রাজনীতি

‘এখানে আ’লীগ-বিএনপি-জাপা এক পরিবার’

ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলা নিয়ে গঠিত জাতীয় সংসদের ১৫৬ নম্বর আসন (ময়মনসিংহ-১১)। শিল্পকারখানা, খামার আর বাগানে সমৃদ্ধ এ এলাকা ব্যবসায়িক অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। স্থানীয়দের পাশাপাশি বাইরের বিনিয়োগকারীদেরও পছন্দের জায়গা ভালুকা। এখানকার নেতৃত্ব কেমন বা আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কেমন নেতা চান স্থানীয়রা— এসব বিষয় জানতে আসনটির বিভিন্ন এলাকা ঘুরেছে জাগো নিউজ।

Advertisement

ভালুকা উপজেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার ভেতরে হবিরপুর ইউনিয়নের পাড়াগাঁও বড়চালা গ্রামের আজিজুল মেম্বার বাড়ির সামনে চা দোকানে কথা হয় কাঠ ব্যবসায়ী রিয়াজ উদ্দিন ও খেঁজুর বাগানের ব্যবসায়ী মোতালেব হোসেন ইবার সঙ্গে। তাদের চাওয়া, শান্তিপূর্ণ ভালুকা।

কাঠ ব্যবসায়ী রিয়াজ উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, এমপি (সংসদ সদস্য কাজিম উদ্দিন আহমেদ ধনু) সাহেব মাঝে মধ্যে এলাকায় আসেন। রাস্তাঘাটসহ নানা উন্নয়ন কাজ করেছেন। সিডস্টোর বাজার থেকে টাঙ্গাইল পর্যন্ত শহীদ শমসের রোডের কাজ চলছে, এটাও তার অবদান।

বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, ১০ টাকায় চালসহ সরকারি নানা সেবা এলাকার মানুষ পায় কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে ভালুকার এ নাগরিক বলেন, সরকারের সেবা মুখচেনা লোকেরা পায়। তবে, এ এলাকা আওয়ামী লীগ অধ্যুষিত। আওয়ামী লীগের লোক বেশি, ভোটও বেশি।

Advertisement

ব্যবসায়ী মোতালেব হোসেন ইবা বলেন, ‘নেতারা নির্বাচনের সময় আসেন, পরে তো আর আসা লাগে না। না এলে সেবা পাবো কেমনে? তবে আমাদের এ সংসদ সদস্য (কাজিম উদ্দিন আহমেদ ধনু) অপেক্ষাকৃত সহনশীল। উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন, তিনিও উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করেন না। এছাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যানও (তোফায়েল আহমেদ বাচ্চু) ভালো লোক। মানুষে মানুষে হানাহানি হোক তিনি চান না।’

কেমন নেতা চান? এমন প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, ‘এমন নেতা চাই যে এলাকার রাস্তাঘাটসহ যাবতীয় উন্নয়ন করবে। পাশাপাশি মানুষ যেনো দুর্ভোগে না পড়ে খেয়াল রাখবে। মানুষে মানুষে দ্বন্দ্ব যেন না হয়। রাজনীতির কারণে যেন কেউ হয়রানি না হয়। মন চাইছে ভোট দিছি, এমপি হইছে। আবার মন চায়নি, ভোটে দেবো না, এমপি হতে পারেনি। তাই বলে কেউ যেন কারও ক্ষতি না করে। আমরা সাধারণ মানুষ চাই শান্তি।’

আজিজুল মেম্বার বাড়ির সামনের দোকান থেকে আরও এক কিলোমিটার ভেতরে গতিয়ার বাজারে চা দোকানে কথা হয় অটোমেকানিক আব্দুস সালাম পাঠান, কৃষি উদ্যোক্তা জলিল মিয়া ও সিএনজিচালক ওয়াসিমের সঙ্গে। তারা বলেন, আমাদের এখানে আওয়ামী লীগ-বিএনপি-জামায়াত-জাতীয় পার্টি সব এক। এক পরিবারের সবাই। কেউ কাউকে ডিস্টার্ব করে না। তবে নির্বাচনী হাওয়া নিয়ে কথা বলতেই তারা বলেন, ‘এ ধরনের নির্বাচন না করাই ভালো। ভোট দিয়ে দেয় আগের রাতে, শুধু শুধু সংঘাতে মানুষ মরে।’

ভালুকায় সহিংতায় কেউ মারা গেছে কি না প্রশ্নে অটোমেকানিক আব্দুস সালাম পাঠান বলেন, ‘না। এ এলাকা শান্তির জায়গা। সমস্যা নেই। আমাদের মধ্যে বিরোধ কম, সবাই এক পরিবার।’

Advertisement

তিনি বলেন, ’৯১ সালে এ এলাকায় জামায়াত থেকে খোরশেদ উদ্দিন পাঠান নির্বাচিত হন। তার ভাতিজা শাকিল পাঠান ভালুকা উপজেলার সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি। আমার ভাই আফাজউদ্দিন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ম-আহ্বায়ক। তার সঙ্গে এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যানের আত্মীয়তার সম্পর্ক আছে।

কৃষি উদ্যোক্তা জলিল মিয়া বলেন, এখানে (ভালুকা) সব এক পরিবার। কোনো মারামারি নেই। কেউ কারো ক্ষতি করে না। কেউ কারো সামনে দলীয় বিষয়ে বাড়াবাড়িও করে না। এখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়, তারা সামনে আছে। বিএনপির লোকজন চুপচাপ।

সিএনজিচালক ওয়াসিম বলেন, গতিয়ারা এলাকায় বিএনপির সমর্থিত লোকবেশি। হাতেগোনা কয়েকজন আওয়ামী সমর্থক। কিন্তু আমাদের মধ্যে মিল আছে। কেউ কাউকে ডিস্টার্ব করে না। বিএনপি এখন চুপচাপ। কোনো কর্মসূচি নেই। আওয়ামী লীগ অগ্রসর। তবে সময় হলে বিএনপিও বেরিয়ে আসবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্বৈরাচার হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পতনের পর গণতান্ত্রিক যাত্রায় এ এলাকায় ১৯৯১ সালে বিএনপির এমপি ছিল। এরপর ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে পরপর আওয়ামী লীগের প্রার্থী এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে প্রার্থিতায়ও আওয়ামী লীগের ধারাবাহিকতা ছিল। বিএনপি একেক সময় একেকজনকে দিয়েছে।

এর আগেও চার নির্বাচনে (১৯৭৩-১৯৮৮) আওয়ামী লীগ একবার, মুসলিম লীগ একবার, বিএনপি একবার ও জাতীয় পার্টি থেকে একবার এমপি হয়েছেন।

স্থানীয়রা মনে করেন, এখানে বর্তমানে যেই শান্তি ও শৃঙ্খলার পরিবেশ বিরাজমান, তাতে বর্তমান নেতৃত্বই মন্দের ভালো।

এসইউজে/এমএএইচ/এইচএ/এএসএম