ধর্ম

নবিজীর (সা.) দরূদে কাটুক জুমার দিন

সপ্তাহের দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিন শ্রেষ্ঠ। দিনটি মুমিন মুসলমানের জন্য বিশেষ ইবাদত-বন্দেগির দিন হিসেবে নির্ধারিত। আর এ দিনের অন্যতম আমল হলো নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি দরূদ পড়া। হাদিসে ঘোষিত মর্যাদার এ আমলটির প্রচলন কম হলেও অনেক দেশেই এর ব্যাপক চর্চা রয়েছে। কেননা নবিজীর প্রতি দরূদ পড়তে স্বয়ং আল্লাহ তাআলা এভাবে নির্দেশ দিয়েছেন-

Advertisement

إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا

‘নিশ্চয়ই আল্লাহ নবির প্রতি অনুগ্রহ করেন এবং তাঁর ফেরেশতারাও নবির জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা করেন। হে বিশ্বাসীগণ! তোমরাও নবির জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা কর এবং তাকে উত্তমরূপে অভিবাদন কর (দরূদ ও সালাম পেশ কর)।’ (সুরা আহজাব : আয়াত ৫৬)

জুমার দিন দরূদ পাড়ার বিশেষ ফজিলত

Advertisement

হজরত আওস ইবনু আওস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের দিনসমূহের মধ্যে সর্বোত্তম হলো জুমার দিন। এদিন আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করা হয়েছিলো, এদিনই তাঁর রূহ কবজ করা হয়েছিলো, এদিন শিংগায় ফুৎকার দেওয়া হবে এবং এদিনই বিকট শব্দ করা হবে। কাজেই এদিন তোমরা আমার উপর বেশি বেশি দরূদ পাঠ করো। কারণ তোমাদের দরূদ আমার কাছে পেশ করা হয়। হজরত আওস ইবনু আওস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, লোকজন প্রশ্ন করলো- হে আল্লাহর রসুল! কি করে আমাদের দরূদ আপনার কাছে পৌঁছানো হবে? আপনি তো নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবেন। বর্ণনাকারী আওস ইবনু আওস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, লোকেরা বুঝাতে চাচ্ছিল যে, আপনার শরীর তো জরাজীর্ণ হয়ে মিশে যাবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, মহান সর্বশক্তিমান আল্লাহ নবী-রাসুলদের দেহকে মাটির জন্য হারাম করে দিয়েছেন।’ (আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, বুখারি, মুসলিম, ইবনে খুযাইমা)

হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘তোমরা জুমার রাত ও জুমার দিনে আমার ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ কর। যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরুদ পাঠ করে আল্লাহ তায়ালা তার ওপর দশবার রহমত নাজিল করেন।’ (বায়হাকি)

হাদিসের অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, ‘প্রত্যেক জুমার দিনে তোমরা আমার ওপর অধিক পরিমাণে দরূদ পাঠ কর। কারণ আমার উম্মতের দরূদ প্রতি জুমার দিন আমার কাছে পেশ করা হয়। আর তাদের মধ্য থেকে যে ব্যক্তি আমার ওপর সবচেয়ে বেশি দরূদ পাঠ করে সে অন্যদের তুলায় আমার বেশি কাছাকাছি।’ (বায়হাকি)

নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন আসরের নামাজের পর নিজ স্থান থেকে ওঠার আগে ৮০ বার এই দরূদ শরিফ পাঠ করে-

Advertisement

اَللَّهُمَّ صَلِّى عَلَى مُحَمَّدِ النَّبِىِّ الْاُمِّىِ وَ عَلَى اَلِهِ وَ سَلِّمُ تَسْلِيْمَا

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিনিন নাবিইয়্যিল উম্মিইয়ি ওয়া আলা আলিহি ওয়া আস হাবিহি ওয়াসাল্লিমু তাসলিমা।’

তার ৮০ বছরের পাপ ক্ষমা হয়ে যায় এবং ৮০ বছরের ইবাদতের সওয়াব তার আমলনামায় লেখা হয়। ’ (আফজালুস সালাওয়াত)

হজরত আলি রাযিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘যে ব্যক্তি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর জুমার দিন ১০০ বার দরূদ পাঠ করে, সে কেয়ামতের দিন এমন অবস্থায় উঠবে যে, তার চেহারায় নূরের জ্যোতি দেখে লোকেরা বলাবলি করতে থাকবে এই ব্যক্তি কী আমল করেছিল!’ (কানজুল উম্মাল)

জুমার দিন ছাড়াও দরূদ পাঠের অনেক ফজিলত রয়েছে। হাদিসের বিভিন্ন বর্ণনায় এসব ফজিলতের কথা ওঠে এসেছে-

১. হজরত ওমর বিন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নিশ্চয়ই বান্দার দোয়া-মুনাজাত আসমান ও জমিনের মাঝখানে ঝুলানো থাকে, তার কোনো কিছু আল্লাহর কাছে পৌঁছে না; যতক্ষণ না বান্দা তার নবির প্রতি দরূদ পাঠ করবে।’ (তিরমিজি)

২. নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন, ‘যে আমার ওপর একবার দরূদ পড়ে আল্লাহ তার ওপর দশবার দরূদ পড়েন।’ (মুসলিম)

৩. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কেয়ামতের দিন আমার সঙ্গে থাকার সবচেয়ে বেশি হকদার হবে সেই ব্যক্তি; যে আমার ওপর সবচেয়ে বেশি দরূদ পড়বে।’ (তিরমিজি)

৪. নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর উম্মতকে সতর্ক করে দিয়ে ঘোষণা করেন, ‘আমার কথা (নাম) যে ব্যক্তির সামনে আলোচনা করা হয় এবং সে আমার ওপর দরূদ পাঠ করে না; সে কৃপণ।’ (তিরমিজি)

৫. নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার প্রতি দরূদ পাঠ করে ফেরেশতারা তার প্রতি দরূদ পাঠ করে যতক্ষণ সে দরূদ পাঠ করতে থাকে।’ (মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ)

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, জুমার দিনসহ প্রতিদিন নিয়মিত বেশি বেশি দরূদ শরিফ পড়া। প্রিয় নবির প্রিয় উম্মাত হিসেবে নিজেকে তৈরি করা। অসংখ্য রহমত ও নাজাত পাওয়ার চেষ্টা করা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জুমার দিনসহ প্রত্যেক দিন বেশি বেশি দরূদ পড়ার তাওফিক দান করুন। হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/জিকেএস