দেশজুড়ে

গ্রেফতার এড়াতে শফিকুলের ‘হিজড়া’ বেশ, নাম রাখেন পরীমনি

পরনে সালোয়ার কামিজ। চুল কাঁধ বেয়ে নেমে গেছে পিঠ পর্যন্ত। কখনো ঠোঁটে লিপস্টিক, কপালে টিপ, কড়া মেকআপ দিয়ে বের হতেন। অঙ্গভঙ্গি, আচরণ ও বেশভূষায় পুরো তৃতীয় লিঙ্গের মতো। এমনকি মেয়েলি কণ্ঠে কথা বলেন। নিজের নামও বদলে ফেলেছিলেন। কেউ নাম জানতে চাইলে সিনেমার নায়িকাদের নাম বলে পরিচয় দিতেন। তবে পরীমনি নামটি তার বেশি পছন্দের। বেশিরভাগ সময় তিনি ওই নামেই পরিচয় দিতেন।

Advertisement

গ্রেফতার এড়াতে দীর্ঘ সাত বছর তৃতীয় লিঙ্গের সম্প্রদায়ের মতো এমনই বেশ ধারণ করেছিলেন মাদক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম নামের ওই যুবক। তার বাড়ি বরিশালের গৌরনদী উপজেলার টিকাসার গ্রামে। তবে শেষ পর্যন্ত কৌশল অবলম্বন করে তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পুলিশ।

শফিকুল ইসলামকে বুধবার (১৭ নভেম্বর) দুপুরে গৌরনদী পৌর শহরের দিয়াশুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি টিকাসার গ্রামের এসকেন্দার সরদারের ছেলে।

পুলিশ সূত্র জানায়, ২০১৪ সালে বরিশাল নগরীতে মাদকসহ গ্রেফতার হন শফিকুল ইসলাম। গ্রেফতারের কয়েক মাস পর তিনি জামিনে ছাড়া পান। এরপর আত্মগোপন করেন শফিকুল। ২০১৮ সালে তার অনুপস্থিতিতে বরিশালের একটি আদালত তাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড ও দুই হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও দুই মাস কারাদণ্ডের রায় দেন। তাকে গ্রেফতারে পরোয়ানা জারি হয়। তবে গৌরনদী থানার পুলিশ শফিকুলকে গ্রেফতার করতে একাধিকবার তার বাড়িতে অভিযান চালিয়েও ব্যর্থ হয়।

Advertisement

স্বজনরা জানান, শফিকুল জামিন নিয়ে বাড়িতে এসে আত্মগোপনে চলে যান। এরপর সাত বছরে তিনি একবারও বাড়িতে যাননি। তাদের সঙ্গে যোগাযোগও ছিল না শফিকুলের।

পুলিশ তাকে গ্রেফতারে চেষ্টা অব্যাহত রাখে। তার বাড়ির আশপাশে পুলিশের সোর্সকে নজরদারি করতে বলা হয়। বুধবার সকালে খবর আসে ওই বাড়িতে মঙ্গলবার রাতে তৃতীয় লিঙ্গের একজন বেড়াতে এসেছেন। বিষয়টি শুনে পুলিশের সন্দেহ হয়। তার এক নিকটাত্মীয়কে থানায় ডেকে বেড়াতে আসা তৃতীয় লিঙ্গ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। তবে ওই স্বজন বেশভূষার কারণে শফিকুলকে চিনতে পারেননি।

ওই স্বজনকে বলা হয় তৃতীয় লিঙ্গকে বেড়ানোর কথা বলে থানা সংলগ্ন দিয়াশুর এলাকায় নিয়ে আসতে। সেখানে এলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়। পুলিশ তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরে জেরার মুখে শফিকুল স্বীকার করেন গ্রেফতার এড়াতে তিনি এতোদিন তৃতীয় লিঙ্গ সম্প্রদায়ের বেশ ধারণ করে ছিলেন।

গৌরনদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আফজাল হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করে জাগো নিউজকে জানান, শফিকুলের পরিচয় নিশ্চিত হতে তার আপন ভাইকে থানায় ডেকে আনা হয়। তিনিই পরিচয় শনাক্ত করেন। পরে বিকেলে আদালতের মাধ্যমে তার প্রাপ্ত সাজা ভোগের জন্য কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

Advertisement

সাইফ আমীন/এসআর/এএসএম