আর মাত্র কয়েকঘণ্টা পরই অনুষ্ঠিত হবে বহুল আলোচিত পৌর নির্বাচন। এ নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে পরিচালনার মাধ্যমে হারানো ইমেজ ফিরে পেতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এজন্য অতিরিক্ত পুলিশ ও আনসার নিয়োগ চাওয়া হয়েছে। আর নির্বাচনে অনিয়মের বিরুদ্ধে যারা ব্যবস্থা নেবে না সেই সমস্ত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও রিটার্নিং কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণেরও হুমকি দিয়েছে ইসি। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ জাগো নিউজকে বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। নতুন বছরে ইসি নতুন করে ইমেজ ফিরে পেতে চায়। তাই সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন পরিচালনার স্বার্থে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে রিটানিং কর্মকর্তাদেরও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যারা অনিয়ম দেখেও ব্যবস্থা নেবে না তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেবে ইসি। জানা যায়, ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে সমালোচনায় বিদ্ধ নির্বাচন কমিশন ২০১৫ সাল শেষ করতে যাচ্ছে পৌর নির্বাচনের মাধ্যমে। ফেলে আসা বছরে নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র হিসেবে ‘স্মার্টকার্ড’ দেয়ার কথা বলে এলেও এক বছরে তা হস্তান্তর করতে পারেনি সাংবিধানিক এই সংস্থাটি।দশম জাতীয় সংসদের মত একটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন পরিচালনা, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নজিরবিহীন ব্যর্থতা, নারী প্রার্থীদের জন্য গৃহস্থালীর প্রতীক বরাদ্দ, আঠারোর কম বয়সীদের ভোটার তালিকাভুক্ত করা নিয়ে দ্বন্দ্ব, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংস্কারে মাঠ কর্মকর্তাদের কাছে মতামত চাওয়া, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) চালু করতে না পারা, ভোটের দিন সাংবাদিক নাজেহাল, ভোটে বিধি লঙ্ঘন এবং মাগুরা ও টাঙ্গাইল উপনির্বাচন নিয়ে বছরজুড়ে সমালোচনায় ছিল ইসি।বছরের শেষ পর্যায়ে এসে তড়িঘড়ি দলভিত্তিক পৌর নির্বাচনের আয়োজন করতে গিয়ে আচরণ বিধি লঙ্ঘনের ঘটনায়ও ফুটে উঠেছে ইসির অসহায়ত্ব। এ নিয়ে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও বিএনপি- সব পক্ষেরই কঠোর সমালোচনা শুনতে হয়েছে নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটিকে।জানা যায়, পৌরসভা নির্বাচনে কোনো ধরনের অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়িয়ে ইমেজ বদলাতে চায় ইসি। তাই এবার পৌর নির্বাচনে ঝুঁকিপূর্ণ বা গুরুত্বপূর্ণ ভোট কেন্দ্রে মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে চেকিংয়ের ব্যবস্থা করতেও বলা হয়েছে। এছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বহিরাগতদের এলাকা ছাড়ার নির্দেশও দেয়া হয়েছে। আর নির্বাচন কেন্দ্র সন্ত্রাসী ও অপরাধী ধরতে ২৮ ডিসেম্বর থেকে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে আইনশৃঙ্খাবাহিনী। একইসঙ্গে বৈধ অস্ত্রবহন ও প্রদর্শণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। সোমবার রাত থেকে দেশের ২২৯ টি পৌরসভার নির্বাচনী এলাকায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্য মোতায়েন করা হচ্ছে। আর উপকূলীয় ৬টি অঞ্চলে মোতায়েন করা হবে কোস্টগার্ড। যেকোনো নির্বাচনের সময় এসব রুটিনের কথা বললেও এবার তা পালনে কড়াকড়ি আরোপ করেছে ইসি। এমনকি নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়েও বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সম্প্রতি ইসির উপ-সচিব ইসরাইল হোসেন ভিডিপি ও আনসার মহাপরিচালক এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারের কাছে এ সংক্রান্ত পৃথক চিঠি পাঠিয়েছেন। আনসার ভিডিপির মহাপরিচালককে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, নির্বাচনকে সামনে রেখে মারাত্মক ব্যাঘাত সৃষ্টির আশঙ্কায় ও নিরাপত্তা জোরদারের স্বার্থে ইসি সচিবালয়ে আরও পাঁচজন আনসার নিয়োগের প্রয়োজন। এছাড়া অব্যাহত নিরাপত্তা নিশ্চিতে বর্তমানে নিয়োজিত ১০ জন আনসারের মধ্যে কোনো সদস্যকে বদলি না করার জন্যও বলা হয়েছে চিঠিতে।এদিকে ডিএমপি কমিশনারের কাছে পাঠানো চিঠিতে, ইসির নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের জন্য একজন ইন্সপেক্টরসহ অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা নিশ্চিতের জন্য ফায়ারম্যানসহ দু’টি ইউনিট মোতায়েনের জন্য ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালককে চিঠি দিয়েছে ইসি। ইউনিট দু’টি ৩০ ডিসেম্বর মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত নিয়োজিত থাকবে। প্রসঙ্গত, ৩০ ডিসেম্বর সারা দেশে ২৩৩ পৌরসভায় একযোগে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। মেয়র পদে ৯৪৫ জনসহ মোট ১২ হাজার প্রার্থী এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এতে প্রায় ৩ হাজার ৫৮২টি কেন্দ্রে ৬১ হাজার ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োজিত থাকবেন।এতে প্রায় ৭২ লাখ ভোটার তাদের ভোটাধিকার তদের ভোটধিকার প্রয়োগ করবেন।এইচএস/এসকেডি/পিআর
Advertisement