ফিচার

জন্ম নিবন্ধন কোথায় ও কীভাবে করবেন?

জন্ম নিবন্ধন করা সবার জন্যই জরুরি। জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যেই শিশুর জন্ম নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক। যদি না করা হয় তাহলে পরবর্তীতে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন।

Advertisement

জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদ অনুযায়ী, শিশুর জন্মগ্রহণের পর জন্ম-নিবন্ধীকরণ করার কথা বলা হয়েছে। উন্নত বিশ্বের সব দেশেই শিশু জন্মের পরই নিবন্ধন করা হয়।

বাংলাদেশেও প্রতিটি শিশু জন্মের পর পরই জন্ম নিবন্ধনের বাধ্যবাধকতা আছে। তবে কীভাবে ও কোথায় জন্ম নিবন্ধন করতে হবে তা অনেকেরই অজানা।

জন্ম নিবন্ধ তৈরিতে যা যা লাগবে

Advertisement

* নিবন্ধনাধীন ব্যক্তির বয়স পাঁচ বছরের মধ্যে হলে-

>> তথ্য সংগ্রহকারীর প্রত্যয়ন >> অথবা ইপিআই কার্ডের সত্যায়িত অনুলিপি।>> অথবা সংশ্লিষ্ট চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্র বা উক্ত প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত জন্ম সংক্রান্ত সনদের সত্যায়িত অনুলিপি।>> অথবা নিবন্ধকের যে রকম প্রয়োজন মনে করেন জন্ম সংক্রান্ত সেরূপ অন্য কোন দলিলের সত্যায়িত অনুলিপি।অথবা, তথ্য সংগ্রহকারী হিসাবে নিবন্ধক কর্তৃক নির্দিষ্টকৃত কোনো এনজিও কর্মীর প্রত্যয়ন।

* নিবন্ধনাধীন ব্যক্তির বয়স পাঁচ বছরের বেশি হলে-

>> বয়স প্রমাণের জন্য এমবিবিএস ডাক্তারের ও জন্মস্থান বা স্থায়ীভাবে বসবাসের স্থান প্রমাণের জন্য সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলর/সদস্যের প্রত্যয়ন।

Advertisement

>> অথবা বয়স ও জন্মস্থান প্রমাণের জন্য তথ্য সংগ্রহকারী হিসাবে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ বা প্রধান শিক্ষক বা তৎকর্তৃক মনোনীত শিক্ষক বা কর্মকর্তার প্রত্যয়ন।

>> অথবা বয়স ও জন্মস্থান প্রমাণের জন্য ইপিআই কার্ড বা পাসপোর্ট বা মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট বা কোনো চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের জন্ম সংক্রান্ত ছাড়পত্র বা উক্ত প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত জন্ম সংক্রান্ত সনদের সত্যায়িত অনুলিপি।

>> তথ্য সংগ্রহকারী হিসাবে নিবন্ধক কর্তৃক নির্দিষ্টকৃত কোনো এনজিও কর্মীর প্রত্যয়ন।

জন্ম তথ্য প্রদান করবেন কারা?

শিশুর পিতা বা মাতা বা অভিভাবক শিশুর জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে জন্ম সংক্রান্ত তথ্য নিবন্ধকের নিকট প্রদানের জন্য দায়ী থাকবেন। এ ছাড়াও যারা কোনো ব্যক্তির জন্ম নিবন্ধনের জন্য নিবন্ধকের নিকট তথ্য প্রেরণ করতে পারবেন:

>> ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও সচিব>> গ্রাম পুলিশ>> সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভার কাউন্সিলর>> ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন অথবা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মী ও পরিবার কল্যাণকর্মী>> স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ সেক্টরে নিয়োজিত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের (এনজিও) মাঠকর্মী>> কোনো সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিক বা মাতৃসদন বা অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে জন্মগ্রহণের ক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত মেডিকেল অফিসার অথবা ডাক্তার বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা>> নিবন্ধক কর্তৃক নিয়োজিত অন্য কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী>> জেলখানায় জন্মের ক্ষেত্রে জেল সুপার বা জেলার বা তৎকর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি>> পরিত্যক্ত শিশুর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা;>> নির্ধারিত অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান।

জন্ম নিবন্ধন করার পদ্ধতি

বাংলাদেশে জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রদানের শুরুতেই সশরীরে ফরম পূরণ করে নিবন্ধ করতে হতো। যা এখনো চালু আছে। তবে চাইলে অনলাইনের মাধ্যমেও জন্ম নিবন্ধন করা যাবে। যদি অফলাইনে করতে চান তাহলে আবেদনকারীকে অবশ্যই নির্দিষ্ট কার্যালয়ে যেতে হবে। সেখান থেকে জন্ম নিবন্ধনের ফরম তুলে তা পূরণ করতে হবে।

ফরমটি সঠিকভাবে পূরণ করে প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র ফরমের সঙ্গে যক্ত করতে হবে। এরপর ফরমটি ঠিকানা অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন অফিস বা সিটি কর্পোরেশন আওতাধীন ওয়ার্ড কমিশনে জমা দিতে হবে।

এরপর সেখান থেকে জন্ম সদন প্রদানের একটি নির্দিষ্ট তারিখ লিখে কুপন দেবে। নির্দিষ্ট তারিখে সশরীরে উপস্থিত হয়ে কুপন দেখিয়ে স্বাক্ষর করে তবেই নিতে পারবেন জন্ম সনদ। তবে তা হাতে পাওয়ার পর অবশ্যই সব তথ্য ও অফিসারদের স্বাক্ষর ঠিক আছে কি না তা দেখে নিতে হবে।

জন্ম নিবন্ধন তৈরির ফি কত?

২০১০ সালে জুন মাস পর্যন্ত বিনামূল্যে বাংলাদেশে জন্ম নিবন্ধনের সুবিধা ছিলো। তবে এরপর থেকে নির্দিষ্ট বয়সের পর থেকে ফি আদায় করা হয়। দেশে আবেদনের ক্ষেত্রে- শিশু জন্মের ৪৫ দিন পর্যন্ত বিনামূল্যে, ৪৫ থেকে ৫ বছর পর্যন্ত ২৫ টাকা, শিশু জন্মের ৫ বছর পর ৫০ টাকা ফি দিতে হবে।

অন্যদিকে বিদেশে আবেদনের ক্ষেত্রে- শিশু জন্মের ৪৫ দিন পর্যন্ত বিনামূল্যে, ৪৫ থেকে ৫ বছর পর্যন্ত ১ মার্কিন ডলার, শিশু জন্মের ৫ বছর পর ১ মার্কিন ডলার।

জন্ম নিবন্ধন কোথায় করবেন?

ব্যক্তির জন্মস্থান বা স্থায়ী ঠিকানা অথবা বর্তমানে বসবাস করছেন এমন যে কোনো স্থানের নিবন্ধকের কাছে জন্ম নিবন্ধন করানো যাবে। জন্ম নিবন্ধনের জন্য যারা নিবন্ধক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন-

>> ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বা সরকার কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা বা সদস্য>> পৌরসভার মেয়র বা তৎকর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত অন্য কোনো কর্মকর্তা বা কাউন্সিলর>> সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বা তৎকর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা বা কাউন্সিলর>> ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট বা তৎকর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা বা>> বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত বা তৎকর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় জোনাল এক্সিকিউটিভ অফিসারগণ, চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনসমূহে সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলরগণ, বরিশাল, সিলেট ও রংপুর সিটি কর্পোরেশনে প্রধান কার্যালয়ে ও নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনে পুরোনো পৌরসভা কার্যালয়ের কর্মকর্তাগণ জন্ম নিবন্ধকের দায়িত্ব পালন করছেন।

জেএমএস/জেআইএম