আইন-আদালত

পুলিশি ‘অভিযানে’ তাজুলের মৃত্যু: ভিসেরা রিপোর্ট তলব

রংপুরের হারাগাছ থানা পুলিশের ‘অভিযানে’ তাজুল ইসলাম (৫৫) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যুর বিষয়ে ভুক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয় জনগণকে হয়রানি না করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। তাদের হয়রানি করা হচ্ছে কি না তা স্থানীয় প্রশাসনকে (রংপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার) নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে এ বিষয়ে শুনানি আরও এক সপ্তাহের জন্য মুলতবি করা হয়েছে। এছাড়া এ সময়ের মধ্যে ময়নাতদন্তের ভিসেরা রিপোর্ট দাখিল করার জন্যও বলেছেন আদালত।

Advertisement

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত আদেশের বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন।

তাজুল নিহত হওয়ার ঘটনায় অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারের নেতৃত্বে গঠিত চার সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ওপর শুনানির নির্ধারিত দিনে বুধবার (২৪ নভেম্বর) বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

শুনানিতে আজ রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত। অন্যদিকে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন নজরে আনা আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া শুনানি করেন।

Advertisement

আদেশের বিষয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত বলেন, কমিটির প্রতিবেদন ও তথ্য ইতিপূর্বে আদালতে দাখিল করা হয়। কিন্তু আদালতে ভিসেরা রিপোর্ট দাখিলের জন্য সময় চাওয়া হয়। আদালত এক সপ্তাহ শুনানি মুলতবি করে আগামী বুধবার পরবর্তী দিন ধার্য করেন।

তিনি আরও বলেন, অন্যপক্ষের আইনজীবী স্থানীয় জনগণকে হয়রানির অভিযোগ করেন। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে জানানো হয়, ওই ঘটনাসূত্রে হারাগাছ এলাকার কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়নি বলে রংপুর মহানগর পুলিশ জানিয়েছে। ভিসেরা রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত ভুক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয় জনগণকে যাতে কোনো ধরনের হয়রানি না করা হয়, তা নিশ্চিত করতে রংপুর মহানগর পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

এর আগে গত ৩ নভেম্বর রংপুরের হারাগাছ থানা পুলিশের ‘অভিযানে’ তাজুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির মৃত্যুর বিষয়ে একজন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারের নেতৃত্বে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। কমিটির প্রতিবেদন, মরদেহের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ও অপমৃত্যু মামলার অনুলিপি দাখিল করতেও নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।

এছাড়া, ওইদিন মরদেহের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ও অপমৃত্যু মামলার অনুলিপিও দাখিল করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে ওই তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর পরবর্তী শুনানির জন্য ১৫ নভেম্বর দিন ধার্য করা হয়। এরই মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে আসে। ওই প্রতিবেদনে ভিসেরা রিপোর্ট না দেখে আদালত সেটি চান। সবমিলিয়ে একসঙ্গে শুনানি হবে বলে জানা যায়।

Advertisement

এর আগে তাজুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তিকে নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগ ওঠে পুলিশের বিরুদ্ধে। রংপুরের ওই ঘটনায় গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন আদালতের নজরে এনে তা ২ নভেম্বর পড়ে শোনান আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। তখন এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষকে জানাতে বলেন আদালত।

তার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ওই ঘটনায় কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানতে চেয়েছিলেন। সে আদেশের পর ৩ নভেম্বর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে কমিটি গঠনের কথা জানায় পুলিশ। এরপর শুনানি শেষে আদালত এসব আদেশ দেন।

রাষ্ট্রপক্ষের উপস্থাপন করা তথ্যের মধ্যে সুরতহাল প্রতিবেদনের একটি কপি দাখিল করা হয়। রংপুরের জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের প্রস্তুত করা সুরতহাল প্রতিবেদনে মরদেহের অবস্থা স্বাভাবিক ছিল ও আঘাতের চিহ্ন ছিল না বলে উল্লেখ করা হয়।

ওইদিন জমা দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মৃত্যুর ঘটনায় মরদেহের সুরতহাল রিপোর্টে আঘাতের কোনো চিহ্ন নেই। ওই ব্যক্তির কাছে পাঁচ গ্রাম হেরোইন পাওয়া গিয়েছিল। ঘটনা তদন্তে চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে সাতদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত এই প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেছেন।

এর আগে গত ১ নভেম্বর সন্ধ্যায় রংপুরের হারাগাছ এলাকায় পুলিশের অভিযানের পর তাজুল ইসলামের মৃত্যু হয়। তিনি হারাগাছ পৌর এলাকার দালালহাট নয়াটারী গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন।

পুলিশি ‘নির্যাতনে’ তার মৃত্যু হয়েছে বলে খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী থানা ঘেরাও করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় বেশ কয়েকটি গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ।

স্থানীয়রা জানান, ১ নভেম্বর সন্ধ্যার পর হারাগাছের নতুন বাজার বছিবানিয়ার তেপথি মোড়ে অভিযানে যায় পুলিশ। এ সময় তাজুল ইসলামকে মাদকসহ আটকের পর মারধর করা হয়। তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলার উপক্রম হন। তখনই তাকে ধাক্কা দিলে পাশে দেয়ালে লেগে ঘটনাস্থলেই মারা যান তাজুল। এর প্রতিবাদে থানা ঘেরাও করে এলাকাবাসী। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

তবে হারাগাছ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শওকত আলী বলেন, তাজুল হেরোইন সেবন করছিলেন- এমন খবর পেয়ে সেখানে অভিযানে যায় পুলিশ। তাকে আটকের পর হ্যান্ডকাপ পরানো হলে তিনি মলত্যাগ করে ফেলেন। এ ঘটনার পর পুলিশ তাজুলকে স্থানীয়দের জিম্মায় দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এর কিছুক্ষণ পর খবর আসে তাজুল মারা গেছেন।

এফএইচ/ইএ/এএসএম