দেশজুড়ে

গাজীপুরে জেএমবির আস্তানা নিয়ে মানুষের মনে আতঙ্ক

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ভোগড়া বাইপাস রোড সংলগ্ন যোগিতলা এলাকায় র‌্যাবের অভিযানে দুই জেএমবি জঙ্গি নিহতের ঘটনায় জেএমবি আস্তানাকে ঘিরে এলাকার শতশত উৎসুক মানুষ ভিড় করছেন। সেই সঙ্গে এলাকাবাসির মনে বিরাজ করছে অজানা আতঙ্ক। গাজীপুরে ২০০৫ সালের ২৯ নভেম্বর ও পহেলা ডিসেম্বর দুটি বোমা হামলায় আইনজীবীসহসহ ১০ জন নিহত হন। রোববার দুই জেএমবি সদস্য র‌্যাবের গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনার পর থেকে এ এলাকার মানুষের মাঝে এক ধরণের আতঙ্ক লক্ষ্য করা গেছে।এদিকে সোমবার বিকেলে নিহত দুই জেএমবি সদস্যের মরদেহের সুরতহাল করেছেন জয়দেবপুর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল আজিজ। শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক আব্দুস সালাম জাগো নিউজকে জানান, বিকেল ৫টার দিকে দুই সদস্যের একটি মেডিকেল টিম নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মামুনের উপস্থিতিতে দুটি মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেন। তিনি আরও জানান, নিহতদের বয়স ৩০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। তাদের একজনের কপালে ও মাথায় বাম কানের উপর গুলির চিহ্ন রয়েছে। অপরজনের ডান বাম পা ভাঙা, পেটের ডান দিকে ভুরি বের হয়ে গেছে এবং ডান হাত থেতলানো। সন্ধ্যা পর্যন্ত নিহত দুই জেএমবি সদস্যের পরিচয় জানা যায়নি। থানায় কোনো মামলা দায়েরও হয়নি।এদিকে স্থানীয়রা বলছেন ব্যস্ততম গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কের পাশে ছোট্ট একটি ঘরে কিভাবে সকলের চোখ ফাঁকি দিয়ে জেএমবি আস্তানা করল তা তাদের বোধগম্য নয়। র্যাবের অভিযানের পর সোমবার সকাল থেকে যোগিতলা, ভোগড়া, চান্দনা, মোগড়খালসহ আশপাশের এলাকার বিপুল সংখ্যক নারী পুরুষ ওই ‘আস্তানাটিকে’ দেখার জন্য ভিড় করছেন। ওই ‘আস্তানা’ সংলগ্ন বায়তুল নুর জামে মসজিদের ইমাম মুফতি সোহেল হোসাইন ও মুয়াজ্জিন মো. সাহেব আলী আলী জানান, রোববার রাত ১২টার দিকে দুটি বিকট শব্দ শুনতে পান। রাস্তায় গাড়ির চাকা ফেটেছে এমনটি ভেবে তারা শুয়ে থাকেন। কিছুক্ষণের মধ্যে পরপর কয়েকটি বিকট শব্দ হলে তারা ধারণা করেন এলাকায় ডাকাতি হচ্ছে। এ কারণে তারা মসজিদের বাইরে বের হননি। পরে র‌্যাবের সদস্যরা তাদের ডেকে তোলেন। মুয়াজ্জিন মো. সাহেব আলী জানান, এ এলাকায় এবং ভোগড়া বাইপাস রোডে মাঝে মধ্যেই বাস ডাকাতি, ছিনতাই হয়ে থাকে। তাই কোনো শব্দ হলে তারা মসজিদ থেকে বের হন না। একই কথা জানালেন ওই ‘আস্তানার’ কয়েকশ গজ পূর্বে অবস্থিত জয়নালের বাড়ির গৃহকর্তী। তিনি আরও জানান, চোর-ডাকাতের ভয়ে সন্ধ্যার পর তারা ঘরের দরজা আর খোলেন না। তারা জানান, তাদের বাড়ির পাশে একটি জঙ্গি আস্তানা রয়েছে তা তারা কোনো দিন কল্পনাও করতে পারেননি। ওই আস্তানা সংলগ্ন মসজিদে প্রতিদিন পাঞ্জেগানা নামাজ হয়ে থাকে আর ‘আস্তানা’ থেকে মসজিদের দূরত্ব প্রায় একশ` গজ। এখানে কোনো মানুষজন আসা যাওয়া করতেন এমনটি তাদের চোখে পড়েনি।ভোগড়া-বাইপাস সড়কের পূর্ব পাশে যোগিতলা এলাকায় প্রায় এক বিঘা জমিতে তিন দিকে ইটের বাউন্ডারি দেয়াল রয়েছে। ওই বাউন্ডারির উত্তর পূর্ব কোণে ছোট আকারের ঘরটিকে জেএমবি সদস্যরা তাদের ‘আস্তানা’ হিসেবে ব্যবহার করতেন বলে র‌্যাব জানায়। জমিটির পৈত্রিক সূত্রে মালিক মৃত হাজী মফিজ উদ্দিন বেপারির ছেলে মো. সাইফুল ইসলাম। তিনি টঙ্গীতে বসবাস করেন বলে স্থানীয়রা জানান।র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান রাত সোয়া দুইটার দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিফিং করে সাংবাদিকদের জানান, জায়গাটি নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবির একটি আস্তানা। ঘটনাস্থল থেকে চারটি অবিস্ফোরিত হাতে তৈরি গ্রেনেড (ইমপ্রোভাইসড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস-আইইডি) উদ্ধার করে নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। এছাড়া একটি পিস্তল, ৫ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। আর জঙ্গিদের বিস্ফোরিত বোমায় একজন র‌্যাব সদস্য আহত হয়েছেন। জঙ্গিদের কাছে থাকা একটি ব্যাগ থেকে বেশ কিছু বিস্ফোরক, ডেটোনেটরসহ গ্রেনেড তৈরির উপকরণ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি বলেন, সড়কের পাশের পরিত্যক্ত ওই জায়গায় জঙ্গিরা সভা করতেন বলে র্যাবের কাছে খবর ছিল। ঘটনাস্থলে ওই দুজনই শুধু ছিল বলে তিনি জানান। র‌্যাব সদস্যরা জায়গাটি ঘেরাও করে অভিযান শুরু করায় এখান থেকে কেউ পালাতে পারেননি। নিহতরা ওই স্থানে নাশকতার পরিকল্পনা করছিলেন। তারা জেএমবির সক্রিয় সদস্য বলে র্যাব জানায়।রাতে অভিযান চালানোর সময় বিশেষ লাইটিং ইউনিট দিয়ে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা হয়। অভিযানের সময় ওই পরিত্যক্ত ভবনটি বোমা বিস্ফােরণে ক্ষতিগ্রস্থ হয়।                     মো. আমিনুল ইসলাম/এমজেড/পিআর

Advertisement