বিশ্বব্যাপী দিন দিন বাড়ছে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এ ঝুঁকির হার বেশি। আর উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। তাই এ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি এড়াতে বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ড. শুভ জিৎ দত্তের নেতৃত্বাধীন দক্ষিণ কোরিয়ার সোহাং বিশ্ববিদ্যালয় ও স্টকহোম ইউনিভার্সিটি এবং সুইডেনের একদল গবেষক একটি নতুন কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষক আবিষ্কার করেছেন। যা সস্তা, সহজ এবং খুব কার্যকরভাবে ফ্লু গ্যাস ও বায়ুমণ্ডল থেকে ডিহাইড্রেশন স্টেপ ব্যতীত কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করতে পারে।নতুন এ কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষক আবিষ্কার নিয়ে সম্প্রতি জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ড. শুভ জিৎ দত্ত। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে এটা সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষক, যা জলীয় বাষ্পের উপস্থিতিতে অত্যন্ত কার্যকরভাবে কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে। অন্য শোষকের ক্ষেত্রে কার্বন ডাই-অক্সাইড আর জলীয় বাষ্পের মধ্যে প্রতিযোগিতা হয় এবং জলীয় বাষ্প সাধারণত জিতে যায়। আমাদের শোষক উভয়ই শোষণ করে, যদিও কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ অনেক গুণ বেশি।’তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘ফ্লু গ্যাস ও বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণের জন্য এটি শিগগিরই ব্যবহার করা হবে এবং তার জন্য সঠিক দিকেই যাচ্ছি।’বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ড. শুভ জিৎ দত্তের নেতৃত্বাধীন এ আবিষ্কার ‘সাইন্স’ ম্যাগাজিনসহ ইউএস ডিপার্টমেন্ট এনার্জি, হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ৪০টিরও বেশি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে। এদিকে, সম্প্রতি ন্যাশনাল জিয়োগ্রাফিক রিপোর্টে বলা হয়েছে- জলবায়ু পরিবর্তনে উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ চরম ঝুঁকিতে আছে। এর আগে জাতিসংঘও বাংলাদেশকে জলবায়ু পরিবর্তনে ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে আখ্যা দিয়ে সতর্ক করে। এছাড়া সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাপলক্রাফটের এক প্রতিবেদনেও সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর তালিকায় রেখেছে বাংলাদেশের নাম।২০১১ সালে জাতিসংঘের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থার বার্ষিক মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়, পৃথিবীর ১৩০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের ঝুঁকি এখন সবচেয়ে বেশি। বৈশ্বিক এই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বাংলাদেশই একমাত্র দেশ, যেখানে মোট জনসংখ্যার ১০ ভাগ মানুষ প্রায় প্রতিবছর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়।পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রতিদিন বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাসের পরিমাণ বেড়ে চলেছে। ১৯৮৫ সালে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাসের পরিমাণ ছিল ৩৫০ পিপিএম (পার্টস পার মিলিয়ন)। ২০১৫ সালে এটি বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৪০০ পিপিএম-এ।তাদের মতে, ২০৪৫ সালে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে ৫০০পিপিএম-এ পৌঁছাবে। বায়ুমণ্ডলে এ ক্ষতিকর গ্যাস যে গতিতে বাড়ছে, তা খুবই উদ্বেগের।এছাড়া মানুষের জীবাশ্ম জ্বালানির ঢালাও ব্যবহার ও অনিয়ন্ত্রিত কার্যকলাপে সৃষ্ট কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাসের পরিমাণ বায়ুমণ্ডলে ক্রমেই বেড়ে চলেছে। গবেষকরা বলছেন, কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রিন হাউস গ্যাস বা গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের প্রধান কারণ। গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের কারণে যে সকল বিরূপ প্রভাব পড়বে তার মধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতে বন্যা অথবা কম বৃষ্টিপাতে খরা ও তাপ প্রবাহ, মরুভূমির সম্প্রসারণ, ইকোসিস্টেমের মধ্যে বড় বিশৃঙ্খলা উল্লেখযোগ্য।বিজ্ঞানীরা বলছেন, কার্বন ডাই-অক্সাইড সমুদ্রের পানির অ্যাসিডিফিকেশন বৃদ্ধি করে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের ৫০-৮৫ শতাংশ অক্সিজেন আসে টিনি অসেন প্লান্টস (tiny ocean plants) থেকে, যা ফাইটোপ্লাংটন (phytoplankton) নামে পরিচিত। সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা আর অ্যাসিডিফিকেশন বৃদ্ধির ফলে ফাইটোপ্লাংটন (phytoplankton) থেকে অক্সিজেন উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। ফলে বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের পরিমাণ হ্রাস পাবে।এক জরিপে বলা হয়, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ভারত, রাশিয়া ও জাপান সবচেয়ে বেশি কার্বন ডাই-অক্সাইড বায়ুমণ্ডলে নির্গমন করে থাকে। কারণ তাদের শিল্প, কল-কারখানা চালাতে প্রচুর এনার্জির প্রয়োজন হয়, যা আসে সস্তা কয়লা পোড়ানো থেকে। কয়লা পোড়ালে ফ্লু গ্যাস উৎপন্ন হয়। যার প্রধান উপাদান হলো নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, কার্বন ডাই-অক্সাইড আর জলীয় বাষ্প।জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্রমবর্ধমান এ ঝুঁকি নিরোসনে বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ড. শুভ জিৎ দত্তের নেতৃত্বাধীন এ আবিষ্কার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।এএম/আরএস/এআরএস/একে/পিআর
Advertisement