ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র বলেছেন, যারা বিবাহ-বিচ্ছিন্ন তাদের প্রতি অনুরোধ, আপনাদের মধ্যে ঝগড়া থাক। সন্তানকে তার বাবার থেকে আলাদা করবেন না। এতে মানুষকে ভালোবাসার ভিত আলগা হয়ে যায়।
Advertisement
১৯ নভেম্বর বিশ্ব পুরুষ দিবস নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন। শ্রীলেখা বলেন, ৩৬৪ দিনই তো পুরুষ ‘দি’ বস! মাত্র একটি দিন নারীদের জন্য। কেবল ওই দিনটাই নারী ‘দি’ বস। আমি অবশ্য এই দিনটির কথা প্রথম জানলাম।
‘আমার পুরুষ বিদ্বেষ নেই। নারীবাদীও নই। তাই নারী-পুরুষ ভেদাভেদে একেবারেই বিশ্বাসী নই। বরং লিঙ্গভেদের ঊর্ধ্বে যে দিন সমাজ উঠতে পারবে, সে দিন সকলের একটাই পরিচিতি হবে। আমরা মানুষ। আমি সে দিন খুব খুশি হবো। সে দিন থেকে আর এমন বিশেষ দিবস পালনের প্রয়োজনও পড়বে না।’
তিনি বলেন, আমরা এখনও পুরুষতান্ত্রিক সমাজের বাসিন্দা। এই ধরনের সমাজের ছত্রছায়ায় বেড়ে ওঠার কুফল কী জানেন? পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে একজন নারী আর একজন নারীকে বিচার করে থাকেন। কটাক্ষ করেন পোশাক নিয়ে, আচার ব্যবহার নিয়ে, বয়স নিয়ে। তারা বুঝতেও পারেন না যে, আসলে তারাও প্রকারান্তরে পুরুষতন্ত্রের শিকার। পুরুষদের মতো করে নিজেরই সমলিঙ্গকে দেখছেন এবং অবচেতনে সমর্থন করছেন পুরুষতন্ত্রের চিন্তাভাবনাকে।
Advertisement
‘এ ক্ষেত্রে আমার সঙ্গে কুকুর নিয়ে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘটনার উদাহরণ দিই। আমার যদি তারকা বা নামজাদা স্বামী থাকতেন, তাহলে কিন্তু অন্যরকম ব্যবহার পেতাম। একজন বিবাহ-বিচ্ছিন্ন নারী জিতে যাবেন সব বিষয়ে? স্বাধীনভাবে চলবেন, কথা বলবেন? গণমাধ্যম কেন তাকে সমর্থন জানাবে? কেউ মানতে পারেন না। ফলে, প্রতিবেশী নারীও নির্দ্বিধায় আমার গায়ে হাত তুলতে পারেন। কেউ তার প্রতিবাদ করেন না।’
এই অভিনেত্রী বলেন, ছেলেদের বুঝি কান্না পায় না? বিশ্ব পুরুষ দিবসে ছকে বাঁধা কিছু ধারণা ভেঙে ফেলুন। ‘একা’ নারী তরবারি হয়ে উঠবে, চোখে বেঁধে সবার। কেন আমি নমনীয়, কমনীয় হবো না? প্রশ্নও ওঠে। আমি কিন্তু যথেষ্ট নমনীয় এবং কমনীয়। তবে প্রয়োজন বুঝে। সকলের কাছে নয়। কেউ আমার মাথায় চেপে বসবেন আর আমি তার বিরোধিতা করবো না, সেটা হবে না। শুধু নিজের জন্য নয়, অন্যের প্রতি অন্যায় হতে দেখলেও আমি আওয়াজ তুলি, তুলবও।
এত কথার পরেও বলব, আমারও কিন্তু প্রিয় পুরুষ আছেন। আমার বাবা সন্তোষ মিত্র। যিনি সম্প্রতি আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছেন। আমার মনে হয়, সব মেয়েরই প্রিয়তম পুরুষ বোধহয় তার বাবা। তাই আর বিশেষ দিনে পুরুষদের প্রতি আমার বিশেষ বার্তা, মন্দিরের দেবীকে পুজো করার পাশাপাশি দয়া করে সম্মান দিন নারীকেও। শুধু নিজের মা-বোন নন, অন্যের মা-বোনও যেন আপনার থেকে সম্মান পান। তবেই আপনিও সম্মান ফেরত পাবেন।
পুরুষ মানুষদের বলছি, এই দিন থেকে আপনারা পুরুষের থেকেও বেশি করে ‘মানুষ’ হয়ে উঠুন।
Advertisement
ইএ/এমএস