কৃষি ও প্রকৃতি

লাউ চাষ করে চার ভাই লাখোপতি

লাউ চাষ করে লাখোপতি হয়েছেন ফরিদপুরের মধুখালীর এক পরিবারের চার ভাই। সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার মেকচামী ইউনিয়নের মেকচামী গ্রামের তাজউদ্দীন শেখ ও তার তিন ভাই বায়োজিদ শেখ, আবু সাঈদ শেখ ও আলমগীর শেখ চলতি মৌসুমে লাউ চাষ করে নিজেরা হয়েছেন স্বাবলম্বী হয়েছেন। এলাকায় আলোড়ন তুলেছেন লাউ চাষে। তাদের এই সাফল্য দেখে অনেকেই এখন লাউ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

Advertisement

জানা যায়, তাজউদ্দীন শেখ দুই বছর আগে থেকে লাউ চাষ করছিলেন। তবে পরিমাণে ছিল কম। গত দুই বছরের অভিজ্ঞতা আর ভালো লাভ পেয়ে এবার তার সঙ্গে যোগ দিয়েছেন ওই তিন ভাইও। এবার তারা জমির পরিমাণ বাড়িয়ে তিন একর জমিতে লাউ চাষ করেছেন। তাজউদ্দীনের ভাইয়ের ছেলে টিটোন মাস্টার্স পর্যন্ত পড়াশুনা শেষ করেছেন আর রাজু অর্নাস পড়ছেন।

ছাত্রাবস্থায় করোনাকালে বসে না থেকে বাবা ও চাচাদের সঙ্গে উন্নত লাউ চাষের কাজে যোগ দেন তারা। ভাদ্র মাস থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত তারা ১৫ লাখ টাকার লাউ বিক্রি করেছেন। এখনো জমিতে যে লাউ অবশিষ্ট রয়েছে তাতে আরো প্রায় ৫ লাখ টাকার লাউ বিক্রি করতে পারবেন বলে তারা আশা করছেন।

চাষি তাজউদ্দীন শেখ জাগো নিউজকে বলেন, আগে এসব জমিতে আখ এবং মরিচ চাষ হতো। এসব ফসল আবাদে লোকসান হওয়ায় গত দুই বছর ধরে পরীক্ষামূলকভাবে লাউ চাষ করছি।

Advertisement

গত বছর এক একর জমিতে লাউ চাষ করেছিলাম। ভালো ফলন ও লাভ হওয়ায় এবছর তিন একর জমিতে লাউ চাষ করেছি। সঙ্গে তিন ভাইদের সম্পৃক্ত করেছি। সব মিলিয়ে এবার বাম্পার ফলনের পাশাপাশি ভালো দামও পেয়েছি।

তিনি আরও বলেন, তিন একর জমিতে বাঁশের মাচা, সুতা ও অন্যান্য খরচ বাবদ লাখ দুয়েক টাকার মতো খরচ হয়েছে। আগামী বছর জমির পরিধি বাড়িয়ে চার একরজুড়ে লাউ চাষ করার আশা আছে। সে অনুযায়ী প্রস্তুতি চলছে বলেও তিনি জানান।

লাউ চাষি আবু সাঈদ জাগো নিউজকে বলেন, আমরা অল্প লাউ চাষ করতাম প্রথম দিকে। তবে হিসাব করে দেখা যেতো লাউ চাষে আখ ও মরিচ চাষের চেয়েও অনেক বেশি লাভ। এজন্য আমরা চার ভাই মিলে লাউ চাষে ঝুঁকে পড়েছি। আগামীতে আরো বেশি পরিমাণ জমিতে লাউ চাষ করবো।

অন্য চাষি (ছোট ভাই) আলমগীর বলেন, বছরজুড়ে লাউ চাষ করছি আমরা। আমার ভাতিজা টিটোন ও রাজু উন্নত জাতের লাউ চাষে আমাদের উৎসাহিত করে। এবছর আমরা অনেক লাভবান হয়েছি।

Advertisement

তিনি আরও জানান, বাণিজ্যিকভাবে আমরা লাউ চাষ করলেও স্থানীয় কৃষি অফিস থেকে সার ও কীটনাশক দেয়া হয়নি। এমনকি কোনো সহযোগিতাও পাননি বলে তিনি অভিযোগ করেন।

টিটোন বলেন, আমরা এখন সারাবছর দুই জাতের লাউ আবাদ করছি। সেটা হলো গ্রিন ম্যাজিক ও মেরিনা। ভালো ফলন পাওয়ায় আমরা আগামীতে আরো এক একর বেশি জমিতে লাউ চাষ করবো বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মাস্টার্স শেষ করে চাকরি না পেয়ে বাবা চাচাদের সঙ্গে লাউ চাষে সময় দিচ্ছি। তাদের সহযোগিতা করছি।

রাজু বলেন, লেখাপড়ার পাশাপাশি বাড়িতে বসে না থেকে পরিবারের সাথে লাউ চাষ করছি। এতে করে সবজির চাহিদা পূরণসহ অর্থনৈতিকভাবে আমার পরিবার ও সবাই লাভবান হচ্ছে।

এ বিষয়ে মধুখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলভির রহমান জানান, এই অঞ্চলে তারা লাউ চাষে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তার দেখাদেখি অনেকেই লাউ চাষের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

এ অঞ্চলে আগামী বছর লাউ চাষের পরিমাণ আরো বৃদ্ধি পাবে। লাউ চাষের ব্যাপারে কৃষকদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, কৃষকেরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে আমরা তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করবো এবং করে থাকি। কেউ যদি যোগাযোগ না করেন তাহলে আমরা কিভাবে সহযোগিতা করবো।

এন কে বি নয়ন/এমএমএফ/এমএস