২০১৫ সালের প্রথম তিন মাস (জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ) দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও সরকারের সার্বিক সহযোগিতা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সময়োচিত নীতি-পদক্ষেপের কারণে দেশের অর্থনীতি ও আর্থিক খাত সুদৃঢ় অবস্থায় রয়েছে।সরকারের অন্তর্ভুক্তিমূলক আর্থসামাজিক উন্নয়ন কৌশলের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে গত কয়েক বছরের মতো এবারও বাংলাদেশ ব্যাংক বিচক্ষণ মুদ্রানীতি গ্রহণ করছে। পাশাপাশি অব্যাহত রেখেছে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর ব্যাংকিং কার্যক্রম। বিদায়ী বছরে জোরালো ছিল টাকার মান, বেড়েছে রিজার্ভ, বেড়েছে আমদানি রফতানি বাণিজ্যও। দেশের অর্থনীতি ও ব্যাংকিং খাতের কয়েকটি সূচক তুলে ধরা হলো-জিডিপি : ২০০৮-০৯ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৫ দশমিক শতাংশ। সেখানে সর্বশেষ অর্থবছর ২০১৪-১৫ তে ৬ দশমিক ৫১ শতাংশসহ গত ছয় অর্থবছরে গড়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ২ শতাংশ। বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি মন্দার পরিবেশেও অব্যাহতভাবে গড়ে ৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন দেশ-বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে। এ ধরনের প্রবৃদ্ধি বিশ্বেও বিরল। জিডিপি প্রবৃদ্ধির ধারামূল্যস্ফীতি : বাংলাদেশ ব্যাংক বিচক্ষণ মুদ্রানীতি দিয়ে মূল্যস্ফীতির হারকে নিয়ন্ত্রণ করছে। ইতোমধ্যেই এতে সাফল্য এসেছে। ২০১১ এর পর থেকে মূল্যস্ফীতির হার ধারাবাহিকভাবে কমছে। বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ডিসেম্বর ২০১৪ ও জুন ২০১৫ এর যথাক্রমে ৬ দশমিক ৯৯ ও ৬ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে আরো কমে নভেম্বর ২০১৫ শেষে ৬ দশমিক ২ শতাংশে নেমে এসেছে, যা সন্তোষজনক ও সহনীয়। এই অঞ্চলের মধ্যে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতির উত্থান-পতন সর্বনিম্ন-যা বিদেশি বিনিয়োগকারী আকর্ষণে সামষ্টিক স্থিতিশীলতার শক্তিশালী ভিতের পরিচায়ক। মূল্যস্ফীতির নিম্নমুখী ধারাআমদানি : ২০০৮-০৯ অর্থবছরে মোট আমদানি ব্যয় হয়েছিল ২২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার, সেখানে গত অর্থবছরে আমদানি ব্যয় হয়েছে ৪০ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ১১ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি। বছরের শেষভাগে এসে মূলধনী যন্ত্রপাতি ও শিল্পের কাঁচামাল আমদানির ঊর্ধ্বমুখী ধারা সামনের দিনগুলোতে উৎপাদন বাড়ানোর শক্ত পাটাতন তৈরি করতে সাহায্য করেছে। নভেম্বর ২০১৫ মাসে এলসি খোলা ও স্যাটেলমেন্ট গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে যথাক্রমে ২৩ দশমিক ৯ ও ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। আমদানি প্রবৃদ্ধির ধারা (বিলিয়ন ডলার)রফতানি : ২০০৮-০৯ অর্থবছরে মোট রফতানি আয় হয়েছে ১৫ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার, সেখানে গত অর্থবছরে মোট রফতানি আয় হয়েছে ৩১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ৩ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে রফতানি আয় হয়েছে ১২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৬ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি।রফতানি প্রবৃদ্ধির ধারা (বিলিয়ন ডলার)রেমিট্যান্স : ২০০৮-০৯ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছিল ৯ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রেকর্ড ১৫ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আসে। আর চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ৬ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের সমান। বাংলাদেশ ব্যাংকের নানা প্রণোদনা ও প্রচারণা, রেমিট্যান্স বিতরণের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ ও প্রদান পদ্ধতি সহজ ও গতিশীল করা এবং স্থিতিশীল টাকার মূল্য রেমিট্যান্সে সাফল্য ধরে রাখতে অবদান রেখে চলেছে। রেমিট্যান্সের ক্রমবর্ধমান ধারা (বিলিয়ন ডলার)বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ : ২০০৮-০৯ অর্থবছরের শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৭ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। বর্তমানে (২০ ডিসেম্বর ২০১৫) তা সাড়ে তিনগুণের বেশি বেড়ে ২৭ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে, যা দিয়ে দেশের আট মাসের মতো আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। ক্রমবর্ধমান বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ উন্নয়নে জোরালো ভূমিকা রাখছে। বৈদেশিক অর্থনৈতিক খাতের এই শক্তির জোরেই বর্তমান সরকার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতুর মতো বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চলেছে।বৈদেশিক মুদ্রার ক্রমবর্ধমান ধারা (বিলিয়ন ডলার)টাকার বিনিময় হার : দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ও উন্নয়নশীল অন্যান্য দেশগুলোর মুদ্রার তুলনায় টাকার মান অপেক্ষাকৃত স্থিতিশীল ও জোরালো অবস্থানে রয়েছে। সর্বশেষ ২০ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখে ডলার-টাকার গড় বিনিময় হার ছিল ৭৮ দশমিক ৭০ টাকা। মাথাপিছু আয় : বিবিএস’র সর্বশেষ তথ্য মতে, গত অর্থবছরের শেষে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ১৩১৪ ডলার। ২০১৩-১৪ অর্থবছর শেষে মাথাপিছু আয় ছিল ১০৪৪ ডলার।এসএ/একে/আরআইপি
Advertisement