জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে বাড়তি চাপে পড়েছেন সাধারণ মানুষজন। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ নানাবিধ চাপে এমনিতেই জনজীবনে নাভিশ্বাস। তার ওপর পরিবহন খরচ বৃদ্ধি যেন ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা।’ ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য প্রতি লিটারে ভোক্তা পর্যায়ে ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকায় নির্ধারণ করা হয়েছে। নিশ্চিতভাবেই এর প্রভাব পড়েছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে। যোগাযোগ খাতে ডিজেলের চাহিদা ৬৪ শতাংশের মতো। সরকারি ঘোষণায় ২৩ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে গণপরিবহনে ২৭ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে। কিন্তু পরিবহনে ভাড়া আদায় হচ্ছে বেশি। ভাড়ার তালিকা টানানোর কথা থাকলেও সেটি মানা হচ্ছে না। সিটিংয়ের নামে চিটিং তো আছেই।
Advertisement
তাছাড়া কমপ্রেসড ন্যাচারাল গ্যাসের (সিএনজি) দাম না বাড়লেও এর সব ধরনের বাসে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির দাবি, তেলের দামের কারণে ভাড়া বৃদ্ধির ফলে বছরে ৭৩ হাজার কোটি টাকা জনগণের পকেট থেকে বেরিয়ে যাবে। মিরপুর-গুলিস্তানে ভাড়া যেখানে আগে ছিল ২৫ টাকা, সেটি এখন ৩৫ টাকা নেয়া হচ্ছে। মিরপুর থেকে বাড্ডা লিংক রোডের ভাড়াও ১০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। প্রতিটি রুটেই অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে ভাড়া। রাজধানীতে সিটিং সার্ভিস বন্ধ করা হলেও পরিবহন সংশ্লিষ্টরা তা মানছেন না। বিআরটিএর অভিযানকে চ্যালেঞ্জ করে বাস বন্ধ রাখা হচ্ছে। দুর্ভোগ বেড়েছে যাত্রীদের। প্রশ্ন হচ্ছে, এই পরিবহন সন্ত্রাস চলবেই?
এমনিতেই রাজধানীবাসীর কাছে দিন দিন অসহনীয় দুর্ভোগের কারণ হয়ে উঠছে গণপরিবহন ব্যবস্থার অপ্রতুলতা। করোনা মহামারির সময় ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করে। মহামারির কারণে পরিবহন চলাচলে শর্ত থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। বাসচালক, হেলপার কন্ডাক্টর মাস্ক পরছেন না। গাড়িতে নেই হ্যান্ড সেনিটাইজার, মাস্কসহ ভাইরাস প্রতিরোধী সরঞ্জাম। শুধু তাই নয়, সিটিং তো দূরের কথা দাঁড়িয়েও যাত্রী বহন করা হচ্ছে। এতে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে চলতে হচ্ছে যাত্রীদের। অবাক করা বিষয় হচ্ছে যাত্রীরাও স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে চরম উদাসীন। বিশেষ করে মাস্ক পরতে তাদের বড়ই অনীহা। কেউ পরলেও তা থুতনিতে ঝুলে থাকে। প্রথম প্রথম এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি থাকলেও বর্তমানে গাছাড়া ভাব। সংক্রমণ কমে এলেও এখনও মহামারি থেকে মুক্ত নয় দেশ। প্রতিদিনই প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে করোনার সংক্রমণে।
দুই.গণপরিবহন নিয়ে এমনিতেই ভোগান্তির শেষ নেই। ভোগান্তির তালিকা দিন দিন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। পরিস্থিতি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, এখানকার পরিবহন ব্যবস্থা, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, রাস্তার সার্বিক পরিস্থিতি ক্রমেই নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছে। যাচ্ছেতাইভাবে সবকিছু চলাটাই যেন অনেকটা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। নাগরিক মানুষ সবচেয়ে অসহায় বোধ করে পরিবহনের জন্য অপেক্ষার সময়। সত্যি বলতে কি গণপরিবহনের অব্যবস্থাপনা দুঃসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে অনেক আগেই। কোথাও যাওয়ার জন্য নাগরিকদের রাস্তায় নেমেই এক বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়।
Advertisement
গন্তব্যে যাওয়ার জন্য তাড়া আছে কিন্তু যানবাহনের তীব্র সংকট। অফিসে যাওয়া, বিয়ে-দাওয়াত, পার্টিতে যাওয়া, এমনকি রোগী নিয়ে হাসপাতালে যাওয়া- প্রয়োজনীয় কোনো গন্তব্যেই যে সময় মতো পৌঁছানো যাবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। বাসে উঠতে গেলে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। এ অবস্থায় মানুষজনের ভোগান্তির কোনো সীমা-পরিসীমা নেই। যানজটের কারণে তো রাজধানী স্থবির হয়ে থাকে অধিকাংশ সময়। অথচ একটি দেশের রাজধানীর কর্মচঞ্চলতা যদি এভাবে রাস্তায়ই নষ্ট হয় তাহলে সেই দেশের ভূতভবিষ্যৎ যে কি তা কি আর লেখার অপেক্ষা রাখে না।
তিন.যানজটের ফলে নষ্ট হচ্ছে কর্মঘণ্টা বাড়ছে রোগব্যাধি। এছাড়া যানজট একটি স্থায়ী সমস্যা হিসেবে দেখা দেয়ায় পরিবহন খাতে বড় ধরনের পরিকল্পনা নিয়ে এগোনো ছাড়া কোনো উপায় নেই। যানজট সমস্যার সমাধান না হওয়ায় প্রতিদিনই অনেক কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। পিছিয়ে যাচ্ছে উন্নয়ন। বাধাগ্রস্ত হচ্ছে অগ্রগতি। শুধু তাই নয়, শব্দ ও বায়ুদূষণে নানা সংক্রামক ব্যাধিতেও আক্রান্ত হচ্ছে রাজধানীর বিপুলসংখ্যক মানুষ। যানজটে নগরবাসীর প্রাত্যহিক জীবনযাত্রাও মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণও বাড়ছে দিন দিন। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা যায়, যানজটের কারণে বছরে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি।
সাম্প্রতিক এক গবেষণা রিপোর্ট থেকে জানা যায়, রাজধানী ঢাকায় যানজটের কারণে দিনে ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়। গত ১০ বছরে যানচলাচলের গড় গতি প্রতি ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার থেকে ৭ কিলোমিটার পর্যন্ত নেমে এসেছে, যা হেঁটে চলার গড় গতি (৫ কি.মি.) থেকে একটু বেশি। বাংলাদেশের শহুরে জনসংখ্যার ৩৬ শতাংশ বৃহত্তর ঢাকায় বাস করে। ঢাকা এখন হয়ে উঠেছে বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোর অন্যতম। উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে হলে বাংলাদেশকে অবশ্যই ঢাকার শহরায়ণ সম্প্রসারণে যথাযথ ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করতে হবে।
সম্প্রতি রাজধানীর একটি হোটেলে ২০৩৫ সালে ঢাকার উন্নয়ন শীর্ষক এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত ‘টোয়ার্ডস গ্রেট ঢাকা: এ নিউ আরবান ডেভেলপমেন্ট প্যারাডাইম ইস্টওয়ার্ড’ শীর্ষক খসড়া প্রতিবেদনে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। যানজটের কারণে বিপুল পরিমাণ জ্বালানিরও অপচয় হয়। কিন্তু এ থেকে পরিত্রাণের যেন কোনো উপায় নেই। বিভিন্ন সময় নানামুখী কর্মসূচি-পরিকল্পনা হাতে নেয়া হলেও বাস্তবায়ন হয়েছে খুবই কম। ফলে সমস্যা যে তিমিরে ছিল সেখানেই রয়ে গেছে। অথচ দুর্বিষহ যানজটের জন্য পরিকল্পনা ও সমন্বয়হীনতার অভাবকেই দায়ী করা হয়।
Advertisement
চার.রাজধানীতে দিন দিন জনসংখ্যা বেড়েই চলছে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গাড়ি-ঘোড়া। কিন্তু সে তুলনায় রাস্তাঘাট বাড়ছে না। রাজধানীতে রাস্তার তুলনায় প্রায় ৩ লাখ যানবাহন বেশি চলছে। এছাড়া প্রতিদিন গড়ে ২৩০টি নতুন গাড়ি রাস্তায় নামছে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী যে কোনো শহরে মোট আয়তনের শতকরা ২৫ ভাগ যান চলাচলের জন্য রাস্তা থাকা আবশ্যক। ঢাকা শহরের মোট আয়তন ৮১৫ দশমিক ৮৫ কিলোমিটার। এ হিসাবে ২০৪ কিলোমিটার রাস্তার প্রয়োজন হলেও ঢাকা শহরে প্রধান রাস্তার পরিমাণ মাত্র ৮৮ কিলোমিটার। এই পরিমাণ রাস্তায় ৫ লাখ যানবাহন চলাচল করছে। অথচ অন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী এই পরিমাণ রাস্তায় ২ লাখ ১৬ হাজার যানবাহন চলাচল করার কথা।
ফলে যানজট এক অনিবার্য বাস্তবতা হিসেবে দেখা দিয়েছে। এছাড়া ট্রাফিক ব্যবস্থা ঠিকমতো কাজ না করায় যানজট থেকে মুক্তি পাচ্ছে না রাজধানীবাসী। যানজট নিয়ন্ত্রণে কঠোর ট্রাফিক আইনের প্রয়োগ, প্রাইভেট গাড়ির ওপর নিয়ন্ত্রণ, যত্রতত্র পার্কিং নিষিদ্ধ করা, রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, নদীপথ এবং ঢাকার ভেতরের খাল দখলমুক্ত করে নৌপথের উন্নয়ন করা, রিকশামুক্ত সড়কসহ নানা পরিকল্পনার কথা বলা হয়। কিন্তু এগুলো নিয়ে কথাবার্তা যতটা হয় কাজ ততটা হয় না যে তা যানজটের বর্তমান হালই বলে দিচ্ছে। কিন্তু যানজট এখন এমন এক অবস্থায় পৌঁছেছে যে, এ থেকে পরিত্রাণের উপায় খুঁজে বের করতে হবে।
যানজট বর্তমান নগরবাসীকে স্থবির ও অচল করে রেখেছে। এ অবস্থা দীর্ঘায়িত হলে এর সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক ফলাফল হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। এজন্য পরিবহন খাতে একটি স্বস্তিদায়ক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। এ জন্য অবকাঠামো, সুশাসন অযান্ত্রিক পরিবহন, পরিবহনের পরিদর্শন ও ব্যবস্থাপনা, ড্রাইভিং লাইসেন্সের ক্ষেত্রে গুণগত পরিবর্তন ও স্বাস্থ্যগত বিষয়গুলো নিয়ে ভাবতে হবে। পরিবহন সেক্টরে নৈরাজ্য বন্ধ এবং একটি সুষ্ঠু প্রতিযোগিতামূলক ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত পরিবহন বিআরটিসিকে সত্যিকার অর্থে সচল করতে হবে।
সত্যি বলতে কি ঢাকার গণপরিবহন ব্যবস্থায় এক অরাজক অবস্থা বিরাজ করছে। জীর্ণশীর্ণ বাসগুলো সিটিংয়ের নামে ‘চিটি’ করছে যাত্রীদের সাথে। ব্যস্ত সময়ে লোকাল বাসগুলোও হয়ে যাচ্ছে সিটিং বাস। এতে একদিকে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে অন্যদিকে লোকাল বাসে সিটিংয়ের নামে স্বল্প যাত্রী বহন করায় শত শত যাত্রীর অপেক্ষাকে আরও দীর্ঘতর করছে তারা। মানহীন ভাঙাচোরা রঙচটাবাস, যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়সহ নানা অনিয়মের বেড়াজালে যাত্রীদের বন্দি করছে। সেবা নয়, মুনাফাই এদের আসল উদ্দেশ্য। এ অবস্থায় একটি গতিশীল পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই। এ জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত বিআরটিসিকে সচল করতে হবে।
পাঁচ.দেশে যদি সত্যিকার অর্থে গণপরিবহন বলে কিছু থাকত তাহলে বেসরকারি বাসমালিকরা যে নৈরাজ্যকর অবস্থা তৈরি করতে পারত না সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। সবচেয়ে দুঃখজনক হচ্ছে, গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে উঠতেও এই চক্র প্রবল বিরোধিতা করে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সংস্থার (বিআরটিসি) বাস চলাচলেও চরম অসহযোগিতা করে পরিবহন খাতে একচেটিয়া প্রাধান্য বজায় রাখছে বেসরকারি পরিবহন ব্যবসায়ীরা। ফলে যাত্রী ভোগান্তির কোনো সীমা পরিসীমা নেই। অন্যদিকে বিআরটিসি নিজেও যেন ধুঁকে ধুঁকে মরছে। রাষ্ট্রায়ত্ত এই প্রতিষ্ঠানটি চরম অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির কারণে ক্রমাগত লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। বিআরটিসি বিকল্প পরিবহন ব্যবস্থা হিসেবে দাঁড়াতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে জনসাধারণের ভোগান্তি বেড়েছে।
একটি সুষ্ঠু প্রতিযোগিতামূলক ব্যবস্থা গড়ে না ওঠায় বেসরকারি পরিবহন মালিকরা ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করছে। পরিবহন খাতকে নানাভাবে জিম্মি করে রাখছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য বিআরটিসিকে সচল করার কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু কাজটি যে অতটা সহজ নয় তা তো এর আগের ঘটনাপ্রবাহ থেকেই পরিষ্কার। বিআরটিসিকে কোণঠাসা করতে বেসরকারি পরিবহন মালিকরা এককাট্টা। অথচ ১৯৬১ সালের অধ্যাদেশ বলে রাষ্ট্রীয় পরিবহন প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিআরটিসির বাস দেশের সে কোনো স্থানে চলাচলের অধিকার রাখে। সরকার দেশে স্বল্পমূল্যে দ্রুত, দক্ষ, আরামপ্রদ, আধুনিক ও নিরাপদ সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়ে আশির দশকে বিআরটিসি বাস সেবা চালু করে। কিন্তু এরপর থেকেই প্রতিষ্ঠানটির পেছনে নানা কুচক্রী মহলের দৃষ্টি পড়ে। ২০০৪ সালে তৎকালীন জোট সরকারের যোগাযোগমন্ত্রী বেসরকারি পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে একটি চুক্তি করেন। পরবর্তীতে এই চুক্তির দোহাই দিয়ে পরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন রুট থেকে বিআরটিসির বাস উঠিয়ে দেয়া হয়।
ছয়.রাজধানীতেও বিআরটিসির পরিবহনসেবা ক্রমে ক্রমে সীমিত হয়ে আসছে। যদিও প্রতিটি সরকার এসেই নতুন করে বিআরটিসিকে ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করে। বর্তমান সরকারও বেশ কয়েক দফা বিআরটিসির নতুন বাস রোডে নামায়। কিন্তু কিছুদিন না যেতেই অজানা কারণে বাসগুলো অকার্যকর হয়ে পড়ে। বাসে সামান্য ত্রুটি দেখা দিলেই তা মেরামত না করে বন্ধ করে দেয়া হয়। বাস মেরামতের চেয়ে নতুন বাস কেনার দিকেই আগ্রহ বেশি বিআরটিসি কর্তৃপক্ষের। এতে টুপাইস কামানো যায়। তাছাড়া গণহারে লিজ দেয়ার ফলেও বিআরটিসিতে চলছে যাচ্ছে তাই কারবার।
আসলে মুক্তবাজারের নামে বেসরকারি পরিবহন মালিক শ্রমিকরা এখন পরিবহন খাতকে জিম্মি করে ফেলেছে। রাজধানীতে প্রায় ২২ হাজার ছোট-বড় বাস চলে। এ সবের মালিক মাত্র দুই হাজার জন। দেখা যাচ্ছে অল্প কিছু মানুষ রাজধানীর সামগ্রিক পরিবহন ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করছে। এ অবস্থা থেকে উদ্ধার পেতে হলে বিআরটিসিকে সচল করার কোনো বিকল্প নেই। সারাদেশে বিআরটিসির বাস চলতে দিতে হবে প্রয়োজনীয় সংখ্যায়। বিশেষ করে রাজধানীতে বাসের সংখ্যা বাড়ানো একান্ত অপরিহার্য। জনস্বার্থে বিআরটিসিকে সচল করা এবং একটি সুষ্ঠু প্রতিযোগিতামূলক প্যারালাল গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলাই এখন সময়ের দাবি। সরকারকে মনে রাখতে হবে মুষ্টিমেয় লোকের দুর্নীতি, লোভ ও লাভের কারণে গণপরিবহনের নৈরাজ্য আমাদের নিয়তি হতে পারে না।
সাত.ঢাকার রাস্তায় একই সঙ্গে চলছে বাস, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, সিএনজিচালিত অটো, রিকশা ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের যানবাহন। ফলে এক জগাখিচুড়ি অবস্থার কারণে যানজট এখানে নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ জন্য একটি সুসমন্বিত পরিকল্পনা নিয়ে এগোনো প্রয়োজন। সড়কপথের উন্নয়নের পাশাপাশি ঢাকার চারপাশের নৌপথগুলো চালু করা দরকার। নৌপথে যাতায়াত অপেক্ষাকৃত সস্তা এবং স্বস্তিদায়কও বটে। এ জন্য বুড়িগঙ্গা, তুরাগসহ অন্য নদীগুলোর দখল দূষণ বন্ধ করতে হবে।
ঢাকার খালগুলো পুনরুদ্ধার করে সেগুলোতেও নৌরুট চালু করা যায়। এছাড়া মেট্রোরেল চালু করেও রাজধানীর গণপরিবহনের চাহিদা অনেকটাই মেটানো সম্ভব। গণপরিবহনের অব্যবস্থাপনা এবং যানজট দূর করে স্থবির ঢাকাকে বদলে না দিতে পারলে দেশের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন সম্ভব নয়। ভিশন-২০২১ এর কথা বলা হচ্ছে খুব জোরেশোরে। কিন্তু একটি দেশের প্রাণকেন্দ্র রাজধানীকে অচলাবস্থায় রেখে তা আদৌ সম্ভব। এ কারণে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এবং তা অত্যন্ত জরুরি ভিত্তিতে। করোনা মহামারির সময় গণপরিবহন যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে সেদিকেও বিশেষ নজর দিতে হবে।
লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট।harun_press@yahoo.com
এইচআর/এমএস