পৌরসভা নির্বাচনে বেশ কিছু ভোটকেন্দ্র দখল করে পোলিং এজেন্টকে বের করে দেয়ার অভিযোগ করেছে বিএনপি। বুধবার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলটির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রহুল কবির রিজভী এ অভিযোগ করেন।রেজভী বলেন, আজ (বুধবার) সারাদেশে পৌরসভা নির্বাচন কেন্দ্র করে আমরা যে আশঙ্কা করছিলাম তার কিছু বৈশিষ্ট্য ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার পর থেকেই ফুটে উঠতে শুরু করেছে। পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে সরকারি চক্রান্তের প্রকৃত চেহারাটা আত্মপ্রকাশ করতে শুরু করেছে।তিনি বলেন, দেশব্যাপী পৌরসভা নির্বাচনী এলাকায় ভোটকেন্দ্র দখলের পাঁয়তারা গতকাল রাত থেকে শুরু করেছে শাসকদলের সশস্ত্র ক্যাডাররা। আজ (বুধবার) ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার পর থেকে দেশের কয়েকটি কেন্দ্রে বিএনপির এজেন্টদের ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে দেয়া হয়নি। ভোট ডাকাতি ঠেকাতে অনেক স্থানে জনগণের প্রতিরোধও শুরু হয়েছে।নির্বাচন কমিশনের অকার্যকারিতার কারণেই দেশে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন বহুদূরের লক্ষ্য হিসেবে আবারো মানুষের কাছে ফুটে ওঠছে উল্লেখ করে রিজভী বলেন, গতকাল রাত থেকে সংঘটিত বিভিন্ন ঘটনা থেকেই স্পষ্ট বোঝা যায়- সরকার আজকের নির্বাচনকে পুরোপুরি জালিয়াতির ওপর সাজাতে চেয়েছে।রিজভী আরো অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী সরকার রাষ্ট্রযন্ত্রকে কাজে লাগিয়ে তাদের ঐতিহ্য অনুযায়ী কল্পনাতিত গুণ্ডামী ও জালিয়াতির সাহায্যে অতীতে যেমন নির্বাচনগুলোকে তামাশায় পরিণত করেছিল এবারও সেই লক্ষণগুলো সকাল থেকেই দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। এমনকি কোনো কোনো নির্বাচনী এলাকায় ম্যাজিস্ট্রেটরাও শাসকদলের তাণ্ডবের কাছে অসহায়ত্ববোধ করছে।তিনি বলেন, গণতন্ত্রকামী মানুষদের আজ কঠিন পরীক্ষার সম্মুক্ষীণ হতে হচ্ছে। জনগণ ইতোমধ্যেই অনেক নির্বাচনী এলাকায় সরকারের বর্বরতম আক্রমণের মুখে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। বিকেল ৪টা পর্যন্ত জনগণ নিঃসঙ্কোচে ভোট প্রদান করে শাসকদলের অনভিপ্রেত অনাচারকে রুখে দিবে।নির্বাচন কমিশনকে সংবিধান কর্তৃক প্রদত্ত দায়িত্ব পালনে আহ্বান জানিয়ে রিজভী বলেন, পৌর নির্বাচন নিয়ে সরকারি চক্রান্তে বাধা দিয়ে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করতে নিজেদের আইনসম্মত কর্তৃত্ত্ব প্রয়োগ করুন। সরকারের দুষিত পরিকল্পনার বিবেকবর্জিত দুষ্কর্মের সঙ্গী হবেন না।তিনি আরো বলেন, গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা যাতে নির্বাচনী পরিবেশ সচক্ষে অবলোকন করতে পারে তার নিশ্চয়তা বিধান করুন। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যারা যেসব সাংবাদিকরা সরকারি নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন তাদের নির্বিঘ্নে দায়িত্ব পালন করতে দেয়ার নিশ্চয়তা দিন।
Advertisement
রিজভী অভিযোগ করে বলেন, শ্রীপুর পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সাংবাদিকদের বাড়িতে বাড়িতে পুলিশ হানা দিচ্ছে। শ্রীপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি নুর নবীকে না পেয়ে তার ভাতিজা শাওনকে ধরে নিয়ে গেছে। আলোকিত বাংলাদেশ শ্রীপুর প্রতিনিধি আ. মালেক, যুগান্তর শ্রীপুর প্রতিনিধি সাংবাদিক সুমন, ডেইলি স্টার শ্রীপুর প্রতিনিধি সাংবাদিক সোহেল, দিনকাল শ্রীপুর প্রতিনিধি সাংবাদিক কাজলের বাসায় গ্রেফতারের উদ্দেশে হানা দেয় পুলিশ। রাজশাহীর পুটিয়ার দিনকাল প্রতিনিধিকে গ্রেফতার করে তার বিরুদ্ধে গাড়ি পোড়ানোর মামলা দেয়া হয়েছে।রুহুল কবির রিজভী বলেন, লক্ষীপুরের রায়পুর পৌরসভায় ১, ৩, ৫, ৬ ও ৯ নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন কেন্দ্রে মঙ্গলবার রাত থেকেই প্রশাসনের ছত্রছায়ায় ছাত্রলীগ, যুবলীগের সন্ত্রাসীরা কেন্দ্র দখল করে নিয়ে নৌকা মার্কায় সিল মারছে। নাটোর সদর পৌরসভা তেবাড়িয়া ভোট কেন্দ্রে ধানের শীষের পোলিং এজেন্টদের দায়িত্ব নেয়ার আগেই পিটিয়ে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। বড়াইগ্রাম পৌরসভা মুখুয়া ভোট কেন্দ্রে ধানের শীষের পোলিং এজেন্ট জাহিদকে প্রিজাইডিং অফিসারের সামনে পিটিয়ে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়েছে।তিনি বলেন, বরগুনার বেতাগী পৌরসভা ২, ৩, ৪, ৫, ৬ নং ওয়ার্ডে বিভিন্ন কেন্দ্রে ধানের শীষের পোলিং এজেন্টদের জোর করে বের করে দেয়া হচ্ছে। পাথরঘাটা পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের ধানের শীষের এজেন্টদের ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। নৌকা প্রতীকের এজেন্ট খলিল পালোয়ান ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে প্রকাশ্যে নৌকা মার্কায় সিল মারছে।এছাড়া ঝালকাঠির নলছিটি, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ, নোয়াখালীর বসুরহাট, কুমিল্লার বরুড়া, মাদারীপুরের কালকিনি, জামালপুর সদর, বরিশালের মুলাদী, ফেনীর দাগনভূঞা, জয়পুরহাটের কালাই, চট্রগ্রামের সীতাকুন্ড, যশোরের মনিরামপুর, মানিকগঞ্জের সদর পৌরসভা, নড়াইলের কালিয়া, ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ড, নরসিংদীর মনোহরদী, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, পটুয়াখালীর কুয়াকাটার পৌরসভার বেশ কিছু ভোট কেন্দ্র থেকে বিএনপির পোলিং এজেন্টদের বের করে দিয়ে কেন্দ্র দখল করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন রিজভী।এনএম/এসআইএস/আরএস