দেশজুড়ে

পাহাড়ি গ্রামগুলোতে টাকার ছড়াছড়ি

খাগড়াছড়িতে পরস্পরের উপর দোষ চাপিয়ে শেষ মূহূর্তের প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সব প্রার্থীরা। পৌর নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আওয়ামী লীগ-বিএনপি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আশাবাদ ব্যক্ত করলেও স্বতন্ত্র দুই প্রার্থী সংশয় প্রকাশ করেছেন। একে অপরকে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিনষ্ট করার অভিযোগ তুলে কয়েক দফায় পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলনও করেছেন খাগড়াছড়ি পৌরসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বি তিন প্রার্থী। হামলা-মামলার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে হলফনামায় তথ্য গোপন, আচরণবিধি লঙ্ঘন এবং ব্যক্তিগত আক্রমণ করে লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের কাছে।  এদিকে সবকিছুকে ছাপিয়ে দিয়ে শাসকদল আওয়ামী লীগের সঙ্গে পাহাড়ের আঞ্চলিক সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) নির্বাচনী সখ্যতার খবরটি জেলা জুড়ে রীতিমতো চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। তবে আওয়ামী লীগের একটি সূত্র দাবি করেছে, ইউপিডিএফর অ-গণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ডের ফলে জনগণ তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। যা ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনেই প্রমাণিত হবে। এ প্রসঙ্গে ইউপিডিএফের জেলা সংগঠক রিকো চাকমা বলেন, এটি একটি বিশেষ মহলের সুপরিকল্পিত অপপ্রচার। একদিকে প্রপাগাণ্ডা আর অন্যদিকে নেতাকর্মীদের ধরপাকড় আর মামলার হয়রানি টিকিয়ে রেখেই প্রশাসন নির্বাচনের দিকে এগুচ্ছে। হাজার কোটি টাকা দিয়েও কোনো শক্তি ইউপিডিএফের মতো আদর্শিক সংগ্রামী দলকে কিনতে পারবেনা বলেও দাবি তার। রিকো চাকমা দাবি করেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী কিরন মারমার প্রতি সাংগঠনিক, রাজনৈতিক ও নৈতিক সমর্থনের পাশাপাশি আমাদের নেতাকর্মীরা অব্যাহত গতিতে কাজ করছেন।সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে পাহাড়ি গ্রামগুলোতে টাকার ব্যাপক ছড়াছড়ি দৃশ্যমান হয়ে উঠছে। বিশেষ করে ইউপিডিএফ সমর্থিত এলাকাগুলোতে অপেক্ষাকৃত ধনী দুই প্রার্থী অনেকটা প্রকাশ্যেই টাকা বিলি করছেন বলে স্বতন্ত্র প্রার্থী কিরন মারমার সমর্থকরা অভিযোগ করেছেন।নারী নেত্রী অ্যাড. সমারী চাকমা বলেন, ঐতিহ্য গতভাবে পাহাড়িরা শোষিত-বঞ্চিত। কিন্তু নির্বাচন আসলেই বড় দলগুলো পাহাড়িদের জন্য মায়াকান্না শুরু করে এবং অর্থ-বিত্ত দিয়ে ভোটারদের প্রভাবিত করা চেষ্টা করেন। পাহাড়ি অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে প্রকাশ্যে টাকা ছড়ানোর খেলা চললেও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেনা।আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থীরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আশাবাদ ব্যক্ত করলেও দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র রফিকুল আলম এবং ইউপিডিএফ সমর্থিত প্রার্থী কিরন মারমা দাবি করেছেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে তারা জয় কেউ ঠেকাতে পারবে না।জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক রণ বিক্রম ত্রিপুরা রিটার্নিং অফিসারের কাছে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. রফিকুল আলমের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। যেখানে রফিকুল আলমের বিরুদ্ধে হলফনামায় তথ্য গোপন, ত্রাস সৃষ্টি, বহিরাগতদের আশ্রয় এবং জেলা পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতাকে হুমকির অভিযোগ তুলে ধরা হয়েছে। অভিযোগের জবাবে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. রফিকুল আলম বলেন, গত পাঁচ বছরে পৌর এলাকায় শত কোটি টাকার উন্নয়ন করেছি। পুরো পৌর শহরের অবকাঠামো বদলে গেছে। আর এ কারণে জনগণ আমাকে পুনরায় নির্বাচিত করতে চায়। তিনি দাবি করেন, তার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে সাবেক এমপি ওয়াদুদ ভূইয়ার সঙ্গে আওয়ামী লীগের কিছু চিহ্নিত নেতা গোপন আঁতাত করে সাধারণ ভোটারদের বিভ্রান্ত করার পথ বেছে নিয়েছেন। মিথ্যা অভিযোগ, অপপ্রচার এবং ক্ষমতার অপ-ব্যবহারের মাধ্যমে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।এদিকে, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শানে আলমের প্রভাব বিস্তরের অভিযোগটি আপন চাচাত ভাই ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. রফিকুল আলমের বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. রফিকুল আলম নির্বাচনী প্রচারণা কাজে বাধাগ্রস্ত করে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন বিনষ্ট করছে।ইউপিডিএফ সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী কিরন মারমা বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হলে তার বিজয় সুনিশ্চিত। পাহাড়ি অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে ধনী প্রার্থীরা টাকা দিয়ে ভোট কেনার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। যা নির্বাচনকে প্রভাবিত করার অপচেষ্টা।রিটার্নিং অফিসার ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এটিএম কাউছার বলেন, এখন পর্যন্ত যতগুলো লিখিত অভিযোগ উঠেছে, সব গুলোই নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনে প্রেরণ করা হয়েছে। তাছাড়া আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত প্রার্থীদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে জরিমানা করা হচ্ছে।খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মজিদ আলী বলেন, নির্বাচনের আগে ও পরে পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখতে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। সাংবাদিকদের নিরাপত্তার জন্যও জেলা পুলিশের বিশেষ সহযোগিতা দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।এআরএ/পিআর

Advertisement