মতামত

পে-স্কেল নিয়ে অসন্তোষ দূর করুন

পে-স্কেল বা বেতন কাঠামো নিয়ে আলোচনা পর্যালোচনা কম হয়নি। একটি কমিশনের মাধ্যমে নবম পে-স্কেল ঘোষণা করা হলেও কোনো কোনো অংশে এ নিয়ে অসন্তোষ রয়েই যাচ্ছে। ফলে জটিলতা বাড়ছে। ইতিমধ্যে পে-স্কেলের  গেজেটও প্রকাশ হয়েছে। কিন্তু এরপরও সমস্যার সমাধান হয়নি। বৈষম্যের অভিযোগ এনে প্রকৌশলী, চিকিৎসকসহ ২৬ ক্যাডার ও বিভিন্ন ফাংশনাল সার্ভিসের কর্মকর্তারা গত ২৩ ডিসেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেন। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া না হলে সরকারি কলেজের শিক্ষকরা ৪ ও ৫ জানুয়ারি পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি পালনের কর্মসূচি দিয়েছেন।পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও আন্দোলনে যাচ্ছেন। এ লক্ষ্যে  ২ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের প্রতিনিধি সম্মেলন ডাকা হয়েছে । এরমধ্যে দাবি মানা না হলে  বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন একযোগে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের কর্মসূচি ঘোষণার হুমকিও দিয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা রোববার থেকে টানা ছয় দিনের কর্মবিরতি পালন শুরু করেছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও একই দিন থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেছেন।  বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তারাও কালোব্যাজ ধারন কর্মসূচি পালন করছেন।  এ অবস্থায় বর্তমান পে-স্কেল যে সুবিধাভোগী একটি বিরাট অংশের অসন্তোষ দূর করতে পারেনি সেটি পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে। এ সংক্রান্ত জটিলতা দূর করে দ্রুত এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়াই হবে সমীচীন।নতুন বেতন কাঠামোতে প্রশাসন ও অন্যান্য ক্যাডারের মধ্যে যে বৈষম্য দেখা দিয়েছে তা নিরসন করতে না পারলে বেতন বাড়িয়েও কোনো ফল পাওয়া যাবে না। বিশেষ করে সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে সমতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পেশাভিত্তিক প্রশাসন গড়ে তোলার যে দাবি জানাচ্ছেন কর্মকর্তারা সেটিও অত্যন্ত যৌক্তিক। এছাড়া বেতন স্কেলে সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল পুনর্বহাল, সরকারি চাকরিতে যোগদানের ক্ষেত্রে ক্যাডার ও নন-ক্যাডার বৈষম্যের সিদ্ধান্ত বাতিল, বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি স্থগিতের সিদ্ধান্ত বাতিল, ইউএনওকে কর্তৃত্ব দেওয়ার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিদ্ধান্ত বাতিল, আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসনসহ অন্যান্য যে সকল দাবি রয়েছে সরকারি কর্মকমর্তাদের সেগুলোর ব্যাপারেও আলোচনা করে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হবে। নবম পে-স্কেল বাস্তবায়নের ফলে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে ব্যয় হবে মোটা অংকের অর্থ। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা বেতন ভাতা পাবেন অথচ এক্ষেত্রে কেউ বেশি সুবিধা আবার কেউ কম সুবিধা পাবেন এটা হতে পারে না। আমলাতন্ত্রের দৌরাত্ম্যের কথা এক্ষেত্রে সর্বত্র আলোচিত হচ্ছে। এই বিষয়টিও সরকারকে মাথায় রাখতে হবে। শুধু আমলা দিয়ে সবকিছু চলবে না। বেতন বাড়ানোর মূল লক্ষ্যই হচ্ছে প্রশাসনে গতি আনা। কাউকে বেশি দিয়ে, কাউকে বঞ্চিত করে সেটি হবে না। নিয়মতান্ত্রিক উপায়েই সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন ভাতাদি বাড়বে। ঢাকডোল পিটিয়ে বেতন বাড়ালে বাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। মওকা বুঝে সবকিছুর দাম বাড়িয়ে দেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যেই বাজারে পে-স্কেলের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। বলা যায় এটা শুরু হয়েছে পে-কমিশন গঠন করার পর থেকেই। এছাড়া নতুন পে-স্কেল ঘোষণার পর বেসরকারি খাতেও চরম বেতন বৈষম্য দেখা দিয়েছে। এক্ষেত্রেও একটি সমতা আনা অত্যন্ত জরুরি। এ বিষয়টিও সংশ্লিষ্টদের দেখতে হবে। এইচআর/এমএস

Advertisement