি আতাউস সামাদ ও গিয়াস কামাল চৌধুরীর সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে হবে। ৮ দল, ৭ দল ও ৫ দলীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করতে হবে।

গ্রেপ্তার এড়ানোর লক্ষ্যে সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শও দেয়া হয়। রাতে সম্ভাব্য গণঅভ্যুত্থান ঠেকানোর লক্ষ্যে স্বৈরাচারী সরকার জরুরি আইন জারি করে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে। ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা, চট্টগ্রামে সান্ধ্য আইন বলবৎ করাহয়। স্বৈরাচারের এই ঘোষণা রাষ্ট্রীয় প্রচার মাধ্যমে প্রচারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হলসমূহ থেকে হাজার হাজার ছাত্র রাস্তায় নেমে এসে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। ছাত্রদের বিক্ষোভের মুখে পুলিশ ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থান গ্রহণ করে।

জরুরি আইন জারি করার প্রতিবাদে সংবাদপত্র পরিষদ ও সাংবাদিকরা প্রকাশনা বন্ধ করে দেন। সাংবাদিক মহলের সিদ্ধান্তটি ছিল স্বৈরাচারের জরুরি আইনের বিরুদ্ধে শক্ত চপেটাঘাত। পাশাপাশি সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যের কবি, কথাশিল্পী ও সাংবাদিক আনিসুল হক, আনোয়ার শাহাদাৎ, কবি তারিক সুজাত, সাংবাদিক আমান-উদ-দৌলা, আমিনুর রশীদ, ফজলুল বারী, কুদ্দুছ আফ্রাদ, নঈম নিজাম, মোজাম্মেল বাবু, বাঁধন চৌধুরী, কার্টনিস্ট শিশির ভট্টাচার্য কবি শিমুল মোহাম্মদ, লুৎফুল হোসেন বাবু প্রমুখদের সমন্বয়ে জরুরি বুলেটিন বের করার সিদ্ধান্ত নেয়।

রাতে আমরা সবাই নিজ নিজ ব্যবস্থায় আত্মগোপন করলাম গ্রেপ্তার এড়ানোর জন্য। ঢাকা মেডিকেল থেকে চিকিৎসাধীন নাজমুল হক প্রধানকে সরিয়ে নেয়া হলো অন্যত্র। আমরা প্রস্তুতি নিলাম কীভাবে মোকাবেলা করা যায়। স্বৈরাচারী এরশাদের জরুরি আইন লঙ্ঘন করে ছাত্র-জনতা বিক্ষোভ মিছিল বের করে দেশের সর্বত্র। ময়মনসিংহে ছাত্রলীগ (না-শ) কর্মী ফিরোজ, জাহাঙ্গীর পুলিশের গুলিতে শহীদ হন। সকাল ৮টা নাগাদ জিয়া হলের ছাত্ররা মিছিল বের করতে চাইলে পুলিশ কলাভবন সংলগ্ন হলগুলো ঘেরাও করে। ছাত্রদের বিক্ষোভের মুখে পুলিশ হল ত্যাগ করতে বাধ্য হয়।

সকাল ৯টা নাগাদ শত শত ছাত্রী মশারির স্ট্যান্ড বাঁশের লাঠি গজারির লাঠি নিয়ে মিছিল বের করার উদ্দেশ্যে টিএসসির সড়ক মোহনায় মিলিত হয়। আইরিন পারভীন বাঁধন, শিরিন সুলতানা, নাজমা আক্তার, নীলা, শামসুন্নাহার, সাঈদা ইয়াসমিন, শানু, রানু, শাহানা বেগম, লিপি (শামসুন্নাহার হল) দিপু, মুন্নী প্রমুখ ছাত্রী নেতারা ও সাধারণ ছাত্রীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে কারফিউ ভেঙে দেয়ার লক্ষ্যে হল ছেড়ে বেরিয়ে আসে। ছাত্রঐক্যের কর্মীরা মিছিল বের করার চেষ্টা করছিল কিন্তু পুলিশি ব্যারিকেডের জন্য সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। ফেরদৌস হোসেন, এস এম জামাল উদ্দিন, হরিপদ রায়, মফিজুল হক পাটুয়ারী প্রমুখ তরুণ শিক্ষকরাও রাজপথে নেমে আসেন। ছাত্রীরা মিছিল বের করলে হাজার হাজার ছাত্র ও শিক্ষক মিছিলে যোগ দেন, সামরিক জান্তা ততক্ষণে রাস্তায় বিডিআর ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করে। কিন্তু জনস্রোতের সামনে সামরিক বাহিনীর সদস্যরা নির্বিকারভাবে দাঁড়িয়ে থাকে।

ডা. মিলনের রক্তস্রোতের পথ বেয়ে ছাত্র-জনতার দুর্বার আন্দোলন জান্তার সব নির্দেশকে অচল করে দেয়। ১৫ দলীয় ঐক্যজোট নেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশনেত্রী শেখ হাসিনা, ৫ দলীয় জোটের নেতারা ও ৭ দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার নির্দেশে আন্দোলনের কর্মসূচি পালিত হতে থাকে। সর্বদলীয় ছাত্রঐক্য হয়ে ওঠে আন্দোলনের কেন্দ্র, মধুর ক্যান্টিন হয়ে ওঠে সারা দেশের মানুষের যোগাযোগের ঠিকানা। এমনি অবস্থা চলতে চলতে ৪ ডিসেম্বর বিবিসির সান্ধ্য বুলেটিরের মাধ্যমে বাংলার মানুষ সামরিক জান্তা এরশাদের পদত্যাগের ঘোষণা শুনতে পায়।

ডা. মিলন স্বপ্ন দেখেছিলেন শোষণমুক্ত সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশের, নিয়োজিত রেখেছিলেন নিজেকে গণতান্ত্রিক সংগ্রামের প্রতিটিপর্যায়ে। একজন সৎ, নিষ্ঠাবান, আদর্শবান চিকিৎসক আত্মাহুতি দিয়ে প্রমাণ করলেন সব স্বৈরাচার কোনো না কোনো দিন রক্তের স্রোতে জনতার সম্মিলিত আন্দোলনে ভেসে যেতে বাধ্য হয়। ডা. মিলন গণতন্ত্রের অতন্দ্র প্রহরী হয়ে সবার মাঝে বেঁচে আছেন। সমাজ পরিবর্তনের মাধ্যমে দেশে একটি প্রগতিশীল আধুনিক অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র ব্যবস্থা গঠন করাই ছিল তার স্বপ্ন। মানুষের সাংবিধানিক, গণতান্ত্রিক মানাবধিকার ও ভোটাধিকার নিশ্চিত করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জনকল্যাণমূখী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাই হোক ডা. মিলন দিবসের অঙ্গীকার।

আজকের এই দিনে কবি নবারুণ ভট্টাচার্য-এর ভাষায় শহীদ ডা. মিলন যেন বলছেন- আমাকে হত্যা করলে বাংলার সব কটি মাটির প্রদীপে শিখা হয়ে ছড়িয়ে যাব আমার বিনাশ নেই- বছর বছর মাটির মধ্য হতে সবুজ আশ্বাস হয়ে ফিরে আসব আমার বিনাশ নেই- সুখে থাকব, দুঃখে থাকব সন্তান-জন্মে সৎকারে বাংলাদেশ যতদিন থাকবে ততদিন মানুষ যতদিন থাকবে ততদিন।

লেখক : নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের ছাত্র নেতা।

এইচআর/এএসএম