জুমার দিন। মুসলিম উম্মাহর ইবাদত-বন্দেগির নির্ধারিত দিন। দিনটিকে সদরে গ্রহণ করেছেন মুমিন মুসলমান। এ দিনের ফজিলত অনেক বেশি। জুমার দিনের ফজিলতগুলো হাদিসের একাধিক বর্ণনায় ওঠে এসেছে। বিশেষ কারণে দিনটি মর্যাদার দাবি রাখে।
Advertisement
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সূর্য উঠা দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিন সর্বোত্তম। এ দিন আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এ দিন তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে এবং এ দিন তাঁকে জান্নাত থেকে বের করা হয়েছে।’ অন্য বর্ণনায় এসেছে, এ দিনটিতেই কেয়ামত অনুষ্ঠিত হবে। (মুসলিম)
১. মুসলিম উম্মাহর জন্য উপহার
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমরা সর্বশেষ উম্মাত কিন্তু কেয়ামতের দিন আমরা হব অগ্রগামী। যদিও সব উম্মাতকে (আসমানি) কিতাব দেওয়া হয়েছে আমাদের আগে, আর আমাদের কিতাব দেওয়া হয়েছে সব উম্মাতের শেষে। এরপর যে দিনটি আল্লাহ আমাদের জন্য নির্ধারণ করেছেন, সেদিন সম্পর্কে তিনি আমাদের হেদায়াতও দান করেছেন। সেদিনের ব্যাপারে অন্যান্যরা আমাদের পেছনে রয়েছে, (যেমন)- ইয়াহুদিরা (আমাদের) পরের দিন (শনিবার) এবং খৃষ্টানরা তাদেরও পরের দিন (রোববার)।’ (মুসলিম)
Advertisement
২. কোরবানির সাওয়াব পাওয়ার দিন
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘জুমার দিনে ফেরেশতাগণ বিশেষ রেজিস্টার নিয়ে মসজিদের প্রতিটি দরজায় দাঁড়িয়ে যান। তাঁরা মসজিদে আগমনকারী মুসল্লিদের নাম ধারাবাহিকভাবে লিখতে থাকেন। এরপর যখন ইমাম (মিম্বারে) এসে যান, তখন তারা রেজিস্টার বন্ধ করে খুতবা শুনতে থাকেন।
যে সবার আগে মসজিদে প্রবেশ করেন, সে একটি উট আল্লাহর রাস্তায় কোরবানি করার সাওয়াব লাভ করে। যে দুই নম্বরে প্রবেশ করে, সে একটি গরু আল্লাহর রাস্তায় কোরবানি করার সাওয়াব পায়। যে তিন নম্বরে প্রবেশ করে, সে একটি দুম্বা কোরবানি করার সাওয়াব পায়। যে চার নম্বরে প্রবেশ করে, সে একটি মুরগি দান করার সাওয়াব লাভ করে। আর যে পাঁচ নম্বরে প্রবেশ করে, সে একটি ডিম আল্লাহর রাস্তায় দান করার সাওয়াব পায়।’ (বুখারি, মুসলিম, মুসনাদে শাফি, মুসনাদে হুমাইদি)
৩. গুনাহ মাফের দিন
Advertisement
হজরত আবু হুরায়রাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি গোসল করে জুমার নামাজে এলো, এরপর সাধ্যমত (সুন্নাত) নামাজ আদায় করলো, এরপর ইমামের খুতবাহ শেষ হওয়া পর্যন্ত চুপ থাকলো; এরপর ইমামের সঙ্গে (জুমার) নামাজ আদায় করল, এতে তার দুই জুমার মধ্যবর্তী দিনসমূহ এবং আরো তিন দিন (মোট ১০ দিনের) গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।’
অন্য বর্ণনায় এসেছে, আর যে ব্যক্তি (অহেতুক) কঙ্কর স্পর্শ করল সে অনর্থক, বাতিল, ঘৃণিত ও প্রত্যাখ্যানযোগ্য কাজ করলো।’ (মুসলিম)
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার নামাজ আদায়ের জন্য উত্তমরূপে অজু করে (মসজিদে) উপস্থিত হয়, এরপর চুপ করে মনোযোগ দিয়ে খুত্ববাহ শুনে, তার (ঐ) জুমা থেকে (পরবর্তী) জুমা পর্যন্ত বরং অতিরিক্ত আরো তিন দিনের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। আর যে ব্যক্তি পাথর কুচি অপসারণ বা নাড়াচাড়া করলো সে অনর্থক কাজ করলো।’ (আবু দাউদ)
হজরত সালমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিনে সুন্দর করে গোসল করবে, এরপর তেল ব্যবহার করবে এবং সুগন্ধি নেবে, তারপর মসজিদে গমন করবে, দুই মুসল্লির মাঝে জোর করে জায়গা নেবে না, সে নামাজ আদায় করবে এবং ইমাম যখন খুতবা দেবেন, (তখন) চুপ করে মনোযোগসহকারে তাঁর খুতবা শুনবে। দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ে তার সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। (আবু দাউদ)
৪. দোয়া কবুলের দিন
জুমা দিনের ফজিলতের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিকটি হলো এ দিনে এমন একটি সময় রয়েছে যখন দোয়া করলে তা কবুলের আশা করা যায়। হাদিসের একাধিক বর্ণনায় এসেছে-
হজরত আনাস ইবনু মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘জুমার দিনের যে মুহুর্তে (দোয়া কুবুল হওয়ার) আশা করা যায় তা আসরের পর থেকে সূর্যাস্তের মধ্যে তালাশ করো।’ (তিরমিজি, মুসলিম, মিশকাত, তালিকুর রাগিব)
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, জুমার দিনে একটা এমন সময় আছে, যে সময়ে কোনো মুমিন বান্দা আল্লাহর কাছে ভালো কোনো কিছু প্রার্থনা করলে, অবশ্যই আল্লাহ তাঁকে তা দান করবেন। (মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ)
জুমার দিনে দোয়া কবুল হওয়ার সে মহামূল্যবান সময় কখন?
এ সম্পর্কে ৪৫টা মতামত পাওয়া যায়। তবে সর্বাধিক প্রসিদ্ধ মত হলো, আসরের নামাজের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত সময় দোয়া কবুলের সময়। যা হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে। আর সে সময়টি হলো আসরের পর থেকে সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত। (মুসনাদে ইবনে আবি শাইবা, তিরমিজি)
৫. জুমা না পড়ার পরিণতি
হজরত আবদুল্লাহ ইবনু ওমর ও আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, তারা উভয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তার মিম্বারের সিড়িতে দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছেন, ‘যারা জুমার নামাজ ত্যাগ করে তাদেরকে এ অভ্যাস বর্জন করতে হবে। নতুবা আল্লাহ তাদের অন্তরে সীল (মোহর) মেরে দিবেন; এরপর তারা গাফিলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।’ (মুসলিম)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, জুমার দিন আগে আগে মসিজদে যাওয়া। দিনটি ইবাদত-বন্দেগি ও ভালো কাজে অতিবাহিত করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জুমার দিনের হক আদায় করে ইবাদত-বন্দেগি করার তাওফিক দান করুন। হাদিসের উপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জিকেএস