কৃষি ও প্রকৃতি

ফরিদপুরের চরাঞ্চলে শীপুর কৃষি বিপ্লব

ফরিদপুরের চরভদ্রাসনের মাথাভাঙ্গা গ্রামের পদ্মার পাড় এলাকায় কাশবনে ছেয়ে গিয়েছিল। এ কাশবন ভেঙে চরাঞ্চলে কৃষি বিপ্লব ঘটিয়েছেন রেজাউল হায়াত শীপু। উপজেলার বিএস ডাঙ্গী গ্রামের প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শফিউদ্দিন খালাসীর পুত্র শীপু।

Advertisement

শিপু ফরিদপুর পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে অফিস তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে চাকরি করেন। পাশাপাশি অবসর সময় কৃষিকাজে লাগিয়ে পদ্মার চরে প্রায় সাড়ে চারশত বিঘা অনাবাদি জমির (দেড়শত একর) কাশবন উপড়ে ফেলে নিষ্ফলা জমিতে কৃষি কাজ করছেন। এখানে উৎপাদন করছেন শত শত মণ ধান, সরিষা, মসুর ও মাসকালাই।

ফরিদপুর বিএডিসির ডাল ও তৈলবীজ খামারের উপ-পরিচালকের পরামর্শে এবং ‘একখণ্ড জমিও অনাবাদী থাকবে না’ প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণায় উদ্ধুদ্ধ হয়ে তিনি পদ্মার চরের কাশবন ভেঙে কৃষি বিপ্লব ঘটিয়েছেন তিনি।

রেজাউল হায়াত শীপু জানান, বর্তমানে আমার বাড়ি উপজেলা সদরে। আমার পুরাতন বসতভিটা ঘিরে মাথাভাঙ্গা গ্রামে পদ্মার পাড়ে জেগে ওঠে বিশাল চর। কাশবন বেষ্টিত প্রায় ওই চর প্রায় ৩০ বছর ধরে জঙ্গলা-অনাবাদি জমি হিসেবে পড়ে ছিল।

Advertisement

প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা ও ফরিদপুর বিএসডিসি’র উপ-পরিচালকের পরামর্শে ২০২০ সাল থেকে কাশবন উপড়ে ফেলে নিষ্ফলা জমিগুলো আবাদযোগ্য করে গড়ে তুলেছি। তিনি আরও জানান, প্রথমে মেশিন দিয়ে বিশাল কাশবন জঙ্গলমুক্ত করা হয়।

পরে বড় ট্রাক্টর দিয়ে পর পর চার দফায় চাষ দিয়ে জমিগুলো আবাদযোগ্য করা হয়। বন-জঙ্গল পরিষ্কার ও দেড়শত একর জমি আবাদযোগ্য করে গড়ে তুলতে প্রায় ৮ থেকে ৯ মাস লেগেছে। এতে খরচ হয়েছে প্রায় ১২ লাখ টাকা। এছাড়া মাসে ৩৫ হাজার টাকা ব্যয়ে নিয়মিত তিনজন দিন মজুরকে জমিগুলো পরিচর্চা কাজে লাগানো হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ কাশবন ভেঙে এখন পর্যন্ত ২৫০ বিঘাত জমিতে মাসকলাই ফসল, ১১০ বিঘাতে মসুর, ৫০ বিঘায় সরিষা ও ২৫ বিঘা জমিতে ধান আবাদ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত বিক্রি করা ফসলের মধ্যে সাড়ে ৩ লাখ টাকার তিল বীজ, ৪ লাখ টাকার কলাই, সোয়া ২ লাখ টাকার মসুর ও ২ লাখ টাকার ধানসহ মোট প্রায় পৌনে ১২ লাখ টাকার ফসল বিক্রি করেছেন।

আর এ বছরের ফসলগুলো ঘরে তুলতে পারলে তিনি লাভের মুখ দেখবেন বলে জানিয়েছেন। এছাড়া ফসলী মাঠ ঘেঁষে তিনি একটি গরু ও ছাগলের ফার্ম গড়েছেন। এর নাম দিয়েছেন ‘তাজ এগ্রো ফার্ম’। উক্ত ফার্মে ৩৫টি ছাগল ও ৮টি গরু রয়েছে।

Advertisement

মো. রেজাউল হায়াত শীপু আরও বলেন, আমার নিজ উদ্যোগে নিজের পুঁজি খাটিয়ে এসব করেছি। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে পদ্মার চরাঞ্চলে পড়ে থাকা আরও অনেক কাশবন আবাদযোগ্য করে গড়ে তোলা সম্ভব।

এ বিষয়ে চরভদ্রাসন উপজেলা কৃষি অফিসার প্রতাপ মণ্ডল জানান, ইতিমধ্যে উপজেলার অনেকেই পদ্মার চরে নিষ্ফলা কাশবন ভেঙে আবাদযোগ্য করে তুলছেন। আমরা তাদের ব্যাংক লোন সহায়তা, সঠিক পরামর্শ ও অফিসিয়াল যাবতীয় সহায়তা করছি। তিনি আরও বলেন, মো. রেজাউল হায়াত শীপু আমাদের কোনো সাহায্য সহযোগিতা চাইলে আমরা তাকে অবশ্যই সব ধরনের সহায়তা করবো।

এন কে বি নয়ন/এমএমএফ/এএসএম