জাতীয়

ছিনতাইকারী ধরতে বেরিয়ে এলো কিশোর গ্যাং ‘ভাইব্বা ল কিং’

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান। এ এলাকায় ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন এক দম্পতি। ফোন পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে যায় র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

Advertisement

এরপর পার্শ্ববর্তী এলাকায় অভিযান চালিয়ে আটক করা হয় চারজনকে। উদ্ধার করা হয় ছিনতাই হওয়া ঘড়ি ও ব্যাগ। এরপরই জানা যায়, ছিনতাইয়ে জড়িত সবাই কিশোর গ্যাং ‘ভাইব্বা ল কিং’র সদস্য। প্রায় তিন বছর ধরে মোহাম্মদপুরে চুরি-ছিনতাই ও চাঁদাবাজি করে আসছে তারা। এই গ্রুপের আরও ১৫-২০ জন সদস্য রয়েছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে মধ্যরাতে গ্যাংয়ের প্রধানসহ পাঁচজনকে আটক করা হয়।

র‌্যাব জানায়, এই কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের। স্কুলের গণ্ডি পার হতে না পারলেও নিজেরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একাধিক ভাষায় পারদর্শী হিসেবে পরিচয় দিত। তারা পেশাগতভাবে কেউ লেগুনা, কেউ অটোচালক। আবার কেউ দোকানের কর্মচারী ও নির্মাণকর্মী।

প্রাথমিকভাবে কারও সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক দলের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। তবে তাদের কিছু পৃষ্ঠপোষকের তথ্য পাওয়া গেছে, শিগগির তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করে র‌্যাব।

Advertisement

মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীতে ছিনতাই-চুরি বেড়ে যাওয়ার কিছু হটস্পট চিহ্নিত করা হয়। এর মধ্যে মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান, বসিলা ও আশপাশের এলাকায় র‌্যাবের গোয়েন্দা কার্যক্রম ও টহল জোরদার করা হয়।

তবে যে ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কিশোর গ্যাং ‘ভাইব্বা ল কিং’ বেরিয়ে আসে তা সোমবার (২২ নভেম্বর) রাতের ঘটনা। এসময় র‌্যাব-২ কন্ট্রোল রুমে ফোন আসে ছিনতাইয়ের। ফোন পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় র‌্যাবের টহল দল।

পরে ভুক্তভোগীর তথ্যের ভিত্তিতে রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থান এলাকায় অভিযান চালিয়ে মো. নাঈম (১৪), মো. রুমান (১৮), মো. তামিম খাঁন (১৪) ও মো. সজীবকে (১৭) আটক করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত ধারালো অস্ত্র, খেলনা পিস্তল ও মাদক উদ্ধার করা হয়।

Advertisement

পরে তাদের তথ্যের ভিত্তিতে মোহাম্মদপুরের চাঁদ উদ্যানের সাতমসজিদ হাউজিং এলাকায় অভিযান চালিয়ে ‘ভাইব্বা ল কিং’র নেতা শরীফ ওরফে মোহন (১৮), সদস্য মো. উদয় (১৯), মো. শাকিল (১৯), মো. নয়ন (১৮) ও মো. জাহিদকে (১৮) আটক করা হয়।

এসময় তাদের কাছ থেকে লোহার তৈরি চারটি ছুরি, একটি স্টিলের হাতলযুক্ত কুঠার, ৫০ পুরিয়া গাঁজা, দুটি স্টিলের তৈরি ছোরা, একটি স্টিলের তৈরি হোল্ডিং চাকু, একটি প্লাস্টিকের পিস্তল, ৬৫ পিস ইয়াবা ও ইয়াবা খাওয়ার সরঞ্জামাদি এবং তিনটি মোবাইল জব্দ করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটকরা জানায়, তাদের গ্রুপে ১৫-২০ জন সদস্য রয়েছে। মোহনের নেতৃত্বে দু-তিন বছর আগে গ্রুপটি গঠন করা হয়। তারা মোহন সিন্ডিকেট নামেও পরিচিত। এই গ্রুপের সদস্যরা আগে ‘লেবেল হাই’ গ্যাং-এ অন্তর্ভুক্ত ছিল। পরে তারা ৫-৬টি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে যায়। গ্রুপটির ফেসবুক ও টিকটকে নানা কার্যক্রম রয়েছে।

এই কিশোর গ্যাংটি মোহাম্মদপুর এলাকায় চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কার্যক্রম, চুরি-ডাকাতি আধিপত্য বিস্তার করে আসছিল। এছাড়া ভাড়ায় বিভিন্ন স্থানে হুমকি ও মারপিটে অংশগ্রহণ করে তারা। ইভটিজিংসহ বিভিন্ন অসামাজিক কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত।

র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, এ গ্রুপের সদস্যরা নিজেদের কিং ভাবে। তারা অপরাধ কার্যক্রমের মাধ্যমে নিজেদের কিং হিসেবে উপস্থাপন করতে চায়।

এক প্রশ্নের জবাবে র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, তাদের সঙ্গে রাজনৈতিক কোনো দলের সংশ্লিষ্টতা পাইনি। তবে কিছু পৃষ্ঠপোষকের নাম পেয়েছি, আশা করছি শিগগির তাদের গ্রেফতার করতে পারবো। পৃষ্ঠপোষকরা বিভিন্ন স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য তাদের ব্যবহার করতো।

টিটি/জেডএইচ/জেআইএম